জলপাইগুড়ি : এক হৃদয়বিদারক ঘটনার মাঝখানে দাঁড়িয়ে, প্রাক্তন আধা সামরিক কর্মী ও বর্তমান তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ দাস তার অতীত প্রশিক্ষণ ও মানবিকতা দিয়ে দুই শিশুর জীবন রক্ষা করলেন। রায়পুর চা বাগানের পাহাড়িয়া শ্রমিক মহল্লায় বুধবার সকালের সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে কৃষ্ণ দাসের উপস্থিতিই একমাত্র আশার আলো হয়ে উঠেছিল।

ঘটনার সূত্রপাত সকালে, যখন স্থানীয় চা বাগান শ্রমিক অজয় মুন্ডা (৩০) আচমকা নিজের স্ত্রী কুসুম মুন্ডার (২৫) ওপর আক্রমণ চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে।
জলপাইগুড়ি রায়পুর চাবাগানের পাহাড়িয়া লাইনের বাসিন্দা অজয় মুন্ড তার স্ত্রী কুসুম মুন্ড দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন৷ অজয় মুন্ডা রায়পুর চা বাগানের শ্রমিকের কাজ করতেন৷ পুলিশ সুত্রের খবর পারিবারিক বিবাদের জেরেই স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে গন্ডগোলের জেরেই এই মর্মান্তিক ঘটনা।
এরপর সে নিজের দুই শিশুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কোতোয়ালি থানার পুলিশ। কোতয়ালী থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে কোন ভাবেই শিশুদুটিকে উদ্ধার করতে পারছিল না। এরপর সেই খবর পেয়ে ছুটে আসেন কৃষ্ণ দাস, যিনি একসময় সশস্ত্র সীমান্ত বল (SSB)-এর সদস্য ছিলেন।

রাজনীতির জগতে এলেও কৃষ্ণবাবুর মনন ও শরীরে রয়ে গেছে সীমান্ত রক্ষীর সতর্কতা ও প্রশিক্ষণ। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঝুঁকি নিয়েই ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেন। তারপর কোনো রকম রক্তপাত ছাড়াই খুনি বাবার হাত থেকে অস্ত্র কাড়েন ও দুই শিশুকে উদ্ধার করেন।

নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কৃষ্ণ দাস বলেন, “খবর পেয়েই ছুটে এসেছিলাম। মনে হচ্ছিল, পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে। অজয় হয়তো মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল, তাই সন্তানদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিল। আমি শুধু আমার কর্তব্য পালন করেছি। ঈশ্বরের কৃপায় সব কিছু সফলভাবে সম্ভব হয়েছে।”
ঘটনার পর অজয় মুন্ডাকে আটক করেছে পুলিশ। পাশাপাশি মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়েছে পুলিশ৷ এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে রায়পুর চা বাগান এলাকায়৷ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কোতয়ালী থানার পুলিশ৷ শিশুদু’টি বর্তমানে নিরাপদে রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, সাহসিকতা শুধু শারীরিক শক্তি নয়, বরং সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত আর মানবিকতাই হয়ে উঠতে পারে জীবনের রক্ষাকবচ। কৃষ্ণ দাসের এই নির্ভীক পদক্ষেপ স্থানীয়দের কাছে একজন নেতারও বেশি—তিনি হয়ে উঠেছেন এক ‘রক্ষাকর্তা’।