পিনাকী রঞ্জন পাল
বিয়েতে যৌতুক হিসেবে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দেওয়ার রীতি রয়েছে। কিন্তু যৌতুক হিসেবে কুকুর দেওয়ার কথা কি তোমরা শুনেছো?
ভারতের রাজস্থানের পশ্চিম অঞ্চলে ‘যোগী’ নামে এক জাতি আছে। এরা বিয়ের সময় বরকে যৌতুক হিসেবে কুকুর দিয়ে থাকে। মজার কথা হল, এই জাতি ভিক্ষা করে নিজের তথা পরিবারের ভরণ পোষণ করে থাকে। শিক্ষিত সমাজের সঙ্গে এদের তেমন যোগাযোগ নেই। এই জাতির বাহন হল ‘গাধা’। যোগী জাতি কয়েকশ বছরের পুরনো রীতি মেনে চলে। এদের স্মৃতিশক্তি খুবই প্রখর হয়। কোন কথা একবার মন দিয়ে শোনার পর সেটা সহজে ভোলে না। ‘রামায়ণ’ থেকে ‘মহাভারত’ “তোতা ময়না’ কিংবা ‘হাতিমতাই’–এর গল্প এরা একবার শুনেই মনে রাখতে পারে।
এই বিশেষ গুণের জন্য এরা খুব সহজেই ভিক্ষা পেয়ে যায়। কিন্তু সব যোগী ভিক্ষাকে নিজেদের পেশা করে না। এদের মধ্যে ‘মাঙ্গলিয়ার’ আর ‘ভিল’ গোষ্ঠী ভিক্ষাবৃত্তিকে জাতির কলঙ্ক বলে মনে করে। কখনও-সখনও এই কারণেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। যোগীদের মধ্যে ‘তবকা’ গোষ্ঠী বিণ দ্বারা সাপ নাচানর জন্য প্রসিদ্ধ। এরা ঘুরে ঘুরে সাপের খেলা দেখিয়েই জীবন ধারণ করে।
যোগীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে যাযাবর জীবন যাপন করে। এরা সাধারণত কোন স্থানে ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার বেশি থাকে না। যোগীরা নিরামিষাশী এবং মাংসাশী উভয়ই হয়। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে এদের মধ্যে কোন বাছবিচার নেই। এরা সাপের মাংস খেতে ভীষণ ভালবাসে।
যোগীরা তাদের প্রথার মধ্যে বিয়েতে কুকুর দেওয়াটাকে দারুণ গুরুত্ব দেয়। যোগীরা মনে করে যে, বধূর সঙ্গে তার মা বাবার যৌতুক হিসেবে কুকুর দেওয়াটা অতি আবশ্যক। নয়তো এই বিয়ে সামাজিক মান্যতা পায় না। যদি কোন শ্বশুর-শাশুড়ি এই প্রথা না মানে অথবা কোন কারণে কুকুর দিতে অসমর্থ হয় তবে তাদের মেয়েকে সারা জীবন বরের বাড়ির লোকেরা ব্যঙ্গ করে।
যোগীদের আরাধ্য দেবতা হল বাবা রামদেব। এরা নিজের মা-বাবা কিংবা পরিচিতদের মৃত্যুতে অত শোক প্রকট করে না, যতটা যৌতুকে পাওয়া কুকুর মরলে করে। কুকুরের মৃত্যুতে সমস্ত যোগী শোক পালন করে। যোগীরা নিজেদের হিন্দু হিসেবে দাবি করলেও তারা মৃত ব্যক্তিকে দাহ না করে কবর দিয়ে থাকে।