অরুণ কুমার : প্রবল বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কা। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে খাদ্য, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, জ্বালানি ও গ্যাসের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি কলম্বোর রাজপথে রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সামনে জমায়েত হন অনেকে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে বিক্ষোভকারীদের। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। প্রতিবাদীরা আগুন ধরিয়ে দেয় গাড়িতে। ঘটনায় পুলিশ ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে জারি করা হয় কার্ফিউ। বিক্ষোভকারীদের দাবি, পদত্যাগ করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দেশের এই চরম পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার ২৬ জন মন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছেন, যা নিয়ে দ্বীপরাষ্ট্র এ শুরু হয়েছে বিতর্ক। তবে মন্ত্রীরা জানিয়েছেন, এই অবস্থায় ইস্তফা ছাড়া উপায় তাদের কাছে ছিল না। তবে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপক্ষে অবশ্য ইস্তফার পথে হাঁটেন নি।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এটিই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে অর্থনৈতিক সংকট বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। জ্বালানির জন্য হাহাকার। কাগজের অভাবে পরীক্ষা, অধিকাংশ সংবাদপত্রের প্রকাশ বন্ধ। খরচ বাঁচাতে দিনে প্রায় ১০-১৩ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে বিদ্যুৎ। দেশজুড়ে অব্যাহত রয়েছে কার্ফু শ্রীলঙ্কায়, বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে লাফিয়ে। জ্বালানীর অভাবে রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে পড়েছে বাস-ট্রাক। গণ পরিবহন ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ছে
এরই প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার থেকে পথে নেমেছে সেদেশের মানুষ। দেশের চরম আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে আম জনতা।
রোজ ১০ ঘণ্টার বেশি লোড শেডিং। পাম্পে নেই পেট্রোল-ডিজেল, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া। এক কেজি চালের দাম ২২০ টাকা, আটা এক কেজি ১৯০ টাকা, একটা ডিম ৩০ টাকা, এক কেজি গুঁড়ো দুধ ১৯০০ টাকা। খুচরা পণ্যের দাম বেড়েছে ১৭.৫%, আর খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে ২৫%। আর্থিক সঙ্কটের জেরেই শ্রীলঙ্কায় সমস্ত পণ্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। দক্ষিণ শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন জায়গা গল, মোতেরা, মেরাটুয়ায় রাস্তায় বেরিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষজন।
এরকম এক পরিস্থিতিতে জনরোষ থেকে বাঁচতে শনিবার সন্ধে ৬টা থেকে ৩৬ ঘণ্টা দেশজুড়ে কার্ফু জারি করল শ্রীলঙ্কা সরকার। এই মত অবস্থায় প্রবল চাপে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থার কথা ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার। জরুরি অবস্থার ঘোষণার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায় কড়া আইন কার্যকর করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় বিচার ছাড়াই যে কোনও ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন আটকে বা গ্রেপ্তার করে রাখার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে সেনাকে।
মানুষের ক্ষোভ এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনের কাছেও। সরকার ওই ঘটনাকে জঙ্গি কার্যকলাপ বলে দাবি করেছে। এরপরই দেশজুড়ে জারি করা হল কার্ফু।
সারা বিশ্ববাসীর নজর এখন ভারতের এই প্রতিবেশী দেশের দিকে।
কী পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কা? চলুন একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেওয়া যাক। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের ২২ মিলিয়ন মানুষ এরকম সঙ্কটে আর পড়েননি। দেশে বিদেশি মূদ্রার পরিমাণ নেমে গিয়েছে ২.৩১ মিলিয়ন ডলারে। বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য শ্রীলঙ্কাকে যে পরিমাণ সুদ দিতে হয় তা দেশে জমা বিদেশি মূদ্রার থেকে অনেক বেশি।
গণ পরিবহন ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ছে। জ্বালানীর অভাবে রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে পড়েছে বাস-ট্রাক। দেশের এমন এক পরিস্থিতিতে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। এখন দেখার বিষয় ভারতের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্রের পরিস্থিতি আগামী দিনে কোন দিকে গড়ায় সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল।
Photo source- ANI official FB page.