জলপাইগুড়ির বর্তমান পুর বোর্ডকে মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গে তুলনা শহরবাসীর

পিনাকী রঞ্জন পাল – জলপাইগুড়ির বর্তমান পুরবোর্ডের কাজকর্ম নিয়ে কি হতাশ জলপাইগুড়ি শহরবাসী? টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি এবং কিছুদিন পর নজিরবিহীনভাবে সেই বর্ধিত ভাড়া কমানোর পর শহরবাসীর প্রতিক্রিয়া তেমনিই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমনকি জলপাইগুড়ির বর্তমান পুর বোর্ডকে মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গেও তুলনা করেছেন শহরবাসী।


গত ১ জুন থেকে পুরসভা হঠাৎই জলপাইগুড়ি শহরে টোটোর ন্যুনতম ভাড়া ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করে। যদিও এই রাজ্যের আর কোথাও টোটোর ন্যুনতম ভাড়া ১৫ টাকা বলে আমাদের জানা নেই। বরং জলপাইগুড়ির থেকে অনেক বড় বড় শহরে টোটোর ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকা এমনকি অনেক শহরে ৫ টাকাতেও টোটো চড়া যায়। পুরসভা জানায়, ১ জুন থেকে টোটোতে উঠলে প্রথম দুই কিমি যেতে যাত্রীকে ১৫ টাকা দিতে হবে। এরপর প্রতি কিমি ৫ টাকা করে ভাড়া বাড়বে। উল্লেখ্য, এরআগে শহরে টোটোর ন্যুনতম ভাড়া ছিল ১০ টাকা। তবে টোটো চালকরা বেশি দূরে গেলে যাত্রীদের সাথে কথা বলে বেশি ভাড়াও নিত। তবে ১ জুন থেকে টোটো ভাড়া ১৫ টাকা হওয়ায় প্রথমত খুচরো ৫ টাকা নিয়ে টোটোচালক ও যাত্রীদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় যাত্রীদের ১৫ টাকার পরিবর্তে খুচরো না থাকায় ২০ টাকা দিতে হয়েছে, আবার কখনো ওই একই সমস্যায় টোটোচালককে ১৫ র পরিবর্তে ১০ টাকাও নিতে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পুরসভা কিমি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করলেও কিমি মাপার ভাড়া মিটার লাগানোর নির্দেশ দেয় নি। ভাড়া বৃদ্ধির এই অস্বচ্ছতার জন্য টোটোচালক ও যাত্রীদের মধ্যে বচসা লেগে যাচ্ছিল প্রায় সময়। তাই শহরবাসীরা টোটোর এই ভাড়া বৃদ্ধির বিপক্ষে ছিলেন এবং এই নিয়ে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সরব হয়েছিলেন। পাশাপাশি পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ভাড়া বৃদ্ধি গ্রামাঞ্চলের টোটো চালকদের শাসকদলের ভোট ব্যাঙ্ককে শক্তিশালী করার একটা প্রয়াস বলেও অনেকের ধারণা ছিল। কারন জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের টোটো চালকরা রি শহরে টোটো চালিয়ে তাদের রুটিরুজির সংস্থান করে থাকেন।

উল্লেখ্য, জলপাইগুড়ি শহরে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজারের মতো টোটো দৈনিক চলাচল করে। আর এর অধিকাংশ টোটোই আসে আশেপাশের গ্রাম থেকে। এরফলে শহরে নিত্য যানজট লেগেই আছে। শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটাই দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।জলপাইগুড়ি এখন টোটোগুড়িতে পরিণত হয়েছে। পুরসভা দীর্ঘদিন থেকেই শহরে টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলে আসছেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এখনো তেমন কোন ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ পুরসভা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে টোটোর ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি টোটো নিয়ন্ত্রণে শহরে ঢোকার মুখে ১৯টি গেট করে পুলিশ দিয়ে শহরে নির্দিষ্ট ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টোটো চলাচল করবে বলেও জানিয়েছিল। কিন্তু ভাড়া বৃদ্ধি হলেও টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় নি।

এরপর গতকাল ৮ আগস্ট পুরসভা টোটো ইউনিয়ন, পুলিশ প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় শহরে টোটোর ন্যুনতম ভাড়া হবে প্রথম এক কিমি ১০ টাকা। এরপর প্রতি কিমি ৫ টাকা করে ভার্স বৃদ্ধি পাবে। টোটোর ন্যুনতম ভাড়া কমায় খুশি শহরবাসী। কিন্তু এরপরেও টোটোর ভাড়া নিয়ে জটিলতা থেকেই যায়। পুরসভার দূরদর্শীতার অভাবের জন্য। কিমি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করার পরেও পুরসভা টোটোতে ভাড়া মিটার বসানোর মন নির্দেশ দেয় নি। ফলে কিমি নির্ধারণ করা নিয়ে টোটোচালক ও যাত্রীদের মধ্যে বচসা সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। কারন নির্দিষ্ট জায়গা উল্লেখ করে কিমি নির্ধারণ করে ভাড়া উল্লেখ করাটা অসম্ভব। এরআগেও পুরসভা ভাড়া বৃদ্ধির সময় ভাড়ার চার্ট দেবে বলে জানিয়েছিল, কিন্তু সেই চার্ট টোটো চালকদের হাতে এসে পৌঁছায় নি। তাই এর সবচেয়ে সহজ উপায় হল ভাড়া মিটার লাগানো।

আগামী ১৫ আগস্ট থেকে পুনরায় ১০ টাকা টোটো ভাড়া হবে বলে জানিয়েছেন পুরমাতা পাপিয়া পাল।
এনিয়ে শহরের সাধারন মানুষের কিছু বক্তব্য এ আর তুলে ধরলাম।

সমীর দাস লিখেছেন – পুরসভা দয়া করে রিক্সার মতো টোটোর নং দিলে জনসাধারণের সুবিধা হবে।

অভিরাজ কর দুটো প্রশ্ন রেখেছেন পুরসভার কাছে – ১) টোটো ব্যটারিচালিত যান, এর ভাড়া মিউনিসিপ্যালিটি কি ঠিক করতে পারে ? ২) কিলোমিটারটা মাপবে কে ?

রঞ্জিত ধর লিখেছেন – কিলোমিটার মাপার মেশিন লাগানো অবশ্যই কর্তব্য এবং রুট ভাগ হলে খুব ভালো হয়, তাতে সবারই সুবিধা হবে।

মনোজ কুমার সরকারও একই কথা লিখেছেন – কিলোমিটার মাপার উপযুক্ত ব্যাবস্থা টোটোগুলোতে থাকবে কি?

গোবিন্দ মোদক লিখেছেন – এর থেকে কি হলো???!!!! ভাড়া কমলো কোথায়????!!! মিটিং সিটিং ওইসব চার দেওয়ালের ভিতর আর দুদিনের জন্য খবরেই থাকবে। বাইরে এসব কথা কে শুনছে??? টোটোচালকদের এসব কথা বলে আমাদেরই ভুক্তভোগী হতে হয়, তখন কোনো প্রশাসনের দেখা পাওয়া যায় না

কমল দাস টোটোর ভাড়া বৃদ্ধির পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তুলে ধরে লিখেছেন – ভোটের আগে ১৫, ভোটের পর ১০। সত্যিই কি সুন্দর উন্নয়নের কাজ করছে। বোঝ এবার টোটো বন্ধুরা যারা লাফিয়ে লাফিয়ে ভোট দিয়েছিস।

নির্মল দাস কটাক্ষ করেছেন- অযোগ্যদের হাতে পুরসভা চলছে l যোগ্য লোকগুলো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য আজ পিছনসারিতে l কলকাতা কর্পোরেশনের পার্কিং ফি বাড়াবার জন্য বর্তমান মেয়র ভৎসিত হয়েছিল l তারপর জলপাইগুড়ি পুরসভা কোন নীতিতে কোন আদর্শে টোটো ভাড়া বাড়িয়েছিল জনগণকে অসুবিধায় ফেলে l কোটি টাকা খরচা করে SJDA শহরের সৌন্দর্যায়ন , নালা এবং ফুটপাত বানিয়ে ছিল; কোথাও কোথাও সেগুলিকে পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হলো l কেন ? জনগণের করের টাকা এভাবে নষ্ট করা হলো ? পুরসভা কখনো বিন তুঘলক হতে পারে না l

সুব্রত সরকার পুরসভার এই খামখেয়ালিপনার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন – অকারণে বাড়ায় বা কেন এবং কমায় বা কেন। একটু চিন্তা ভাবনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয় না।

সুজন সাহা লিখেছেন- টোটোর রুট করে দিলে ভালো হয়।

জলপাইগুড়ি পুরসভার টোটো ভাড়া নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত

সুমন দাস লিখেছেন- কদিন ফুটপাত নিয়ে খুব মাতামাতি করল এখন আবার আগের মতনই দখল। টোটো ভাড়াও ঐ একই থাকল উঠলেই ১৫; কারন মিটার কোথায়?

বিপুল দাস আবার একটু অন্যভাবে বিষয়টি ভেবে লিখেছেন – পুরসভা রাস্তা ড্রেন করছে না, ট্যাক্স টা কমিয়ে দিন।

জলপাইগুড়ি শহরে পুর সরকারের টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে একমত নয় শহরবাসী

দীপ বর্মনের মতে আবার টোটো ভাড়া প্রথম ২ কিলোমিটার ১০ টাকা হওয়া উচিত। তিনি লিখেছেন, কারণ, টোটোর মালিক Domestic line ব্যবহার করে টোটো charge করেন। Commercial line কারো বাড়িতে নেই। আর, যেহেতু টোটো commercial কাজে ব্যবহার হচ্ছে, তাই আমরা এতো ভাড়া দেবো কেন..?

ঋত্বিক কর্মকার আবার টোটোর বাড়বাড়ন্তের কারন হিসাবে মনে করছেন, কারণটা হছে আমাদের দিদি চাকরি দিতে পারছে না তাই টোটো দিয়ে সেই খামতি তা কমাতে চাইছে।

সুশান্ত সূত্রধর লিখেছেন, শহরের রাস্তায় যেভাবে টোটোগুলো চলে তাতে মনে হয় ওরাই রোড ট্যাক্স দিয়েছে, যেসব যানবাহনগুলো রোড ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের চলার অসুবিধা হছে তাই টোটোরও রোড ট্যাক্স হওয়া উচিত এবং প্রতেক টোটোর কিলোমিটার ঠিক থাকা জরুরি। জায়গা বুঝে ভাড়া নেওয়া চলবে না। যারা নিছে তাদের পৌরসভা কি পদক্ষেপ নেবে বা তাদের কে বোঝাবে, হারাস তো হছে সাধারন মানুষ।

জলপাইগুড়ি নিউজ ওয়েবসাইটে লেখা পাঠান
contact@jalpaigurinews.in

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *