জলপাইগুড়ি : শহর ও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এবারের দুর্গাপুজোতে চোখে পড়েছে অভিনব থিম, পরিবেশ সচেতনতা এবং শিল্পকলার সমন্বয়। বিশেষভাবে নজর কাড়া রায়কতপাড়া বারোয়ারি দুর্গাপুজো কমিটির আয়োজন, যা এবার ৯৬ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপ ও প্রতিমায় স্থান পেয়েছে “সবুজায়ন” ও পরিবেশ রক্ষার বার্তা।

রায়কতপাড়া বারোয়ারি দুর্গাপুজো কমিটির উদ্যোগে এবারের থিমে গুরুত্ব পেয়েছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও সবুজ পরিবেশ। মণ্ডপের অন্দরসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে সুপারি, নারকেল, মানি প্ল্যান্ট, বাম্বু প্ল্যান্ট এবং ভেষজসহ একাধিক প্রজাতির চারাগাছ। মণ্ডপ তৈরিতে বাঁশ, কাঠ, ইট ও সিমেন্টের সঙ্গে স্থানীয় শিল্পকলার ছোঁয়া মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব নির্মাণ করা হয়েছে। থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে অভিনব প্রতিমা তৈরি করেছেন শিলিগুড়ির এক পরিচিত শিল্পী। মণ্ডপের সজ্জা করেছেন মোহিতনগরের ডেকোরেটর রতন রায়। আয়োজনকারীরা জানিয়েছেন, পূজার কয়েকদিন সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রমও পালন করা হবে। এবারের বাজেট প্রায় ১২ লক্ষ টাকা।

একই সময়ে নজর কেড়েছে জলপাইগুড়ির তরুণ দল ক্লাবের পুজো। কিছু বছর ধরে কম ভিড় আকর্ষণ করলেও এবার তাদের পুজো ফের শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছে। নারী শক্তি ও সামাজিক ভূমিকার প্রতি সম্মান জানিয়ে এবারের মণ্ডপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখা ভারতীয় নারীদের তুলে ধরা হয়েছে। শহরের অন্যান্য পুজোর সঙ্গে তুলনায় তরুণ দল ক্লাবের মণ্ডপ এবার সেরা হিসেবে “বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান” অর্জন করেছে।

শহরের দর্শনার্থীরা এবার মাদুরাইয়ের বিখ্যাত মীনাক্ষী মন্দিরও ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন দেশবন্ধু পাড়ার দিশারী ক্লাবের পুজোতে। এবারের দিশারী ক্লাবের পুজো ৬২ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। ফাইবারের সঙ্গে কাপড় ও প্লাই ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপটি, যার উচ্চতা প্রায় ৯০ ফুট এবং প্রস্থ ৭০ ফুট। মুর্শিদাবাদ ও মেদিনীপুর থেকে আসা দক্ষ শিল্পীরা মণ্ডপ নির্মাণে অংশ নিয়েছেন। প্রতিমা এসেছে নবদ্বীপ থেকে, যা দর্শকদের নজর কাড়ছে প্রতিটি কোণে।

মণ্ডপ ও প্রতিমার সঙ্গে মিলিয়ে পুজোর আয়োজনের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে শারদীয় সংস্কৃতি, সামাজিক বার্তা এবং পরিবেশ সচেতনতার এক অনন্য সমন্বয়। রায়কতপাড়া বারোয়ারি, তরুণ দল ক্লাব ও দিশারী ক্লাবের মতো পুজো কমিটিগুলো শহরের দুর্গাপুজোর মান ও দর্শনীয়তার স্তর আরও উঁচু করেছে।
এবারের জলপাইগুড়ি দুর্গোৎসব শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং শিল্প, সংস্কৃতি, নারী শক্তি এবং পরিবেশ সচেতনতার এক সমন্বিত উদাহরণ হিসেবে মনে থাকবে। দর্শনার্থীরা মণ্ডপ ঘুরে দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন, আর স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষা ও সম্প্রদায় সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রভাব অনুভব করছেন।