বিশেষ প্রতিবেদন, অরুণ কুমার, ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ : এখন প্রতিটি নির্বাচনে একশো শতাংশ ঝাঁপাতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। সংগঠন শক্তিশালী করা ও তার উপর ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকেও পাখির চোখ করে এগোচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। এক্ষেত্রে যুব তৃণমূলকে আরো বেশি গঠনমূলক ভূমিকা নিতে হবে বলে রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মনে করছেন।
পরবর্তী সময়ে পুরসভার নির্বাচনগুলি মিটে গেলে আগামী বছর পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে উঠবে সেক্ষেত্রে তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এ বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সূত্রের খবর আগামী দিনে যুব তৃণমূলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি অভিষেক এদিন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নামার রণকৌশলের নির্দেশ দিয়েছেন দলে। সূত্রের খবর, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব থেকে শুরু করে বড় প্রতিবাদের পথে নামতে চলেছেন যুবরাজের বাহিনী।
ইতিমধ্যেই একুশের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। সেটাকে ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। সংগঠন আরও মজুবত করতে হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সে কথা এর আগে সাংসদদের ভার্চুয়াল বৈঠকেও বলেছিলেন। আর যেটুকু অন্তর্কলহ আছে তা মিটিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে এর আগে, “এক ব্যক্তি এক পদ”কে ঘিরে সম্প্রতি দলের অন্দরে ঝড় উঠেছিল। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো নানা চর্চা শুরু হয়েছিল। এরপরই কমিটি কার্যত ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর জল্পনা একেবারে তুঙ্গে ওঠে। এদিকে তৃণমূল ইতিমধ্যেই জাতীয় রাজনীতিতে পা ফেলতে শুরু করেছে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতীয় রাজনীতির রাশ কে ধরবেন, কতটা সংগঠিত হবে এই কমিটি তা নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠে। তবে শুক্রবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে একেবারে গুছিয়ে কমিটি তৈরি করলেন মমতা।

এর আগে নানা জল্পনা চলেছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে। দলের অন্দরে তাঁর অবস্থান ঠিক কী হবে তা নিয়ে নানা কথা উঠেছিল দলের অন্দরে। আর শুক্রবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ফের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে বসানো হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। সূত্রের খবর, বৈঠকের আগে মমতা ও অভিষেকের মধ্যে একান্তে কথা হয়। বৈঠকে অভিষেকের উপরেই আস্থা রাখলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো।
জানা গিয়েছে, গোয়া, উত্তরপ্রদেশ, ত্রিপুরা, হরিয়ানা থেকেও একাধিক প্রতিনিধি এদিন হাজির ছিলেন বৈঠকে। তবে শেষ পর্যন্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রেখেই তৈরি হল কমিটি। সবার উপরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো রয়েছেনই, তবে অভিষেককে রেখেই আবর্তিত হবে জাতীয় রাজনীতি, এটাও কার্যত নির্ধারিত করা হল এদিন। পাশাপাশি ফিরহাদ হাকিমের গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে এদিন। কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জাতীয় রাজনীতির মধ্যে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করবেন ফিরহাদ হাকিম।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে কিছুদিন আগে, এক ব্যক্তি এক পদ নীতির সপক্ষে প্রকাশ্যেই সওয়াল করেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এ নিয়ে তুমুল জলঘোলা হয়, এরপর কানাঘুষো শোনা যায়, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে চলেছেন অভিষেক। কিন্তু সম্প্রীতি তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষে সব জল্পনার অবসান ঘটে,বহাল রইলেন অভিষেকই। স্বল্প দিনের ব্যবধানে তাঁর পুরনো পদেই ফিরলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের নতুন ওয়ার্কিং কমিটিতেও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব তাঁকেই দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, খুব স্বাভাবিক নিয়মে আর পাঁচ জনের মতো যখন অভিষেকের পদ চলে যায়, তখন দলের মধ্যে ও রাজনৈতিক মহলে এক শ্রেণির মধ্যে যুদ্ধজয়ের আনন্দ ছিল। কেউ কেউ এও দাবি করতে শুরু করেছিলেন যে অভিষেককে চাপে রাখতে দলে একাধিক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করতে পারেন দিদি। অভিষেকের আলাদা করে বিশেষ মর্যাদা যাতে না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই সেই ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আবারও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুধু সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব দেওয়া হল শুধু তাই নয়, জাতীয় স্তরে সাধারণ সম্পাদকের পদ আর কাউকে দেওয়া হল না। অর্থাৎ ওই পদে অদ্বিতীয় থাকলেন অভিষেক।
এখন দেখার বিষয় আগামী দিনে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নতুন প্রজন্মকে দিশা দেখানোর পাশাপাশি দলকে কিভাবে রাজ্যের তথা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কতটা গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
Photo Credit- Facebook