এক নারীর সাফাই কর্মী থেকে ব্যাঙ্কের AGM হয়ে ওঠার কাহিনী

ডিজিটাল ডেস্ক : ছিলেন ব্যাঙ্কের সুইপার। ঝাড়ু দিয়ে ব্যাঙ্ক পরিস্কার রাখাই ছিল তার কাজ। ৩৭ বছর পর ব্যাঙ্কের এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার বা এজিএম হিসেবে যোগ দিয়ে সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছেন এক নারী। আজ আপনাদের এমন একজনের সাথে পরিচয় করাতে চলেছি যিনি একেবারে নীচুতলার কর্মী থেকে সোজা শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছেছেন।

বলা হচ্ছে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা প্রতীক্ষা টন্ডওয়ালকারের (Pratiksha Tondwalkar) কথা। ১৯৬৪ সালে পুনের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া প্রতীক্ষার গোটা জীবনটাই কেটেছে সংগ্রামের মধ্যে। তার জীবনের চিত্রনাট্যের কাছে হার মানবে সিনেমার চিত্রনাট্যও। দারিদ্র্য পীড়িত পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় বেশীদূর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর ছাড়তে হয় পড়াশুনা। স্বামী সদাশিব কুডু এসবিআইয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন। বিয়ের মাত্র চার বছর পর একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সদাশিবের। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। এরপর এসবিআইয়ের নিয়মে ওই ব্যাঙ্কে সুইপারের চাকরি পান প্রতীক্ষা। সেখানে তিনি ব্যাঙ্কের থেকে মাসিক ৬৫ টাকার বিনিময়ে যুক্ত হন সাফাইকর্মী হিসেবে। সেসময় প্রতীক্ষা দেবীর মাত্র ২০ বছর বয়স।

বরাবরই পড়তে ভালোবাসতেন তিনি। বিপদের দিনে কয়েকজন শুভাকাঙক্ষীর সহযোগিতায় পড়াশুনা শুরু করেন তিনি। স্বামীর ব্যাঙ্কের কর্মীরাও সাহায্য করেন প্রতীক্ষাকে। তাই সুইপারের দায়িত্ব পালন শেষে বাকি সময় পড়াশুনা করতে থাকেন তিনি। সে সময় তার কাছে বই কেনার টাকাও ছিল না। আত্মীয়দের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তেন। এভাবে ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করে নাইট কলেজে ভর্তি হন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর নিয়োগ পান ক্লার্ক হিসেবে। দূর হয় অর্থকষ্ট। কিন্তু প্রতীক্ষার স্বপ্ন ছিল আরও বড়।

তাই আরও পড়াশুনার জন্য ১৯৯৫ সালে মুম্বাইয়ের ভিখরোলি কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক হন প্রতীক্ষা। অবশ্য এরই মধ্যে প্রতীক্ষার জীবনে আসে ব্যাঙ্ককর্মী প্রমোদ টন্ডওয়ালকার। ১৯৯৬ সালে তাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন প্রতীক্ষা। মূলত প্রমোদের উত্‍সাহে আরও সামনে এগোনোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তিনি ২০০৪ সালে ট্রেইনি অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।এরপর নানা ধাপ পেরিয়ে ২০২০ সালের জুন মাসে মুম্বাইয়ে স্টেট ব্যাংকের একটি ব্রাঞ্চে এজিএম হিসেবে যোগ দেন তিনি। তার এই জয়যাত্রা অনুপ্রাণিত করবে দেশের লাখো তরুণ তরুণীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *