“এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলার জন্য প্রথম পুরস্কার পাবেন” জলপাইগুড়িতে বললেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (ভিডিও সহ)

“এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলার জন্য প্রথম পুরস্কার পাবেন। পুরসভা ভোট বেশিরভাগ মিউনিসিপ্যালিটিতে গণতন্ত্রে ভোট বলতে যা বোঝায় সেরকম ভোট হয় নি। সিপিএমের অন্তর্জলি যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। সাময়িকভাবে তৃণমূলের পাম্প দেওয়াতে কিছুটা ভোট বেড়েছে। সিপিএম বা বামফ্রন্টের ক্ষেত্রে তো আমরা দেখেছি দেহত্যাগ না করলে কেউ পদত্যাগ করে না। জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো নেতারা জামা প্যান্ট ছাড়া সঙ্গে কাউকে নিয়ে যেতে পারেন না”- সুকান্ত মজুমদার।

“এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলার জন্য প্রথম পুরস্কার পাবেন” শুক্রবার জলপাইগুড়িতে এসে এমনই কটাক্ষ করলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এদিন দুপুরে ডি বি সি রোডের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন সুকান্ত বাবু। মাল ও ময়নাগুড়ির দলের কর্মীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে জলপাইগুড়ি আসেন সুকান্ত বাবু। মালের একমাত্র বিজয়ী বিজেপি প্রার্থী কে সংবর্ধনা দেন তিনি। সুকান্ত বাবুর ভাষায়, “মালে আপনারা জানেন যে এত অন্যায় অত্যাচারের পরেও আমাদের একজন কর্মী সেখানে জয়লাভ করেছেন তাকে সংবর্ধনা দিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা আসি।” সেখানে আবির খেলার পাশাপাশি উপস্থিত নেতৃত্ব একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান। পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পেগাসাস ইস্যু নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই মিথ্যা কথা বলছেন যে তাকে প্রথম পুরস্কার দেওয়া উচিত। যে পেগাসাস নিয়ে এত হৈচৈ করছে তৃণমূল, দেশে প্রথম এই  রাজ্যেই প্রথম এসেছিলো এই প্রযুক্তি দাবি করলেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি আরো বলেন, ফোনে আড়ি পাতার প্রযুক্তি প্রথম এই রাজ্যেই আসে এবং আজও সেই প্রযুক্তি যে কাজ করছে তার প্রমানও তিনি নিজেই একটি প্রশাসনিক বৈঠকে বুঝিয়ে দিতে গিয়ে এক জেলার পুলিশ সুপারকে সরাসরি বলেই বসেছিলেন , আপনাকে কি রাজ্যপাল ফোন করে। সুকান্ত বাবুর ভাষায়, “স্বাধীনতার পর থেকে যদি ভারতবর্ষের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় যে কে বেশি মিথ্যা কথা বলতে পারবে, মানে পাল্টিবাজ। একসময় এককথা বলে পরক্ষনে অন্য কথা বলে। তাহলে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নির্ধিধায় সেখানে প্রথম পুরস্কার পাবেন। উনি কিছুদিন আগে পেগাসাস কাণ্ড নিয়ে নিজের ফোনটা দেখিয়ে বলেছিলেন যে ক্যামেরাটা উনি একটা ব্রাউন টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছিলেন যাতে ক্যামেরাও নাকি অন হয়ে যেতে পারে। এখন দেখবেন ফোনটা। কিছুদিন আগে একটা সাক্ষাৎকারে ফোনটা ভুল করে হাতে নিয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। সেই ফোনে দেখতে পাচ্ছি আর ব্রাউন টেপ লাগানো নেই। তাহলে আগে ওনাকে বলতে হবে ভোটের সময় কেন ব্রাউন টেপ লাগাতে বলেছিলেন আর এখন কেন সেই ব্রাউন টেপ ক্যামেরা থেকে খুলে ফেলেছেন। পশ্চিমবঙ্গ হচ্ছে সেই রাজ্য যারা প্রথম পেগাসাস আনে এবং সেই পেগসাস আনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের একজন বিতর্কিত পুলিশ অফিসার দুবার বিদেশে যান। একবার জার্মানিতে যান, একটা ইন্টারন্যাশনাল সেমিনারে যোগ দিতে। যেখানে পেগাসাস সম্পর্কে বলা হয়। তারপর ইজরায়েলে যান। আমাদের কাছে সব খবর থাকে। ভারতবর্ষের প্রথম রাজ্য যারা পেগসাস কিনেছিল তারা হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পেগাসাস অবশ্যই আছে এই সরকারের কাছে । মুখ্যমন্ত্রী আড়ি পাতেন এসপির ফোনে আড়িও পাতেন।”

The state chief minister will get first prize for lying, "said BJP state president Sukant Majumder in Jalpaiguri.

