ফার্স্ট ফ্লাশে উৎপাদন ঘাটতি, দুশ্চিন্তায় জলপাইগুড়ির ক্ষুদ্র চা চাষিরা

জলপাইগুড়ি : উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগানে ফার্স্ট ফ্লাশে চা পাতা তোলার কাজ শুরু হলেও উৎপাদন ঘাটতিতে দুশ্চিন্তায় জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিরা। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষী সমিতির মতে, চলতি বছরের চা উৎপাদন অশনি সংকেত বহন করছে।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর চা পাতা তোলার মরশুম শেষ হয়। এ বছর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ফার্স্ট ফ্লাশ। কিন্তু শুরুতেই হতাশা গ্রাস করেছে চা চাষিদের। উৎপাদনের পাশাপাশি গুণগত মানও কমেছে বলে দাবি করেছে জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষী সমিতি।

Small tea farmers in Jalpaiguri worried about production shortfall in first flush

জেলা ক্ষুদ্র চা চাষী সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “বৃষ্টি না হওয়া এবং হঠাৎ ঠান্ডা পড়ে যাওয়ায় চা উৎপাদন মার খাচ্ছে। কৃত্রিমভাবে জলসেচ দিয়ে চা গাছ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে, তবে তাতে আশানুরূপ ফল মিলছে না।”

তিনি আরও বলেন, শুধু ক্ষুদ্র চা বাগান নয়, সমস্ত চা বাগানেরই অবস্থা এক। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ফার্স্ট ফ্লাশের পাশাপাশি সেকেন্ড ফ্লাশ উৎপাদনেও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

চা উৎপাদনের এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। ফার্স্ট ফ্লাশের কাঁচা চা পাতার দাম ইতিমধ্যেই কেজি প্রতি ১৪ থেকে ১৫ টাকায় নেমে এসেছে, যেখানে আগের বছর এই দাম ছিল কেজি প্রতি ৩০ টাকা।

বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “সবকিছুর খরচ বাড়ছে, অথচ ফলন কমছে। পোকামাকড়ের আক্রমণও বাড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এখনই বৃষ্টি প্রয়োজন।”

ফার্স্ট ফ্লাশে উৎপাদন কম হলে তার প্রভাব সেকেন্ড ফ্লাশেও পড়তে পারে। উল্লেখ্য, সেকেন্ড ফ্লাশের চায়ের গুণগত মান ও বাজারদর বেশি থাকে। ফলে এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ক্ষুদ্র চা চাষিদের আর্থিক ক্ষতি আরও গভীর হবে।

চা শিল্প উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই সংকট শুধু চা চাষিদের নয়, চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর ভবিষ্যৎকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে।

চা চাষিদের মতে, এই সংকট কাটাতে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। পাশাপাশি, প্রকৃতির সহায়তা অর্থাৎ বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হতে পারে। তবে ফার্স্ট ফ্লাশে যে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে, তা সেকেন্ড ফ্লাশ পর্যন্ত কতটা গভীর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *