প্রথম অধ্যায় : নতুন ক্লাস, নতুন বন্ধুত্ব
সকাল বেলা ছিল খুব সুন্দর। বিদ্যালয়ের মাঠে দখিনা বাতাস বইছিল আর সূর্যের কিরণ যেন স্বাগত জানাচ্ছিল নতুন দিনের শুরু। ইধিকা, পায়েল এবং অনুরাগ আজ স্কুলের নতুন ক্লাসে যোগ দিতে চলেছে। অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উঠেছে তারা। আগের ক্লাসের মধুর স্মৃতি মনেও আছে, আবার নতুন ক্লাসের উত্তেজনাও ছিল তাদের চোখেমুখে।
ইধিকা সবসময়ই রহস্যের প্রতি খুব আকর্ষণ অনুভব করে, কিন্তু আজকের দিনটি বিশেষ। সে তার বন্ধুদের নিয়ে নতুন ক্লাসে গিয়ে বসেছে, আর মনে মনে ভাবছে, “কী নতুন রহস্য আসছে আমাদের সামনে?”
নতুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া শুরু হল। সেখানে ছিল রিয়া, একটা স্মার্ট, হাসিখুশি মেয়ে, আর তার পাশেই বসেছিল আকাশ, যে একটু লাজুক স্বভাবের। কিন্তু ইধিকার মনে হচ্ছিল, রিয়া আর আকাশের মধ্যে এমন কিছু আছে যা সাধারণ নয়। তাদের আচরণে একটা চাপা রহস্য লুকানো আছে। পায়েল আর অনুরাগও সেই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে, কিন্তু কেউ কিছু বলে না।
দ্বিতীয় অধ্যায় : অদ্ভুত আচরণ
ক্লাসের প্রথম দিন খুব ভালোভাবে কাটল, তবে ইধিকার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। স্কুল থেকে ফেরার সময় সে পায়েল আর অনুরাগকে বলে, “তোমরা লক্ষ্য করেছ রিয়া আর আকাশের আচরণে কিছু অস্বাভাবিকতা?”
পায়েল একটু অবাক হয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি দেখেছি। ওরা কিছু একটা লুকাচ্ছে। কিন্তু সেটা কী হতে পারে?”
অনুরাগ তখনই বলে ওঠে, “আচ্ছা, আমরা কি একটু অনুসন্ধান করতে পারি না? হয়তো ওরা কোনো সমস্যায় আছে।”
ইধিকা মাথা নাড়ে, “ঠিক বলেছ। কিন্তু এটা খুব ধীরে এবং সতর্কতার সাথে করতে হবে।”
তৃতীয় অধ্যায় : রহস্যের সূত্র
পরের দিন স্কুলে এসে ইধিকা, পায়েল আর অনুরাগ আরও গভীরভাবে লক্ষ্য করা শুরু করে। রিয়া আর আকাশ প্রতিদিনের মতোই স্কুলে আসে, কিন্তু তাদের চোখেমুখে এক ধরনের উদ্বেগ লুকানো ছিল। ইধিকা লক্ষ করে, রিয়া প্রায়ই আকাশের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে, আর আকাশ যেন কিছু বলতে চায়, কিন্তু পারছে না।
একদিন, ক্লাসের পর রিয়া চুপিচুপি স্কুলের পেছনের মাঠে চলে যায়। ইধিকা তার পিছু নেয়। পায়েল আর অনুরাগও পিছনে থাকে। তারা দেখে রিয়া এক পুরনো স্টোরেজ রুমের কাছে দাঁড়িয়ে আছে, আর সেখানে আকাশও উপস্থিত। তারা খুব নিচু স্বরে কথা বলছে।
ইধিকা পায়েল আর অনুরাগকে বলে, “এটা দেখে মনে হচ্ছে কিছু বড় রহস্য আছে। আমাদের আরও কাছ থেকে শুনতে হবে।”
তারা একটু কাছে যায় আর দেখে, আকাশ রিয়াকে কিছু একটা দিচ্ছে—একটা কাগজের টুকরো। ইধিকা সেটা দেখে ভাবতে থাকে, “ওদের কাছে কী এমন গোপন কাগজ থাকতে পারে?”
চতুর্থ অধ্যায় : কাগজের টুকরোর রহস্য
ইধিকা সেই কাগজের টুকরো সম্পর্কে জানতে আরও উৎসুক হয়ে ওঠে। পায়েল বলে, “আমরা কি ওদের সরাসরি জিজ্ঞেস করবো? নাকি অন্য কোনো উপায় আছে?”
ইধিকা চিন্তা করে, “আমরা যদি সরাসরি জিজ্ঞেস করি, তাহলে তারা কিছু লুকাতে পারে। বরং আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”
কিছুদিন পর, ইধিকা পায়েল আর অনুরাগ আবার স্টোরেজ রুমের কাছে যায়। সেদিন সেখানে রিয়া আর আকাশ নেই, কিন্তু কাগজের কিছু অংশ মাটিতে পড়ে ছিল। ইধিকা সেটাকে তুলে নেয়। কাগজে কিছু অদ্ভুত লেখা ছিল—’এসওএস, আমাদের সাহায্য দরকার।’
“এসওএস? এতো বিপদের সংকেত!” অনুরাগ অবাক হয়ে বলে।
ইধিকা ভাবে, “ওরা কি কোনো বিপদে আছে? আমাদের আরও কিছু জানার প্রয়োজন আছে।”
পঞ্চম অধ্যায় : চোরের কৌশল
ইধিকা, পায়েল এবং অনুরাগ এরপর থেকে প্রতিদিন রিয়া আর আকাশের উপর নজর রাখতে থাকে। একদিন, তারা দেখে রিয়া স্কুলের বাইরে কারো সাথে দেখা করছে—একজন লম্বা লোক, যার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। লোকটা রিয়াকে কিছু একটা দিচ্ছে, আর তারপর তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে।
ইধিকা তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, “এখনই সময়। ওদের মুখোমুখি হতে হবে।”
রাতের বেলা, তারা রিয়ার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু হঠাৎ করে তারা দেখে, একটা চোর ভেতরে ঢুকেছে। ইধিকা তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চোরটাকে ফাঁকি দিয়ে রিয়াকে সাহায্য করে।
রিয়া এবং আকাশ এরপর তাদের সমস্ত সত্য কথা ফাঁস করে দেয়।
ষষ্ঠ অধ্যায় : সত্যের উদঘাটন
রিয়া আর আকাশের মুখে পুরো ঘটনা শুনে ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ হতবাক হয়ে যায়। রিয়া তাদের জানায়, “আমার বাবা একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন, কিন্তু কিছু মাস আগে তার গবেষণাগুলো চুরি হয়ে গেছে। সেই গবেষণাগুলোর মধ্যে এমন কিছু তথ্য ছিল যা দেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমি এবং আকাশ সেই চোরদের পিছু নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা নিজেরাও বিপদের মুখে পড়ে গেছি। সেই কারণে আমি আকাশের সাহায্য নিচ্ছি, আর গোপনে চেষ্টা করছি তথ্য উদ্ধার করতে।”
পায়েল অবাক হয়ে বলে, “তাহলে সেই এসওএস সংকেত ছিল তোমারই!”
রিয়া মাথা নিচু করে বলে, “হ্যাঁ, আমি সাহায্য চাচ্ছিলাম। কিন্তু সরাসরি কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তাছাড়া, সেই চোরেরা স্কুলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। আমি ভেবেছিলাম, যদি আমরা সতর্কতার সাথে কাজ করি, তবে ওদের ধরা সম্ভব।”
ইধিকা চিন্তিত হয়ে বলে, “তাহলে আমরা দ্রুত কাজ করতে হবে। কারণ সেই চোরেরা আবারও আক্রমণ করতে পারে। তুমি কি জানো তারা কোথায় লুকিয়ে আছে?”
আকাশ বলে, “আমাদের ধারণা, স্কুলের পেছনের স্টোরেজ রুমের পুরনো তলায় ওদের গোপন ঘাঁটি আছে। আমরা কয়েকদিন আগে সেখানে কিছু সন্দেহজনক কাগজপত্র পেয়েছি, কিন্তু তৎক্ষণাৎ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি।”
সপ্তম অধ্যায় : স্টোরেজ রুমের গোপন দরজা
ইধিকা, পায়েল আর অনুরাগ স্থির করে সেই স্টোরেজ রুমের পুরনো তলা ঘুরে দেখা হবে। তারা রাতে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কারণ তখন স্কুলের চারপাশ অনেকটাই ফাঁকা থাকে। রাতের গভীরতায় তিনজন ছুটে যায় স্টোরেজ রুমের দিকে। কিন্তু যখন তারা সেখানে পৌঁছায়, তখন দেখে দরজা খোলা।
“এটা নিশ্চয়ই ওদেরই কাজ,” ইধিকা ফিসফিস করে বলে।
তারা ধীরে ধীরে ভিতরে ঢুকে দেখতে পায়, সেখানে মাটির নিচে একটা ছোট্ট গোপন দরজা রয়েছে। দরজাটা কোনোভাবে খোলা ছিল। ইধিকা ইশারা করে, “এই দরজাটার মধ্যেই হয়তো ওদের গোপন ঘাঁটি আছে। আমরা ভিতরে ঢুকতে হবে।”
তারা নিচে নামতেই একটা লম্বা করিডোর দেখতে পায়। সেই করিডোরের শেষ প্রান্তে তারা দেখতে পায় কয়েকজন লোক লুকিয়ে আছে, আর সেই লোকদের সামনে একটি বড়ো ব্যাগ। ব্যাগটা খুলতেই তারা দেখতে পায়, রিয়ার বাবার গবেষণার সমস্ত নথিপত্র রয়েছে সেখানে।
অষ্টম অধ্যায় : মুখোমুখি সংঘর্ষ
ইধিকা আর তার বন্ধুরা দ্রুত সেই গোপন ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ে, কিন্তু ঠিক তখনই তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায় চোরেরা। এক মুহূর্তের মধ্যে চোরের দল ইধিকা আর তার বন্ধুদের ঘিরে ধরে।
“তোমরা এখানে কীভাবে এলে?” একজন চোর ভয়ানক কণ্ঠে বলে।
ইধিকা তার সাহস জড়ো করে বলে, “আমরা তোমাদের চক্রান্ত ধরে ফেলেছি। পুলিশ আসতে আর বেশি দেরি নেই।”
চোরেরা হেসে উঠে বলে, “পুলিশকে ডেকে কিছুই হবে না। আমরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।”
ঠিক সেই সময়, পায়েল দ্রুত মোবাইলে পুলিশকে খবর দেয়। চোরেরা প্রথমে কিছু বুঝতে পারে না, কিন্তু তারপর বুঝতে পেরে তারা পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ইধিকার বুদ্ধির কাছে তারা হার মানে। ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ ততক্ষণে পুলিশকে যথেষ্ট তথ্য সরবরাহ করে দিয়েছে, আর পুলিশ এসে চোরেদের গ্রেফতার করে।
নবম অধ্যায় : শেষ পরিণতি
চোরেদের গ্রেফতারের পর, রিয়া আর আকাশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। রিয়া ইধিকার দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমাদের সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। তোমরা সত্যিই অসাধারণ গোয়েন্দা।”
ইধিকা হেসে বলে, “আমাদের কাজ ছিল রহস্যের সমাধান করা। তবে আমরা সবাই মিলে কাজ করেছি, সেটাই আসল।”
অনুরাগ বলে, “তবে আরেকটা কথা, রহস্যের সমাধান করার পরও নতুন রহস্যগুলো কোথা থেকে আসে, বুঝতে পারছি না।”
পায়েল মুচকি হেসে বলে, “জলপাইগুড়িতে রহস্য সবসময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য!”
তারা হাসতে হাসতে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। স্কুলের ক্লাসের নতুন বন্ধুত্ব, রহস্য, আর অভিযান তাদের জীবনে নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। আর ইধিকা জানে, এটা তো সবে শুরু।
শেষ