সদ্যসমাপ্ত হওয়া জলপাইগুড়ি সহ রাজ্যের পুরভোট নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে একাধিক তোপ দাগেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, “পুরসভা ভোট বেশিরভাগ মিউনিসিপ্যালিটিতে গণতন্ত্রে ভোট বলতে যা বোঝায় সেরকম ভোট হয় নি। এক, পুরোনো এম ওয়ান ইভিএম দিয়ে ভোট করানো হয়েছে। যেখানে এম থ্রী ইভিএম বেড়িয়ে গেছে। সেন্ট্রাল বাহিনী বারবার চেয়েও সেই সেন্ট্রাল বাহিনীর ব্যাবস্থা কমিশন করতে পারে নি। কমিশন সিসি টিভি ফুটেজ প্রসঙ্গে কোর্টে বলেছে , সিসি টিভি ফুটেজ দেখা বা বিশ্লেষণ করার পরিকাঠামো তাদের নেই। এরকম বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আপনারা দেখেছেন এর আগেও শুধু এই পুরসভাগুলো ছেড়ে দিন না। আপনি কলকাতার মতো জায়গায় যেখানে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী। সেখানে একজন মৃত বিখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী যিনি তিন চার বছর আগে মারা গেছেন তারও ভোট পরে গেছে। স্বাভাবিকভাবে কি ধরনের নির্বাচন হয়েছে সেটা আমরা সবাই জানি। আগামী দিনে যখন সেন্ট্রাল বাহিনী এবং উন্নততম ইভিএম দিয়ে ভোট হবে তখন দেখবেন রেজাল্ট সম্পূর্ণ উল্টো হবে।”

সিপিএমের নতুন রাজ্য কমিটি গঠন প্রসঙ্গে সুকান্ত বাবুর কটাক্ষ, “সিপিএমের অন্তর্জলি যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। এখন কাকে আনলেন কাকে না আনলেন সেগুলোতে খুব একটা হেরফের হবে বলে মনে হয় না। সাময়িকভাবে তৃণমূলের পাম্প দেওয়াতে কিছুটা ভোট বাড়ছে। তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দেওয়াতে। কিন্তু যখন লোকসভা নির্বাচন বা বিধানসভা নির্বাচনে র মতো বড় নির্বাচন আসবে তখন দেখবেন সিপিএম মুখ থুবড়ে পড়েছে।” এটা কি আগে করা উচিত ছিল? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “তাদের দলের ব্যাপার। কাকে করবেন না করবেন। সিপিএম বা বামফ্রন্টের ক্ষেত্রে তো আমরা দেখেছি দেহত্যাগ না করলে কেউ পদত্যাগ করে না। তা সেরকম ট্র্যাডিশন তারা বজায় রেখেছে।”

অপরদিকে জলপাইগুড়ি শহরে চুরি ছিনতাই,আইন শৃঙ্খলার অবনীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখানে আসার সময় সাংসদ জয়ন্ত রায়ের থেকে আমি শুনছিলাম যে এখানে চুরির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। যে কিষান রেল জয়ন্ত রায় এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখান থেকে তৈরি হয়েছিল সেই কিষান রেলেরও কিছু যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার। এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের ডাক্তারবাবু সাংসদ জয়ন্ত কুমার রায় জেলার এসপির সাথে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছিলেন কিন্তু এসপি সেই সময়টুকুও দেন নি তাকে, তিনি এতই ব্যস্ত, কি কাজে ব্যস্ত তা আমরা জানি না। তিনি চিঠি পাঠিয়ে দিতে বলেছেন। তাই সাংসদ হিসাবে জয়ন্ত বাবু এসপিকে চিঠি পাঠাবেন।”

বিজেপি নেতারা দল ছেড়ে দিচ্ছেন কেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে বিজেপি রাজ্য সভাপতির জবাব ছিল, “জয়প্রকাশ মজুমদারের কথা বলছেন তো। জয়প্রকাশ বাবু যখন গেছেন তখন ওনার সাথে ওনার গাড়ির ড্রাইভারও গেছেন কিনা সন্দেহ আছে। এই নেতারা কোন দলে থাকলেন কোন দলে গেলেন তা নিয়ে কেউ ভাবে না, এরা জামা প্যান্ট ছাড়া সঙ্গে কাউকে নিয়ে যেতে পারেন না। একটা ভোটও নিয়ে যেতে পারেন না। তো সেই নেতাদের নিয়ে চিন্তা করলে হবে।”

জেলা পার্টি অফিস থেকে তিনি এদিন উকিল পাড়ায় নিজের শ্বশুরবাড়িতে যান পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

অন্যদিকে, জলপাইগুড়িতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি আসা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *