লেখক : পঙ্কজ সেন
জলপাইগুড়ি জেলার এক অন্যতম প্রধান নদী হলো তিস্তা। যা জলপাইগুড়ি তথা “উত্তরবঙ্গের প্রাণ” হিসেবে পরিচিত। শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর এই বাঁধটি কিন্তু ১৯৫০ সালে ছিল না। ১৯৫০ সালে তিস্তা নদীতে এক ভয়াবহ বন্যার ফলে সংলগ্ন এলাকার অনেক ক্ষয়ক্ষতি ও জানমালের হানি হলে এলাকার স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে শহরে তিস্তা নদী বরাবর একটি বাঁধ নির্মাণের দাবি ওঠে। ১৯৫০ সালে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ জলপাইগুড়ি শহরে আসলে পুনরায় এই দাবি উত্থাপিত হয়।

সেই সময় তিনি জনগণের এই দাবিকে মান্যতা দিতে নদী বরাবর একটি দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণের অনুমতি প্রদান করেন। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বাংলার রূপকার ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রাপ্তির পর ১৯৫১-৫২ সালে জুবলি পার্ক থেকে শুরু করে তিস্তা ব্রিজ সংলগ্ন জাতীয় সড়ক পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে দেয় জলপাইগুড়ি জেলা সেচ ও জল সম্পদ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।প্রায় দেড় বছরের মাথায় মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে আগত শ্রমিকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এই দীর্ঘ বাঁধটি গড়ে ওঠে। তবে আজ বাঁধের যে আয়তন রয়েছে, ১৯৫২ সালে নির্মিত বাঁধ কিন্তু সেই রকম ছিল না।

১৯৬৮ সালের ৪ঠা অক্টোবর লক্ষ্মী পূজার দিন তিস্তার প্রলয়ঙ্করী বন্যার পর ১৯৬৯ সালে পুনরায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জলপাইগুড়ি জেলা সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় এই বাঁধের আয়তন ও উচ্চতা পূর্বাপেক্ষা অনেক বৃদ্ধি করা হয়। তারপর একটা দীর্ঘ সময় কেটে গেলে সম্প্রতি ২০২১-২২ সালে জুবলি পার্ক থেকে শুরু করে বাঁধের শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ রাস্তা পাকা করার উদ্যোগ গৃহীত হয় যা বর্তমানে এখনো চলছে। প্রতিদিন সকাল ও বিকালে শহরের অসংখ্য মানুষ এই বাঁধের রাস্তা দিয়ে হাঁটা চলা করেন।শহরের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে তিস্তা নদীর এই বাঁধ। শহরের অন্যতম বিখ্যাত সরকারি বিদ্যালয় জলপাইগুড়ি জিলা স্কুল এই বাধের পাশেই অবস্থিত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই লেখা। তাই বিবরণীতে সামান্য ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। পাঠকদের কাছে একান্ত বিনীত অনুরোধ, আপনাদের কাছে তিস্তা নদীর এই বাধ সংক্রান্ত কোন তথ্য থাকলে আপনারা তা নির্দ্বিধায় কমেন্ট বক্সে উল্লেখ করতে পারেন।