অরণ্য ও নীলাঞ্জনার প্রেমকাহিনী

পিনাকী রঞ্জন পাল : গল্পের শুরুটা কিছুটা রূপকথার মতো। অরণ্য, এক নিঃসঙ্গ যুবক, বসবাস করে কোলকাতার এক ছোট্ট ফ্ল্যাটে। তার জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য সে প্রতিদিন কাজ শেষে গঙ্গার তীরে গিয়ে বসে থাকে। কোলকাতার গঙ্গার তীর বরাবর এক শান্ত নির্জন জায়গায় সে সন্ধ্যাবেলা বসে থাকে। কাজের চাপ, জীবনের উদ্বেগ আর একাকীত্ব কাটানোর জন্য এটা তার প্রিয় সময়।

একদিন সন্ধ্যায়, অরণ্য গঙ্গার তীরে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ তার চোখ পড়ে নীলাঞ্জনার উপর। নীলাঞ্জনা, এক সৌম্য সুন্দরী মেয়ে, সাদা শাড়িতে মোড়া। তার মুখে এক অদ্ভুত মায়া, চোখে অজানা কষ্টের ছাপ। অরণ্যের মনে হয়েছিল, নীলাঞ্জনার চোখে যেন গভীর দুঃখ লুকানো আছে।

নীলাঞ্জনা ছিল এক নামী চিত্রশিল্পী। কিন্তু তার জীবনে এক ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এক দুর্ঘটনায় তার প্রিয়জনদের হারিয়ে ফেলে এবং সেই দুঃখের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছিল সে। অরণ্য, তার নির্বিকার চেহারা ও কোমল স্বভাবের জন্য নীলাঞ্জনার প্রতি আকৃষ্ট হয়।

অরণ্য ও নীলাঞ্জনার মধ্যে প্রথমে কথা বলার সাহস হয় না। তবে তাদের চোখের ভাষা বলে দিচ্ছিল অনেক কিছু। একদিন, সাহস করে অরণ্য নীলাঞ্জনার দিকে এগিয়ে যায়।

“আপনি কি এখানে প্রায়ই আসেন?” অরণ্য জিজ্ঞাসা করে।

নীলাঞ্জনা এক মুহূর্তের জন্য চুপ করে থাকে, তারপর মৃদু হেসে বলে, “হ্যাঁ, আমি এখানে প্রায়ই আসি। শান্তি পাওয়ার জন্য।”

অরণ্য ও নীলাঞ্জনার মধ্যে আলাপ শুরু হয়। তারা জানতে পারে, তাদের দুজনের জীবনেই অনেক কষ্ট আর দুঃখ আছে, কিন্তু সেই দুঃখের মাঝেও তারা খুঁজে পায় একে অপরের মাঝে সান্ত্বনা।

ধীরে ধীরে, তাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে। অরণ্য নীলাঞ্জনার জীবনের কষ্টগুলো বুঝতে পারে এবং তাকে সাহস দেয়, সান্ত্বনা দেয়। নীলাঞ্জনা অরণ্যের পাশে দাঁড়ায়, তার জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য।

তাদের বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণত হয়। তারা বুঝতে পারে, একে অপরের মাঝে তারা খুঁজে পেয়েছে সেই সঙ্গীকে, যার জন্য তাদের জীবন পূর্ণ হতে পারে।

অরণ্য ও নীলাঞ্জনা একদিন গঙ্গার তীরে বসে কথা বলছিল। হঠাৎ নীলাঞ্জনা বলে, “তুমি জানো অরণ্য, আমি যখন প্রথম তোমাকে দেখেছিলাম, তখনই মনে হয়েছিল, তুমি আমার জীবনে আলোর মতন। তোমার সাথে কথা বলার পর আমার মনে হয়েছিল, জীবনে আবার নতুন করে শুরু করা যায়।”

অরণ্য মৃদু হেসে বলে, “আমি তো ভাবতাম, আমার জীবনে কিছুই নেই। কিন্তু তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর বুঝলাম, জীবনে ভালোবাসা থাকলে সব কিছু সম্ভব।”

তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখে চোখে কথা হয়, মনের গভীর ভালোবাসা প্রকাশ পায়। তারা দুজনে একে অপরকে প্রতিজ্ঞা করে, জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট একসাথে ভাগাভাগি করে নেবে।

অরণ্য ও নীলাঞ্জনা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা একসাথে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করবে। তারা বিয়ে করে এবং একসাথে নতুন জীবনে পা রাখে। তাদের জীবনে সুখ-দুঃখের মিশ্রণ ছিল, কিন্তু একে অপরের পাশে থাকার কারণে তারা সব কষ্টকে কাটিয়ে উঠতে পারে।

অরণ্য ও নীলাঞ্জনার এই প্রেমকাহিনী প্রমাণ করে, জীবনে দুঃখ-কষ্ট যতই থাকুক, ভালোবাসা সব কিছুকে জয় করতে পারে। ভালোবাসা মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়, জীবনে নতুন আশা এনে দেয়। তাদের এই কাহিনী আমাদের শেখায়, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো মিথ্যে হতে পারে না, এটি সর্বদাই স্থায়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *