আজ আর শিল্প সমিতি পাড়ায় নেই “শিল্পের” কোন চিহ্ন

লেখক পঙ্কজ সেন

জলপাইগুড়ি শহরের শিল্প সমিতি পাড়া এবং সংলগ্ন করলা নদীর পাড় একসময় বাবলাগাছের ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। তখন এই জঙ্গলে বাঘ-বুনো শুয়োর এবং অন্যান্য হিংস্র জন্তুরা ঘুরে বেড়াতো। সেই সময়ে এই এলাকায় বেশ কিছুটা জায়গা পরিস্কার করে নিয়ে উকিল সুরেশ্বর সান্যালের ভাই যজ্ঞেশ্বর সান্যাল (স্বদেশী আন্দোলনের সময়) ১৯০৫ সালে “শিল্প সমিতি” নামে একটা কাপড়ের কল স্থাপন করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি পূর্বেই জাপান থেকে বয়ন শিল্প শিখে আসেন।

ওনার কাপড়ের কলের সমস্ত শ্রমিকই সুদূর মাদ্রাজ থেকে নিয়ে আসা। চরকা ও বয়নের বহু সামগ্রীসহ কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠা করে স্থানটি “শিল্প সমিতি পাড়া” নামে পরিচিত হয়। কিন্তু যজ্ঞেশ্বরবাবুর এই উদ্যোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিছুদিন পর কলেরায় আক্রান্ত হয়ে এই কাপড় কলের অনেক শ্রমিক মারা যায়। সান্যালবাবু পুনরায় মাদ্রাজ থেকে শ্রমিক নিয়ে আসেন। কিন্তু দুর্ভেদ্য জঙ্গলে পরিপূর্ণ করলা নদীর পারে এই স্থানটিতে অত্যাধিক মশার উপদ্রবে ও কলেরায় আক্রান্ত শ্রমিকদের মৃত্যু-মিছিল অব্যাহত থাকে।

Shilposamiti Para and Jalpaiguri

ইতিপূর্বে যজ্ঞেশ্বরবাবু হঠাৎ করে নিউমোনিয়ায় অসুস্থ হয়ে মারা গেলে বাকি শ্রমিকেরা কলেরার ভয়ে পালিয়ে যায়। ফলে উক্ত কাপড়ের কলটি বন্ধ হয়ে যায় এবং নির্মাণ সামগ্রী গুলি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক বছর বাদে ওপার বাংলার কুষ্টিয়া নিবাসী মোহিনী চক্রবর্তী নামক এক ব্যক্তি ওই কাপড়ের কল কিনে নিয়ে গিয়ে “মোহিনী মিল” নামে একটি কাপড়ের কল স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এই এলাকায় কুমুদিনী কান্ত চক্রবর্তী দেশীয় শিল্প হিসেবে একটি দেশলাই কারখানা গড়ে তুললেন, সেটিও বেশি দিন চলেনি। বীরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ এখানে অ্যালুমিনিয়ামের কারখানা করেন, সেটিও পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে যায়। সুরেশ চন্দ্র পাল ও মনোরঞ্জন দাসগুপ্ত দুটি তেলের কারখানা (ঘানি) গড়ে তুলেছিলেন। সেগুলিও পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে যায়। ঐ এলাকায় ভূত আছে বলে কোন শ্রমিক এখানে কাজ করতে আসতো না। আজ এই বিশাল শিল্প সমিতি পাড়ায় জঙ্গলের কোন রকম চিহ্ন নেই। সমস্ত এলাকা জুড়ে বড় বড় দালান ও আবাসন রয়েছে কিন্তু “শিল্পের”কোন চিহ্ন নেই। ভারতের স্বাধীনতার সময় কালে এই এলাকার দুজন বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী হলেন বীরেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং ডক্টর ধীরাজ মোহন সেন (ডক্টর অনুপম সেনের দাদা)।

(শিল্প সমিতি পাড়া নিয়ে পাঠকদের কাছে কোন তথ্য থাকলে তারা তা নির্দ্বিধায় কমেন্ট বক্সে উল্লেখ করতে পারেন।)

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : উমেশ শর্মা।
ছবি গুগলের সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *