মলয় চক্রবর্তী
ইনবক্সে ম্যাসেজ এলো টিং করে….আকাশ ফেসবুকের পাতায় গল্প লিখতে ব্যস্ত, খুব কাছের বন্ধুর কাছ থেকে এত রাতে ম্যাসেজ এসেছে সেটা ভেবেই গল্পটা লেখা ছেড়ে ইনবক্স খুললো আকাশ..
অপরিচিত এক জনের ম্যাসেজ.. বিরক্ত করতে পারি কি? আমি মিসেস মুখার্জি বলছি…
শুভ সকাল..
শুভ রাত..
কেমন আছেন?
শরীর ভালো তো?
কোথায় থাকেন?
কবিতা গল্প লেখা পাচ্ছি না কেন?
এসব ম্যাসেজ ইনবক্সে দেখতে অভ্যস্ত আকাশ..
কিন্তু এ ম্যাসেজ তো একটু অন্যরকম লাগলো অপরিচিত একজন এত রাতে…. ম্যাসেজ দেখেই আবার গল্প লেখাতে মনোযোগ দিল আকাশ… হাতে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে, কাপে গরম দার্জিলিং চা.. বাইরে রিমঝিম বৃষ্টি লেখাটাও জমে উঠেছে… হঠাৎ আবার টিং করে আবার ম্যাসেজ এল, বিরক্ত হল আকাশ.. কিন্তু মন মজে গল্প লেখাতে তাই ওখানেই মনোনিবেশ করল আকাশ…
নিকষ কালো অন্ধকারে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এল.. ছোট একটা ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল আকাশ.. হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁতে চাইল.. মলয় বাতাস বইছে চারদিকে নিস্তব্ধতা…
ফিরে এল আকাশ কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়ল গল্পটা শেষ করতে… লিখতে লিখতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে আকাশ জানে না সেটা.. বিকট শব্দে বাজের কর্কশ আওয়াজ আকাশের ঘুম ভাঙিয়ে দিল.. লাফ দিয়ে জানলা বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিল আকাশ নিঝুম রাত তারমধ্যে বিদ্যুৎ বিহীন…
ঘুম ভেঙে গেলে আবার নতুন করে ঘুম আসতে একটু সময় লাগে আকাশের… বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে মোবাইল খুলে বসল আকাশ… Unread অবস্থায় তখনও ম্যাসেজটা পড়ে রয়েছে.. ইনবক্স ওপেন করে দেখল মেখলা নামধারী এক মহিলার দুটো ম্যাসেজ… আপনাকে একটু বিরক্ত করতে পারি কি? আর দ্বিতীয় ম্যাসেজ …. একটু সময় থাকলে বলবেন কিছু কথা বলতে চাই…
আকাশ অবাক হল, অচেনা একজন মহিলার হঠাৎ এমন ম্যাসেজ কেন? নামের উপর ক্লিক করে প্রোফাইল খুলে আকাশ দেখল,পুরো নাম মেখলা ব্যানার্জি, বাড়ী গঙ্গার ওপারে কোন একটা জায়গার নাম লেখা .. অল্প কিছু ছবি আর কিছু স্বরচিত কবিতা আর কিছু পারিবারিক ছবি..

সবুজ লাইট জ্বলছে.. কৌতুকবশত আকাশ উত্তর দিল কে আপনি? উত্তর এল চিনতে পারেন নি?
আকাশ সাথে সাথেই উত্তর নাহ একদম না..
উত্তর এল না সাথে সাথে.. কিন্তু ম্যাসেন্জার দেখাচ্ছে টাইপিং……
সিগারেট ধরিয়ে আগ্রহ নিয়ে আকাশ চেয়ে আছে ইনবক্সে। আমি সেই মেয়ে, হঠাৎ করেই সম্বন্ধ.. আপনার বাবা মা এসে আমায় পছন্দ করে আমি তখন একুশে পা, বাড়িতে বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে, একদিন বিকেলে আপনি এক বন্ধুকে নিয়ে এলেন আমায় দেখতে আমি বেশি সাজতে ভালোবাসি না শাড়ি পড়ার অভ্যাসও খুব একটা ছিল না… মায়ের অনুরোধে শাড়ি জড়িয়ে এসে বসলাম, আপনি এবং আপনার বন্ধুর সামনে…
সামাজিক রীতি মেনে আপ্যায়নের পালা শেষে আপনার বন্ধু আমার মাকে বলল আপনি নাকি আলাদাভাবে কথা বলতে চান আমার সাথে… অপরিচিত পুরুষের সামনে একলা ঘরে কথা বলার অভিজ্ঞতা সেটাই প্রথম ছিল আমার…
কি কি যে কথা হল তার পুরোটা মনে নেই… তবে যেটা আপনি বলেছিলেন সেটা জীবনের সবচেয়ে বড়ো মিথ্যা বলার অভিনয় ছিল আমার …..

এতটুকু পড়ে ঘাবড়ে গেল আকাশ… ফ্ল্যাশব্যাক এ ফিরে গেল অনেক বছরের আগের সেই দিনে……..
আকাশ তখন প্রেমে উন্মত্ত, দুই বাড়িতে ঝামেলা চলছে তাদের ভালোবাসার সম্পর্ককে নিয়ে …. বাড়ির প্রবল চাপে আকাশকে যেতেই হল সাময়িক উত্তেজনাকে ধামাচাপা দিতে মেয়ে দেখতে অনিচ্ছাসত্ত্বেও..
আলাদা ঘরে মেয়ের সাথে কথা বলা ছিল একটা প্ল্যান, আকাশের মনে..
আকাশের মনে আছে…. তন্যি মেয়েটা ঘরে আসতেই আকাশ বলে বসল তার প্রেমের কথা… এবং অনুরোধ করল একটু মিথ্যে বলতে হবে মেখলাকে। এইকথা শুনেই মেয়েটা অবাক পানে চেয়ে রইল আকাশের চোখে… কি মিথ্যে বলতে হবে আমায় যেটা সত্যি নয়.. আকাশ বলল আমি বাড়ী ফিরে মাকে বলব আপনি অন্য কারো সাথে ভালোবাসায় জড়িত.. তাহলেই বিয়ের কথা আর এগোবে না…. আপনার বাড়িতে তো আমার বাড়ী থেকে সে কথা কেউ বলবে না তাহলে আপনার ও অসুবিধে থাকার কথা নয় তাই না বলুন?
চারদিকে নিস্তব্ধ… মেয়েটা কিছু ভাবলো হয়তো.. তারপরে বলে উঠলো আপনি খুশি হবেন তো?তাহলে মিথ্যে অপবাদ আমি নিলাম…. বলেই বেরিয়ে এল ঘরের থেকে…. নিয়মনীতি মেনে বিদায় নিল আকাশ মেখলার বাড়ী থেকে একটা অপরাধ বোধ মাথায় নিয়ে….
আজ এতদিন পড়ে সেই মেখলা… লজ্জিত আকাশ বলেই বসল আমি দুঃখিত ম্যাডাম সেদিন ওটা আমায় বলতেই হতো যে….

জানতে চাইল আকাশ হঠাৎ করে এত বছর পড়ে যোগাযোগ করলেন কেন বলুন তো?
ইনবক্সে উত্তর এল ফেসবুকে হঠাৎ আপনার প্রোফাইলটা সামনে এল … পুরোনো একটা ছবি দেখে ভেবেই নিলাম ওটাই আপনি আর কৌতূহলবশত ইনবক্স করেই বসলাম… এবং উত্তর পেয়ে নিশ্চিত হলাম সেই ব্যাক্তি আপনি…. আমার এক ছেলে ক্লাস টুয়েলভে পড়ে..
আপনার কি একটাই মেয়ে ?
আকাশ বললো হা একটাই মেয়ে.. ফেসবুকে আপনার লেখা পড়েছি.. ভালোই তো লেখেন আপনি.. আরও লিখুন..
আকাশের উত্তর ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, আবার কোনো এক দিনে আলাপচারিতা হয়তো হবে.. আজ তবে শুভরাত মেখলা দেবী।
উত্তরে মেখলা লিখলো মি. আকাশ শুভেচ্ছা রইলো.
অফলাইন হলো আকাশ.
হেডফোনটা কানে লাগিয়ে ঘুমের দেশে যেতে চাইলো আকাশ সেদিনের সেই মিথ্যেকে সাক্ষী রেখে….
মনে পড়ে সেই সব দিন
সেই সব ঝড়ে যাওয়া স্বপ্ন রঙিন
সেই সব ঋতু জুড়ে ফাগুনেরও দিন
মনে পড়ে…..
(যারা লেখা পাঠাতে ইচ্ছুক তারা যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে)