অরুণ কুমার : রাজ্যে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনকারী চাষীদের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরতে এবার অধিকার যাত্রা কর্মসূচি নিতে চলেছে এক কৃষক সংগঠন জয় কিষান আন্দোলন।

পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের সব ফসলের এমএসপি পাওয়ার অধিকার, রাজ্যে সেই সম্পর্কিত আইন লাগু করা এবং অন্যান্য সংযুক্ত দাবিতে বরাবরই সরব জয় কিষাণ আন্দোলন। এবার রাজ্যের কৃষকের ভুট্টা সহ সব ফসলের এমএসপি পাওয়ার দাবিতে ১০ দিন ব্যাপী “এমএসপি অধিকার যাত্রা”–র ডাক দিয়েছে জয় কিষাণ আন্দোলন। আগামী ২১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৩০ এপ্রিল, ২০২২ অবধি এই যাত্রা চলবে। উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর ১ ব্লকের খাগর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু হয়ে গোয়ালপোখর গ্রাম পঞ্চায়েতে শেষ হবে। যাত্রা মোট তেরটি গ্রাম পঞ্চায়েতের শতাধিক গ্রাম অতিক্রম করবে। যাত্রায় ভুট্টা চাষিদের দুর্দশার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করে, (১) প্রধানমন্ত্রী, (২) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, (৩) উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক ও (৪) ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারদের দাবিপত্র পেশ করা হবে।
এই যাত্রার প্রেক্ষিতে জয় কিষাণ আন্দোলনের সর্বভারতীয় সভাপতি অভীক সাহা জানিয়েছেন, “সরকারী কোন দয়া দাক্ষিণ্যমূলক যোজনার মাধমে নয়, কৃষক কে সব ফসলের এমএসপি’র আইনী অধিকার দিতে হবে। এই দাবিতে সাড়া দেশের কৃষক লড়াই করছে। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও রাজ্যে লাগু করার জন্য একটি খসড়া আইন বানিয়ে বিবেচনা করার জন্য পেশ করা হয়েছে। বহুদিন হয়ে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী নীরব আছেন। মুখ্যমন্ত্রী এই অত্যাবশ্যক দাবি কেন মানছেন না তা বোধগম্যের বাইরে। একদিকে উনি বলছেন উনার সরকার কৃষক-দরদি কিন্তু ওপর দিকে উনি কৃষকদের আয় সুনিশ্চিত করার আইন প্রণয়ন ও কার্যকরী করতে নারাজ। বাংলার চাষিদের নিয়ে উনি ছিনিমিনি খেলছেন। এই বিষয়ে শীঘ্রই রাজ্য ব্যাপী কর্মসূচি নিতে চলেছে জয় কিষাণ আন্দোলন।”
এ বিষয়ে জয় কিষাণ আন্দোলনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি প্রবীর মিশ্র বলেছেন, “রাজ্যে কৃষকের সব ফসলের এমএসপি ঘোষণা করতে হবে ও কৃষক যাতে এমএসপি পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সরকারি মিথ্যাপ্রচার হয়েছে। কৃষক আর কথা শুনতে নারাজ – এবার সরকারের কাজ দেখতে চায়।”
এদিকে সংগঠনের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি শম্ভূলাল রায়ের বক্তব্য “কেন্দ্রীয় সরকার এই মরশুমে ভুট্টার জন্য কুইন্টাল প্রতি ১৮৭০ টাকা এমএসপি ঘোষণা করেছে। ভুট্টা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত হয়ে উত্তরবঙ্গের কৃষকরা ব্যাপকহারে ভুট্টা চাষ করে এখন বিপদে পড়েছে। কারণ বিক্রির সময় কোন সরকারই পাশে থাকছে না সেই সঙ্গে পাইকার ও ফড়েরা বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। তাদের বাজারী কৌশলে কৃষককে অনেক কমদামে লোকসানে ভুট্টা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এর প্রতিকারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জয় কিষান আন্দোলন দাবি করেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার সব ব্লকে সরকারী ক্রয় কেন্দ্র খুলে সব চাষিদের থেকে সরাসরি এমএসপি দরে তাদের পুরো ভুট্টা ফসল কিনতে হবে, ক্রয় কেন্দ্রগুলিতে যথেষ্ট কর্মচারী ও টাকা- পয়সা দিতে হবে যাতে সব চাষিরা সুষ্ঠুভাবে তাদের পুরো ভুট্টা ফসল এমএসপি দরে সরকারকে বিক্রি করতে পারে। দাবি পূরণ না করা হলে দাবি আদায়ের জন্য বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে চলেছে বলে এই কৃষক সংগঠনের সর্ব ভারতীয় সভাপতি অভিক সাহা জানিয়েছেন।