পরিবেশ দিবসের কিছু কথা কিছু ভাবনা

অরুণ কুমার : প্রতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস ৫ ই জুন সারা বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন জায়গায় এই দিনটি নানানভাবে উদযাপিত হয়েছে। এই বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম হচ্ছে ‘বায়ু প্রদূষণ’। ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্ব জুড়েই পালিত হচ্ছে এই দিবস। রাষ্ট্র সংঘের দ্বারা প্ৰত্যেক বছর নির্বাচিত একটি থিমকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মানুষ একদিকে পরিবেশকে সৃষ্টি করে নিজের প্রয়োজন মতো তৈরি করতে পারে যা পরিবেশকে ভৌতিক পুষ্টি দেয়, যা বৃদ্ধি করে মানসিক, সামাজিক ও বুদ্ধিমত্তা। মানব জাতির দীর্ঘ ও যন্ত্রনাদায়ক বিবর্তন ও বিকাশের ফলে মানব সভ্যতা এমন একটি স্থানে পৌঁছেছে যেখানে বিজ্ঞান ও কারিগরির দ্রুততম অগ্রগতির ফলে ক্ষমতাধারী মানুষ পরিবেশকে যেমন খুশী পরিবর্তন করতে সক্ষম। মানবজাতির জন্য পরিবেশকে সুরক্ষিত করতে ও আর্থিক উন্নয়ন, সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের প্রতি রাষ্ট্রসংঘের দায়বদ্ধতা রয়েছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে এর আগে, ২৪ মে থেকে ৪ জুন পৰ্যন্ত হয়ে গেল বিশ্ব জুড়ে একটি ক্যাম্পেইন। বিশ্ব পরিবেশ দিবস, মাস্ক চ্যালেঞ্জ। বিশ্বে প্রতি দশজনের মধ্যে নয় জনের শরীরে দূষিত বায়ু শ্বাস প্ৰশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে। এই ১২ দিনে আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছি মাস্ক চ্যালেঞ্জ ক্যাম্পেনের (দূষিত বায়ুর নিঃশ্বাসে প্রবেশ আটকাতে নাক মুখ ঢাকতে) সাথে জুড়তে। কাপড়ে মুখ ঢাকা একটি বিশেষ প্রতিবাদ যা পৃথিবীর বড় বড় নেতৃত্বের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ রূপে পৌঁছে যাবে, আমরা নির্মল বায়ু নিঃশ্বাসে নিতে চাই। সেলিব্রেটিস, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও প্রতিটি মানুষের কাছে একটি অনুরোধ আপনারা নিজের নাক মুখ ঢাকা ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে। বায়ু প্ৰদূষণ নিয়ন্ত্ৰণ করতে কয়েকটি বিষয় আমরা অবলম্বন করতে পারি –


প্রথমত, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা কার শেয়ার করা হোক, এছাড়া সাইকেল ব্যবহার করা হোক।

দ্বিতীয়তঃ বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি, ট্যাক্সি ব্যবহার করা, পুরনো গাড়ি বদলে হাইব্রিড কার কেনা হোক।

তৃতীয়তঃ জৈবিক বর্জ্য পদার্থকে কম্পোস্ট করা হোক, অজৈব বর্জ্য পদার্থকে পুনর্ব্যবহার করা হোক।

চতুর্থত, যখন গাড়ি চলবে না, গাড়ির ইঞ্জিনের স্টাৰ্ট বন্ধ করে রাখা হোক।

পঞ্চমত, খাদ্য তালিকা থেকে মাংস ও দুগ্ধজাত পদার্থ কমিয়ে ফেলা হোক, এতে মিথেন গ্যাসের এমিশন কমবে।

ষষ্ঠতঃ ঘর গরম ও শীতল করতে এনার্জি এফিশিয়েন্ট বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করতে চেষ্টা করা হোক।

সপ্তমতঃ বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয় করতে হবে, প্রয়োজন না থাকলে বৈদ্যুতিক বাতি ও বৈদুতিন সামগ্রী বন্ধ বা নিভিয়ে রাখা হোক।

অষ্টমত: নন টক্সিক রং ও কাপড় ব্যবহার করা হোক এবং সবশেষে যেটা বলতে হয় নিজে শপথ নিন ও অন্যদের চ্যালেঞ্জ করুন বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে।

আপনার পদক্ষেপ ছবি সহ শেয়ার করুন। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সবাইকে জানান আপনার অভিজ্ঞতার কথা। ইন্ডাস্ট্ৰিগুলিতে ক্ষতিকারক এমিশন রোধে ব্যবস্থার পরামর্শ দেওয়া হোক। ডিজেল ও পেট্রোল চালিত গাড়ীকে ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া ও অপ্রচলিত শক্তির বৃদ্ধি করা। কিভাবে শহরগুলি এই দিবসকে উদযাপন করবে? শহরগুলিতে বিনামূল্যের পাবলিক ট্র্যান্সপোর্ট ব্যবস্থা করা। ফুটপাথ ও সাইকেলের জন্য নির্ধারিত লেন তৈরি করা হোক, ব্যবসায়ীরা কিভাবে একাজে সংযুক্ত হবেন, সেক্ষেত্ৰে ব্যবসায়ীদের বিতরণ ব্যবস্থাকে দূষন মুক্ত করতে হবে, ব্যবসায় ব্যবহৃত সামগ্রীকে পুনর্ব্বারযোগ্য করতে হবে, পাবলিক ট্ৰান্সপোৰ্ট বেশি ব্যবহার করে, কিংবা বেশি করে পায়ে হাঁটার অভ্যাস করে সভ্য সমাজ নিজেদের প্ৰদূষণ মুক্তের কাজে যুক্ত করতে পারেন। বৰ্জ্য পদাৰ্থের সঠিক ব্যবহার করে প্ৰদুষণকে অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।

তো এইভাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আমাদের প্রত্যেককেই অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধ এবং অপরকে সচেতন করার যে প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে তবেই আমাদের এই বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা সার্থক হয়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *