সাধারণ ধর্মঘটের প্রথম দিনে আংশিক প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যে

অরুণ কুমার : দেশজুড়ে দুদিনের সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে বাম সমর্থিত ১৮টি শ্রমিক সংগঠনগুলি। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শ্রম আইন বাতিল, ন্যূনতম মজুরির দাবি, বেসরকারিকরণের প্রতিবাদ-সহ একাধিক ইস্যুতে ১৮টি বাম সংগঠনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ভারত বন্‌ধে মিশ্র দেশ জুড়ে। বন্‌ধের প্রভাব পড়েছে ওড়িশা, কেরল, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ প্রায় সব রাজ্যেই। মিশ্র প্রভাব পড়েছে উত্তরপ্রদেশ, মুম্বইতেও।

সোমবার সকাল থেকেই কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বন্‌ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দিল্লি মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, কেরল, অসম, ওড়িশা সহ অন্যান্য রাজ্যে আংশিক প্রভাব পড়েছে এই বন্ধের। তবে পশ্চিমবঙ্গের নানান জায়গায় সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলছে। দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে বড় কোনও অশান্তির খবর মেলেনি।

বন্‌ধের প্রথম দিনে বিক্ষিপ্ত প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে। সকাল থেকেই রাস্তায় সিটু- সহ বাম শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা। বিভিন্ন প্রান্তে রেল ও রাস্তা অবরোধে ব্যাহত হয় জনজীবন। হাওড়া- শিয়ালদহের প্রায় সব শাখায় বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধের জেরে আটকে পড়ে বহু লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন। এছাড়া গড়িয়া বাজারে বাস ভাঙচুর, যাদবপুর এইট বি বাসস্ট্যান্ডে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, বারাসতে স্কুল বাসে ভাঙচুরের মতো অশান্তির ঘটনাও ঘটেছে। রাজ্যের অন্যত্রও মিছিল-অবরোধ হয়েছে। রাজধানী দিল্লিতেও পড়েছে বন্‌ধের প্রভাব। তবে মোটের উপর জনজীবন স্বাভাবিক। সকালের দিকে পতপরগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে মিছিল করেন বাম শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা। তবে রাজ্যের অন্যত্র বন্‌ধের তেমন প্রভাব পড়েনি।

মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গাতেও ভারত বন্‌ধের ভাল প্রভাব পড়েছে। মুম্বইয়ে বৃহন্মুম্বই ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই এবং ট্রান্সপোর্ট-এর কর্মীরা সোমবার মধ্যরাত থেকেই ধর্মঘটকে সফল করতে পথে নেমে পড়েছেন। সকাল থেকেই ব্যহত বাস পরিষেবা। তবে সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, ৪০টি অতিরিক্ত বাস চালানো হচ্ছে।

অপরদিকে, ৪৮ ঘণ্টার ভারত বন্‌ধে ভাল সাড়া পড়েছে কর্নাটকের হুবলিতে। সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ-বিক্ষোভে শামিল হন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তবে বেঙ্গালুরুতে জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে বলেই খবর পাওয়া গিয়েছে।

বাম শাসিত রাজ্য কেরলে সকাল থেকেই রাস্তায় শ্রমিক সংগঠনগুলি। ব্যাপক প্রভাব পড়েছে রাজধানী তিরুঅনন্তপুরম, ত্রিশূর, কোচি-সহ রাজ্যের প্রায় সর্বত্র। যানবাহন চলছে হাতে গোনা। সকাল থেকে দোকানপাট খোলেনি। বন্ধ অধিকাংশ স্কুল-কলেজ ও সরকারি অফিস। তার মধ্যেই রাস্তায় বেরিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে বন্‌ধ ঘিরে কোথাও বড় কোনও অশান্তির খবর মেলেনি।

বন্‌ধের জেরে জনজীবন ব্যহত উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার অসমেও। গুয়াহাটি-সহ বিভিন্ন স্টেশনে রেল অবরোধে আটকে পড়ে বহু ট্রেন। অন্যান্য যানবাহনও চলছে খুব কম। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, অবস্থান-বিক্ষোভে শামিল হন। স্কুল-কলেজ, সরকারি দফতর খোলা থাকলেও উপস্থিতির হার কম।

ভারত বন্‌ধের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ওড়িশা। সকাল থেকেই দফায় দফায় রেল- রাস্তা অবরোধে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ভদ্রক- সহ বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধের জেরে আটকে পড়ে বহু লোকাল এবং দূরপাল্লার ট্রেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাস্তায় বন্‌ধ সমর্থনকারীরা পিকেটিং, অবস্থান করছেন। পুরীতে বেড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক পর্যটক।

অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কমিটির যৌথ মঞ্চের ডাকা দুদিনের ভারত বনধে মিশ্র প্রভাব জলপাইগুড়ি শহরে। সোমবার সকাল থেকে বনধ সমর্থনকারীদের মিছিল ও বিক্ষোভ, পিকেটিং শহরে অব্যাহত। বনধ সমর্থনকারীদের দাবী প্রথম দিনের বনধ সর্বান্তক সফল। প্রদেশ কংগ্রেসের সহ সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার এবং সিআইটিইউ এর জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কৃষ্ণ সেন বনধে সাড়া দেওয়ায় সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, বনধে জেলায় কোন প্রভাব পড়ে নি।

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়িতে বেশ কিছু জায়গায় বন্ধের প্রভাব পড়লেও জনজীবন স্বাভাবিক ছিল শিলিগুড়ি দার্জিলিং কুচবিহার আলিপুরদুয়ারে চা বাগান এলাকায়।

প্রদেশ কংগ্রেসের সহ সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার বলেছেন, প্রথম দিনের বনধ সফল হয়েছে। তবে দেশের দুটো রাজনৈতিক দল এই বনধের বিরোধিতা করছে। তারা হল কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি ও এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। এই দুটি দলকে ধিক্কার জানাই।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ যেইভাবে বন্ধের প্রথম দিন সারা দিয়েছেন এবং কেউ প্রত্যক্ষ কেউ বা পরক্ষ ভাবে বন্ধ কে সমর্থন করছেন সেটা অভূতপূর্ব এবং আমরা আপামর রাজ্যবাসীকে এর জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ আই এনটিইউসি রাজ্য সম্পাদক রাজর্ষি ভৌমিক। তিনি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ যে আজ আর কি বিজেপি কি তৃণমূলের সাথে নেই সেটা আজ আবারো প্রমাণিত হলো যখন তাদেরকে প্রচ্ছন্ন হুমকিকে উপেক্ষা করে মানুষ বন্ধে সামিল হয়েছেন. এদিনের জনগণের বন্ধ কে সার্থক করার জন্য আপামর জনগণকে জাতীয়তাবাদী অভিনন্দন জানিয়েছেন।

অপরদিকে সিআইটিইউ এর জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কৃষ্ণ সেন বলেন, এখনো পর্যন্ত দেশের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই বনধে সামিল হয়েছেন। দেশব্যাপী ব্যাংক ও বীমা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ। প্রথম দিনের বনধ অত্যন্ত ভাবে সফল বলা যায়।

যদিও জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, জলপাইগুড়ি জেলায় বনধের কোন প্রভাব পড়ে নি। জেলায় সব সচল রয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বেলা এগারোটা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের সামনে। ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে দাবি তোলা হচ্ছে, শ্রমকোড পরিবর্তন করা চলবে না, কৃষকদের ৫দফা দাবি পুরণ করতে হবে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ঢালাও বেসরকারীকরণ করা চলবে না, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দাম কমাতে হবে সহ মোট ১২দফা দাবি তোলা হয়েছে। ১২ই জুলাই কমিটি পক্ষ থেকে ধর্মঘটের পক্ষে মিছিল চলছে। এ দিন জেলা আদালত, ব্যাঙ্ক, এল আইসি , পোস্ট অফিসের সামনে দফায় দফায় চলে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পুলিশের নিরাপত্তা ছিল জোরদার।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে,নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে চলছে ধর্মঘট। ২৮ ও ২৯শে মার্চ ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে বাম সমর্থিত ট্রেড ইউনিয়নগুলোর দ্বারা।দুই দিন ব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে । এই যৌথ ট্রেড ইউনিয়ন গুলির ডাকা বন্ধ আগামী মঙ্গলবারও অব্যাহত থাকবে বলে জানা গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *