অসংখ্য সাহসী নারীর অনুপ্রেরণা – দেশের প্রথম ভারতীয় মহিলা জাগুয়ারের পাইলট তনুষ্কা সিং

পিনাকী রঞ্জন পাল : ছোটবেলা থেকেই তাঁর চোখে ছিল স্বপ্নের আকাশ। বাবার কাঁধে চড়ে সেনার কুচকাওয়াজ দেখতে দেখতেই তিনি ঠিক করে ফেলেছিলেন, একদিন তিনিও পরবেন সামরিক উর্দি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে যায় লক্ষ্য, নতুন দিগন্ত খুলে যায় তাঁর সামনে। সেনাবাহিনীর পরিবর্তে তিনি টেনে নেন আরও বড় চ্যালেঞ্জ— আকাশ জয় করার চ্যালেঞ্জ!

তনুষ্কা সিং, ভারতের বায়ুসেনার প্রথম স্থায়ী মহিলা জাগুয়ার ফাইটার জেট পাইলট। একটি নাম, যা শুধু তাঁর নয়, অসংখ্য নারীর অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠতে চলেছে।

তনুষ্কার বেড়ে ওঠা এমন এক পরিবারে, যেখানে দেশের জন্য কাজ করাটাই ছিল জীবন। বাবা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল অজয় প্রতাপ সিং, ঠাকুরদাও ছিলেন সেনা অফিসার। তাঁদের আদর্শেই ছোট থেকে গড়ে উঠেছিলেন তনুষ্কা। তবে সেনাবাহিনী নয়, আকর্ষণ অনুভব করলেন আকাশের প্রতি, যেখানে শূন্যে ওড়া যুদ্ধবিমানগুলো যেন ডাক দিচ্ছিল তাঁকে।

২০২২ সালে ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিটেক শেষ করার পরই ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তনুষ্কা। এরপর শুরু হয় কঠোর প্রশিক্ষণ—তেলেঙ্গানার ডুন্ডিগালে এয়ার ফোর্স অ্যাকাডেমিতে। ১৮ মাসের অনুশীলন, শারীরিক ও মানসিক শক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা, তারপর কমিশনড অফিসার হিসেবে নিযুক্তি। কিন্তু এটাই শেষ নয়, সামনে ছিল আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ—যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ!

তনুষ্কা প্রথমেই প্রশিক্ষণ নেন হক এমকে ১৩২ এয়ারক্রাফটে। তাঁর দক্ষতা ও পরিশ্রম দেখে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, তাঁকে আরও বড় দায়িত্ব দিতে হবে। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—তাঁকে নির্বাচিত করা হয় জাগুয়ার ফাইটার জেট স্কোয়াড্রনের প্রথম স্থায়ী মহিলা পাইলট হিসেবে!

জাগুয়ার, ভারতীয় বিমান বাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী যুদ্ধবিমান, যা মূলত স্ট্রাইক মিশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। শত্রুপক্ষের উপর নির্ভুল আক্রমণ হানতে এই বিমান অনন্য। বহু মহিলা পাইলট জাগুয়ার চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কিন্তু স্থায়ী স্কোয়াড্রনে যুক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন একমাত্র তনুষ্কাই।

প্রথমবার যুদ্ধবিমানের ককপিটে বসে কী অনুভূতি হয়েছিল? তনুষ্কা বলেন, “ভয় কাকে বলে, সেটা কখনো বুঝতে পারিনি। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। ঠিক এমন জীবনই আমি চেয়েছিলাম!”

তাঁর এই সাফল্য যেন আরও অনেক তরুণীর চোখে স্বপ্নের রং লাগিয়ে দেয়। তাই তিনি আহ্বান করেন দেশের সমস্ত মেয়েদের, “যারা আত্মবিশ্বাসী, যাদের নেতৃত্বের দক্ষতা আছে, তারা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুক। আকাশ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে!”

তনুষ্কা সিং শুধু একজন পাইলট নন, তিনি একজন পথপ্রদর্শক। তাঁর এই অর্জন প্রমাণ করে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে আকাশও আর সীমা নয়। তাঁর উড়ান শুধু যুদ্ধবিমান নয়, এক নতুন যুগের—যেখানে নারীরা নিজেদের সাহসিকতা, দক্ষতা ও নেতৃত্ব দিয়ে আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *