দোলের গল্প : “দোলের রঙে জীবন”

দোলের রঙে ভেসে থাকা তিস্তা পাড়ে কমল আর তৃষার বন্ধুত্বের গল্প – যেখানে রঙ শুধু উৎসব নয়, নতুন জীবনের সূচনা, লিখেছেন পিনাকী রঞ্জন পাল।

অধ্যায় ১: বসন্তের ডাক

তিস্তা পাড়ের এই শহরের বসন্ত যেন এক অন্যরকম জাদু নিয়ে আসে। শহরের রাস্তা জুড়ে নানা ধরনের ফুলের গন্ধ ভাসে। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা তিস্তা নদীর জলে প্রতিফলিত হয় আকাশের রঙ। বকুল আর কদম ফুলের গন্ধ মিশে থাকে বাতাসে। রোদ পড়ে আসার সময়ে আকাশে একটা কমলা আভা ছড়িয়ে পড়ে, যেন প্রকৃতিও সেজে উঠেছে দোলের রঙে।

এই বসন্তই যেন নতুন আশার বার্তা নিয়ে আসে শান্তিপুর বস্তির শেষ প্রান্তে থাকা পুরনো একতলা বাড়ির বাসিন্দা কমল আর তার মা মায়া-র জীবনে। সেই বাড়ির পলেস্তারা খসে পড়েছে বহু আগে। জানলার কাঠগুলো ধুলো জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে। তবুও সেই ছোট্ট বাড়িটা মায়ার যত্নে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। মায়া একটা চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালান। সকালবেলা দোকান খুলে চায়ের জল গরম করতে করতেই তিনি ভাবেন, “কমলের জন্য আর কত দিন এমন করে সব কিছু সামলাতে পারব?”

কমল ক্লাস টেনে পড়ে। পড়াশোনায় মাঝারি, কিন্তু তার মন পড়ে থাকে অন্য জায়গায়। সে রং-তুলি আর উৎসবে মেতে থাকতে ভালোবাসে। ছোটবেলাতেই বাবা হারানোর পর থেকেই কমলের মনের ভেতর এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। মায়া চেষ্টা করেন ছেলের শূন্যতা ভরাট করতে, কিন্তু সবসময় তা সম্ভব হয় না।

প্রতি বছর দোল এলেই কমলের মন যেন একেবারে নতুন করে বাঁচতে শেখে। পাড়ার ছেলেমেয়েদের নেতৃত্ব দেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা তার মধ্যে আছে। কমলের বিশ্বাস, দোলের রঙে সব ব্যথা মুছে যাবে।

“মা, এইবার আমরা সবাই মিলে তিস্তার স্পারে বড় করে দোল করব। খোকনদা বলেছে ওর ক্লাব থেকে বড় করে সাজানো হবে। সবাই নতুন জামা পরবে, পিচকারি, আবির থাকবে – সব হবে।”

মায়া চায়ের পাত্রে চামচ ঘুরিয়ে হাসলেন। “তা তো হবে। কিন্তু তুই তো জানিস, আমাদের পয়সা কম – এইবার কিছু করতে হলে তো পকেট থেকে বের করতে হবে।”

কমল জানে, তাদের অবস্থার কথা। কিন্তু সে বিশ্বাস করে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হবে। হাসিমুখে বলল, “সব ঠিক হয়ে যাবে মা।”

মায়া এক মুহূর্ত ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন। চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক। ছেলেটা বড় হয়েছে। মায়া ভেতরে ভেতরে ভাবলেন, এই ছেলেটাই হয়তো একদিন সমস্ত অন্ধকার থেকে আলো আনবে।

শহরের ধনী এলাকার এক বিশাল পাকা বাড়িতে থাকেন বসন্তবাবু। বসন্তবাবু স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার নামের সঙ্গে এই ঋতুর অদ্ভুত মিল। তিনি কঠোর শৃঙ্খলার মানুষ, সময়নিষ্ঠ ও নিয়মানুবর্তী। বসন্তবাবু শিক্ষকদের মধ্যে সেরা হলেও, ব্যক্তিগত জীবনে তার ভেতরে গভীর শূন্যতা আছে।

তার একমাত্র মেয়ে তৃষা ক্লাস নাইনে পড়ে। তৃষা শান্ত স্বভাবের, পড়াশোনায় বরাবরই ভালো। কিন্তু এই বছর দোলটা তার কাছে অন্যরকম। বছর খানেক আগে তার মা মারা গেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই তৃষার মুখের হাসি যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। তৃষা স্কুলে যায়, পড়াশোনা করে, কিন্তু তার চোখে আর আগের ঝিলিক নেই।

বসন্তবাবু জানেন, মেয়েটার ভেতরে গভীর এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তিনি কীভাবে সেই শূন্যতা পূরণ করবেন তা বুঝতে পারেন না। মেয়ের মন খারাপের কথা ভাবলে বসন্তবাবুর বুকের মধ্যে যেন একটা ভারি পাথর চেপে বসে।

তৃষা মাঝে মাঝে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। পাড়ার ছেলেমেয়েরা খেলছে – এইসব দেখে তার ভালো লাগে, কিন্তু সে নিজে কখনও মিশে যেতে পারে না। সামনেই দোল। মা থাকলে হয়তো এবারের দোলটা অন্যবারের মতো হত। মা তৃষার মাথায় আবির মাখাতেন, হাত ধরে মাঠে নিয়ে যেতেন, পিচকারি দিয়ে জল ছিটিয়ে দিতেন। কিন্তু এখন সবই ফাঁকা।

তৃষা জানে বাবা তাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু বাবার চোখে এক অদ্ভুত কঠোরতা আছে, যা মায়ের স্পর্শময় ভালোবাসার অভাব পূরণ করতে পারে না।

“তৃষা,” বসন্তবাবু ডাক দিলেন। তৃষা ধীরে ধীরে বাবার দিকে তাকাল। “এবার দোলের দিন পাড়ার ক্লাবে যাবে?”

তৃষা একটু অবাক হলো। “আমি তো কখনো যাই না বাবা।” বসন্তবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, “যাও না। এইবার একটু আনন্দ করো।”

তৃষা অবাক হয়ে বাবার মুখের দিকে তাকাল। বসন্তবাবু বুঝলেন, মেয়ের মুখে হাসি আনতে গেলে তাকে আরেকটু নরম হতে হবে।

অন্যদিকে কমল তার বন্ধুদের নিয়ে তিস্তার স্পারে সাজানোর কাজ শুরু করেছে। বাঁশের খুঁটি বসানো হচ্ছে। বড় বড় কাপড়ের ফেস্টুন টাঙানো হচ্ছে। কমল খোকনদাকে বলল, “এইবার দোল হবে ঐতিহাসিক। এমন কিছু করব, যা শহরের লোকেরাও মনে রাখবে।” খোকনদা হাসল, “তোর কথায় জোর আছে রে কমল!”

অধ্যায় ২: বন্ধুত্বের শুরু

সেই দিনটা ছিল বসন্তের এক রৌদ্রজ্জ্বল দুপুর। স্কুল ছুটির পর ক্লান্ত তৃষা ধীরে ধীরে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল। মাথার ওপর সূর্যের তাপ ততটা তীব্র ছিল না, কিন্তু বসন্তের বাতাসে এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছিল। রাস্তার পাশে শাল আর কৃষ্ণচূড়ার ফুল গায়ে পড়ে থাকা রোদের সঙ্গে মিশে ঝরে পড়ছিল। পায়ের নিচে শুকনো পাতার মচমচে শব্দ হচ্ছিল। তৃষার মাথায় তখন ক্লাসের পড়া আর বাবার কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছিল।

তৃষা সাধারণত স্কুল থেকে সরাসরি বাড়ি চলে যায়। রাস্তায় খুব একটা কারও সঙ্গে কথা বলে না। কিন্তু আজ হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার চোখ পড়ল রাস্তার ধারে রাখা রঙের বস্তাগুলোর দিকে। তিস্তা নদীর পাড়ের একটা মাঠে কয়েকজন ছেলে বাঁশ দিয়ে কিছু একটা বাঁধছিল। তারা সবাই উৎসাহে ব্যস্ত। বড় বড় কাপড়ের ব্যানার টাঙানো হচ্ছে, রঙের বাক্স সাজানো হচ্ছে।

এক কোণে কমল দাঁড়িয়ে ছিল। একটা বড় আবিরের বস্তা হাতে ধরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিল। গায়ে সাদামাটা একটা পুরোনো টি-শার্ট, পায়ে স্যান্ডেল, আর চোখে অদ্ভুত একটা উজ্জ্বলতা।

তৃষা থেমে গেল। তার স্কুলব্যাগটা কাঁধ থেকে একটু নামিয়ে সে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। কমলের দিকে তাকিয়ে দেখল, ছেলেটা কতটা প্রাণোচ্ছল। ওর মুখে একটা দারুণ হাসি খেলা করছে। যেন সমস্ত সমস্যাকে অগ্রাহ্য করে ও কেবল আনন্দেই ডুবে আছে।

হঠাৎ কমল তৃষার দিকে তাকাল। তৃষা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। কমল এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল, “তুমি এখানে?”

তৃষা একটু চমকে উঠল। সে সাধারণত কারও সঙ্গে কথা বলে না। কিন্তু কমলের সেই সহজ হাসিটা তার অস্বস্তিটা দূর করে দিল। “হ্যাঁ, বাড়ি যাচ্ছি।”

কমল হাসল, “আমি ভাবলাম তুমি আমাদের দোলের প্রস্তুতি দেখতে এসেছ।”

তৃষা একটু অবাক হয়ে বলল, “তুমি কি দোলের প্রস্তুতি করছ?”

কমল গর্বভরে বলল, “হ্যাঁ। প্রতি বছর আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে এই মাঠেই বড় করে দোলের অনুষ্ঠান করি। এইবার আরও বড় করে করছি। তুমি আসবে তো?”

তৃষা থমকে গেল। সে গত কয়েক বছর দোলের দিনটায় ঘরেই বসে থেকেছে। মায়ের মৃত্যুর পর রঙ তার জীবনে যেন নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাবা হয়তো চাইতেন সে বাইরে বেরিয়ে আসুক, কিন্তু তৃষার পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।

তৃষা একটু দ্বিধায় পড়ে বলল, “দেখা যাক।”

কমলের চোখ চকচক করে উঠল। সে হাসল। একেবারে উজ্জ্বল, প্রাণখোলা হাসি। তৃষা অবাক হয়ে দেখল, ছেলেটার চোখে একটা আশার আলো ফুটে উঠেছে।

তৃষা হাসল। একেবারে মৃদু হাসি। বহুদিন পর তার ঠোঁটে এমন হাসি ফুটল। কমল তাকিয়ে থাকল সেই হাসির দিকে।

তৃষা ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করল। কমল দাঁড়িয়ে রইল। তৃষার পায়ের শব্দ মিলিয়ে যাওয়ার পরও কমল ওর হাসিটা মনে মনে দেখতে থাকল। এই প্রথম সে তৃষাকে হাসতে দেখল।

তৃষা বাড়ি ফিরল, কিন্তু তার মনে তখনও কমলের সেই হাসিটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। দরজা খুলে বসন্তবাবু তাকিয়ে দেখলেন মেয়েটার মুখে অদ্ভুত একটা প্রশান্তি। “কেমন গেল আজ স্কুলে?”

তৃষা একটু চুপ করে রইল। তারপর হালকা স্বরে বলল, “ভালো।”

বসন্তবাবু অবাক হলেন। মেয়ের কণ্ঠে এই প্রশান্তিটা বহুদিন শোনেননি। তিনি বুঝলেন, কিছু একটা ঘটেছে।

অধ্যায় ৩: রঙের যোগসূত্র

তৃষার বাবা বসন্তবাবু জানতেন মেয়েটা ভেতরে ভেতরে কষ্টে আছে। মায়ের মৃত্যুর পর তৃষা যেন এক অদৃশ্য খোলসের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। সে বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিয়েছিল। স্কুল থেকে বাড়ি আর বাড়ি থেকে স্কুল – এই ছিল তার জীবনের সীমারেখা। বসন্তবাবু চেষ্টা করেছিলেন মেয়েকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে, কিন্তু তৃষার মধ্যে যেন একটা শূন্যতা বাসা বেঁধেছিল।

বসন্তবাবু স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক। শহরের বেশিরভাগ মানুষ তাকে সম্মান করত। কিন্তু নিজের মেয়ের অন্ধকার দূর করার উপায় তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তৃষার মুখে হাসি ফোটাতে যে একজন বন্ধুর দরকার, তা তিনি জানতেন। কিন্তু কে সেই বন্ধু হবে, তা জানতেন না।

সেদিন সন্ধ্যায় বসন্তবাবু পড়ার ঘরে বসে স্কুলের খাতা দেখে যাচ্ছিলেন। বাইরে বসন্তের হালকা বাতাস বইছিল। কৃষ্ণচূড়ার গন্ধ এসে জানলার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকছিল। এমন সময় তৃষা ঘরে ঢুকল। বসন্তবাবু অবাক হয়ে দেখলেন, মেয়েটার মুখে অদ্ভুত এক প্রশান্তির ছাপ।

তৃষা ধীরে ধীরে বাবার টেবিলের পাশে দাঁড়াল। “বাবা, দোলে আমি কমলদের পাড়ায় যাব।”

বসন্তবাবু চমকে উঠলেন। তৃষা গত কয়েক বছর ধরে দোলের দিন বাড়িতেই থেকেছে। রঙের প্রতি তার কোনও আকর্ষণ ছিল না। কমলদের পাড়া শহরের এক কোণে, তুলনামূলকভাবে নিম্নবিত্ত এলাকা। সেখানে যাওয়ার কথা সে কেন বলছে?

বসন্তবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি ওখানে যাবে! কেন?”

তৃষা একটু চুপ করল। বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্ত ভেবে বললো, ” দোল দেখতে।”

বসন্তবাবু তৃষার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তাঁর মনে পড়ল ছোটবেলায় তৃষা কতটা প্রাণোচ্ছল ছিল। মায়ের হাত ধরে সে দোল খেলতে যেত। রঙে রঙিন হয়ে হাসত। মায়ের মৃত্যুর পর সেই হাসি আর দেখেননি তিনি।

তিনি ধীরে ধীরে বললেন, “তুমি দোল খেলবে?”

তৃষা সরাসরি উত্তর দিল না। সে জানে, বাবার মনে একগাদা প্রশ্ন জমা হচ্ছে। কিন্তু তৃষার মনের মধ্যে তখন অন্য এক আবেগ কাজ করছে। কমলের চোখে যে প্রাণোচ্ছল উজ্জ্বলতা দেখেছে, সেই হাসি তৃষার মনের বন্ধ দরজায় যেন আলতো করে আঘাত করেছে।

তৃষা একটু দ্বিধা নিয়ে বলল, “বাবা, তুমিও কি দোল খেলবে?”

বসন্তবাবু একটু হেসে বললেন, “অনেক বছর খেলিনি। তোমার মা থাকলে হয়তো খেলতাম।”

তৃষা চুপ করে গেল। বাবার কণ্ঠে এক ধরনের বেদনামিশ্রিত অনুশোচনা ধরা পড়ল। বসন্তবাবুর চোখে একটুকরো শূন্যতা ফুটে উঠল। তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি যদি খেলতে চাও, খেলতে পারো। কমল তো ওর বন্ধুদের নিয়ে সব আয়োজন করছে শুনলাম।”

তৃষা চুপ করে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। কমলের কথা মনে পড়ল তার। ছেলেটা কত সহজে ওকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল! সেই আন্তরিক হাসি, সেই চাওয়া তৃষার হৃদয়ে কোথাও একটা ছোট্ট খড়কুটোর মতো আশ্রয় নিয়েছে।

অধ্যায় ৪: তিস্তার স্পারে প্রস্তুতি

তিস্তার স্পার বরাবরই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। বসন্তের সময় এই জায়গাটা যেন নতুন প্রাণ পায়। চারপাশে কৃষ্ণচূড়ার ফুলের লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে। নদীর জলে সূর্যের প্রতিফলন ঝিকমিক করে। সেই সৌন্দর্য যেন আরও ফুটে ওঠে দোলের উৎসবের প্রস্তুতিতে।

কমল আর তার বন্ধুরা সকাল থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছিল। বড় বড় রঙিন কাপড় এনে তারা মঞ্চ সাজাচ্ছিল। বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করে তার ওপরে কাপড় টাঙানো হচ্ছিল। খোকনদা, কমলের পাড়ার বড় দাদা, পুরো আয়োজনের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। খোকনদা ছেলেবেলা থেকেই পাড়ার সব অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা। তার নেতৃত্বে সবকিছুই সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়।

খোকনদা একটা লাল কাপড় হাতে নিয়ে বলল, “এই দিকটা ঠিক করে বাঁধ। যেন হাওয়ায় উড়ে না যায়।”

কমল সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করল। তার বন্ধুরা দড়ি টানছিল, কাপড়ের সোজা রেখা ঠিক করছিল।

খোকনদা মাথা নেড়ে বলল, “দেখ, এইবার শহরের লোকেরা আসবে। সব ঠিকঠাক হলে খবরের কাগজে ছবিও ছাপাবে।”

কমল উত্তেজিত হয়ে বলল, “সব ঠিক হবেই দাদা। এ বছর তিস্তার ধারে এমন দোল হবে, যা আগে কেউ দেখেনি!”

খোকনদা হেসে বলল, “তা হবে বইকি।”

সন্ধ্যা নামতে শুরু করল। আকাশে লালচে আভা। কৃষ্ণচূড়ার পাঁপড়ি বাতাসে উড়ে এসে তিস্তার জলে ভেসে যাচ্ছে। কমল আর তার বন্ধুরা তখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। মঞ্চে বড় করে দোলের ব্যানার টাঙানো হয়েছে – “বসন্ত উৎসব ২০২৫”।

কমল তখন জিনিসপত্র গোছাতে ব্যস্ত। ঠিক তখনই তৃষা এসে উপস্থিত হলো। সাদা সালোয়ার কামিজে তৃষা যেন রোদে ঝলমলে একটা শুভ্র ফুল। তার মুখে এক আশ্চর্য শান্তি।

কমল চমকে বলল, “তুই এসেছিস?”

তৃষা হাসল, “বলেছিলাম না আসব?”

খোকনদা দূর থেকে তাকিয়ে দেখল। মুখে এক রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল।

খোকনদা কমলের কাঁধে হাত রেখে বলল, “এবার কিন্তু দোল সত্যিই অন্যরকম হবে।”

কমল একটু সংকোচে বলল, “কিন্তু তুই কি সত্যিই খেলবি?”

তৃষা একটু মৃদু হেসে বলল, “কেন? তোমরা কি আমাকে রঙ মাখাতে দেবে না?”

খোকনদা হেসে বলল, “আরে তুই যদি আসিস, তবে তো এই বছরের দোলটাই স্মরণীয় হয়ে যাবে!”

কমল একটা রঙের কৌটা তুলে নিয়ে বলল, “তাহলে প্রস্তুতি শুরু হোক!”

সবাই হাততালি দিয়ে উঠল। নদীর ধারে তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। বাতাসে শাল ফুল আর কৃষ্ণচূড়ার মিশ্র গন্ধ। বসন্তবাবু জানলার ধারে দাঁড়িয়ে দূর থেকে এই দৃশ্য দেখছিলেন। তৃষার মুখের সেই শান্ত হাসি দেখে বসন্তবাবুর মনেও যেন একটু রঙের ছোঁয়া লাগল।

কমল হাত উঁচু করে বলল, “সবাই তৈরি তো? এবার এমন দোল হবে যা শহর কোনোদিন ভুলবে না!”

খোকনদা বলল, “ঠিক বলেছিস। এবার তিস্তার ধারে সত্যি বসন্ত নামবে!”

অধ্যায় ৫: দোলের আগের রাত

রাত তখন গভীর। তিস্তার ওপর জোছনার আলো পড়ে নদীর বুকে সাদা রুপোলি রেখা টেনে দিয়েছে। পাড়ে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া পড়ে অদ্ভুত এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাতাসে শাল ফুল আর পলাশের মিশ্র গন্ধ। বসন্ত এসে যেন তার আসনের চাদর বিছিয়ে রেখেছে গোটা শহরে।

তৃষা তখন নিজের ঘরে জানলার ধারে বসে ছিল। তার পরনে একটা হালকা নীল নাইটি। জানলার বাইরে তাকিয়ে ছিল স্থির চোখে। দূরে স্পারের দিক থেকে হাসি-গানের আওয়াজ ভেসে আসছিল। মাঝে মাঝে বাতাসে রঙ মেশানো গন্ধ এসে ঘরের ভেতর ঢুকছিল।

সে জানলার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাল। বড় বড় পূর্ণিমার চাঁদের আলো গায়ে এসে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল সেই আলো যেন ওর একলা মন ছুঁয়ে দিচ্ছে। তৃষা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “এইবার হয়তো আমি নতুন করে হাসতে শিখব,” – তৃষা মনে মনে বলল।

মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তার জীবনে যেন একটা অদ্ভুত শূন্যতা নেমে এসেছিল। ক্লাসে তার সহপাঠীরা হাসত, খেলত, দোলের প্রস্তুতিতে মেতে উঠত, কিন্তু তৃষা সেই আনন্দ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। সে শুধু স্কুলে গিয়ে ফিরে আসত, বই খুলে বসে থাকত – যেন তার জীবনটাও রঙহীন হয়ে পড়েছিল।

কিন্তু কমলের মুখের সেই উজ্জ্বল হাসি, খোকনদার আত্মবিশ্বাস, এবং কমলের সেই সহজ বন্ধুত্ব যেন তার মনে নতুন করে আশা জাগিয়ে তুলছিল।

তৃষা জানলার বাইরে তাকিয়ে দেখল তিস্তার পাড়ে তখনও কাজ চলছে। রঙিন কাপড়গুলো বাতাসে উড়ছে।

কমল ঘরে বসে কালকের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মা মায়া তখন ঘুম থেকে উঠে এসে দেখল ছেলে এখনো কাজ করছে। “এত রাত পর্যন্ত কাজ করছিস?”

কমল হাসল, “মা, কালকের দিনটা যেন সবার মনে থাকে। তার জন্য একটু কষ্ট তো করতেই হবে।”

মায়া একটা টুল টেনে এনে কমলের পাশে বসল। তার ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই এই আনন্দ কোথা থেকে পাস রে, কমল?”

কমল একটু মাথা নিচু করল। “মা, আমি তো চাই সবাই হাসুক।

মায়ার চোখে জল চলে এল। সে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মায়া বলল, “ভালো করে সব করিস। মনে রাখিস, খুশি ছড়ানোর জন্যই তো দোল।”

কমল মাথা নাড়ল। “তাই তো, মা। এইবার তিস্তার পাড়ে এমন দোল হবে যা কেউ ভুলতে পারবে না।”

অধ্যায় ৬: রঙের উৎসব

সকালের প্রথম আলো তখন তিস্তার জলে চিকচিক করছে। আকাশে রোদ ঝলমলে, হালকা বাতাসে পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার গন্ধ ভেসে আসছে। চারদিকে যেন বসন্ত তার রঙের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।

তিস্তার স্পার তখন উৎসবের সাজে সেজে উঠেছে। বড় বড় রঙিন কাপড় ঝোলানো হয়েছে বাঁশের গায়ে। ছোট ছোট রঙিন কাগজের পতাকা বাতাসে দোল খাচ্ছে। মাঠের একপাশে একটা মঞ্চ বানানো হয়েছে – খোকনদা আর কমলের ক্লাব মিলে সেই মঞ্চ সাজিয়েছে। চারদিকে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রঙ ছড়িয়ে আছে। পাড়ার ছেলেমেয়েরা চিৎকার করছে, হাসছে, ছুটোছুটি করছে।

কমল তখন একটা বড় প্লাস্টিকের বালতিতে রঙ মিশিয়ে রাখছিল। তার হাতে লাল রঙ লেগে ছিল। মুখে একগাল হাসি – যেন এই মুহূর্তটার জন্যই সে অপেক্ষা করছিল এতদিন।

ঠিক সেই সময় তৃষা পৌঁছল।

তৃষা একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। তার পরনে একটা হালকা হলুদ সালোয়ার কামিজ। মাথার চুল খোলা। তার চোখে আজ এক অন্যরকম উজ্জ্বলতা।

খোকনদা তৃষাকে দেখে চেঁচিয়ে বলল, “আরে! তৃষা এসেছে!”

সবাই তাকাল তৃষার দিকে।

তৃষা একটু লজ্জা পাচ্ছিল। তার পা সামান্য কাঁপছিল। এত লোকের সামনে সে কখনও এভাবে দাঁড়ায়নি।

কমল হাসল। সে একটা বড় পিচকারি হাতে নিয়ে এগিয়ে এল। পিচকারির মধ্যে নীল রঙ ভরা।

  • “তৃষা, নাও। শুরু করো।”

তৃষা অবাক হয়ে তাকাল কমলের দিকে। “আমি?”

কমল মাথা নাড়ল। তার চোখে সেই চিরচেনা উজ্জ্বলতা। “হ্যাঁ, তুমিই শুরু করো।”

তৃষা একটু ইতস্তত করল। পিচকারিটা হাতে নিল। হাত সামান্য কাঁপছিল। সে জীবনে কখনও এভাবে দোল খেলেনি।

কমল তার দিকে তাকিয়ে হাসল। “ভয় পেয়ো না। শুরু করো। রঙই সব ভয় দূর করবে।”

তৃষা পিচকারির মুখটা একটু তুলে ধরল। কমল তার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল।

তৃষা ধীরে ধীরে পিচকারির মুখটা কমলের মুখের দিকে তাক করল। তারপর একটা ছোট্ট চাপ দিল।

নীল রঙের একটা স্রোত গিয়ে পড়ল কমলের গালে।

কমল চমকে উঠল। তারপর বড় করে হাসল। “এই তো! এবার ঠিক হয়েছে!”

সবাই হেসে উঠল। খোকনদা তাড়াতাড়ি একটা লাল আবিরের কৌটো থেকে রঙ নিয়ে তৃষার গালে ছুঁয়ে দিল। “তৃষা এবার দোল খেলছো ঠিকঠাক!”

তৃষা একটু হাসল। তার গালে তখন নীল আর লালের ছোঁয়া।

কমল একটা আবিরের কৌটো তুলে নিয়ে তৃষার দিকে এগোল। “আমিও তোমার মুখে একটু রঙ লাগাব।”

তৃষা চোখ বন্ধ করল। কমল ধীরে ধীরে লাল আবির তুলে তার গালে ছুঁয়ে দিল।

তৃষা চোখ খুলল। কমলের চোখের দিকে তাকাল। কমলের চোখে যেন বসন্ত ফুটে উঠেছে।

এরপর হঠাৎই বাকি ছেলেমেয়েরা চারপাশ থেকে রঙ নিয়ে তৃষার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। “তৃষা, এইবার পালানোর জো নেই!”

তৃষা হেসে উঠল। সে হাত বাড়িয়ে একটা পিচকারি তুলে নিল। তারপর সে কমলের মাথার ওপর রঙ ছিটিয়ে দিল।

কমল হাসতে হাসতে বলল, “এই তো! এবার দোল শুরু হল!”

তারপর সব ছেলেমেয়েরা মিলে রঙের খেলায় মেতে উঠল। তৃষা লাজুকভাবে সবার সঙ্গে খেলতে শুরু করল। তার গায়ে তখন লাল, নীল, সবুজ, হলুদ রঙ মিশে গেছে।

কমল হেসে বলল, “তৃষা, এবার তোমার হাসি ফিরে এসেছে।”

তৃষা হাসল।

তিস্তার পাড় তখন রঙের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। চারপাশে আনন্দধ্বনি, হাসি, উচ্ছ্বাস।

তৃষার মনে হচ্ছিল – সে সত্যিই নতুন করে হাসতে শিখছে।

অধ্যায় ৭: ঝড়ের ছায়া

দুপুর বেলা। তিস্তার পাড়ে তখনো রঙের উৎসব চলছে। আকাশে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে। হালকা বাতাস বয়ে চলেছে, যেন আসন্ন ঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ছেলেমেয়েরা তখনও রঙে মেতে আছে। কমল, তৃষা, খোকন আর বাকিরা হাসি-ঠাট্টায় মেতে আছে।

তৃষার গায়ে তখন নীল, লাল আর সবুজ রঙ মিশে গেছে। তার মুখে সেই চিরচেনা গাম্ভীর্য আর নেই। এখন সে হাসছে – প্রাণখোলা হাসি। কমল একপাশে দাঁড়িয়ে তৃষার এই পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল। তার মনে হচ্ছিল, তৃষা যেন সত্যিই নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছে।

ঠিক তখনই খোকনদা ছুটে এল। তার মুখে আতঙ্কের ছাপ। “কমল! কমল! বসন্তবাবু এসেছেন!”

কমল চমকে উঠল। “বসন্তবাবু?”

খোকন বলল, “হ্যাঁ, উনি বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। খুব রাগী মুখ।”

কমল তাকাল তৃষার দিকে। তৃষার মুখ থেকে তখন হাসিটা মিলিয়ে গেছে। তার চোখে একটা অদ্ভুত ভয়।

খোকন বলল, “তৃষা, তুই পালিয়ে যা। বসন্তবাবু রেগে গেলে খুব খারাপ হবে!”

তৃষা মাথা নিচু করল। কমল সাহস করে বলল, “না। পালানোর কিছু নেই। আমি দেখছি।”

এমন সময় বসন্তবাবু ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকলেন। তিনি ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরা। মুখে কঠোর ভাব। আশেপাশের ছেলেমেয়েরা ধীরে ধীরে চুপ করে গেল। চারপাশে নীরবতা নেমে এল।

তৃষা ভয়ে একপাশে সরে গেল। কমল এগিয়ে এসে দাঁড়াল। “স্যার, আপনি এখানে?”

বসন্তবাবু কমলের চোখের দিকে তাকালেন। তার মুখে কোনও হাসি নেই। তিনি বললেন, “তৃষা, তুমি এখানে কেন?”

তৃষা কিছু বলল না। তার মুখ নিচু। হাতের পিচকারিটা মাটিতে পড়ে গেল।

কমল একটু এগিয়ে এল। সে তৃষার সামনে এসে দাঁড়াল। “স্যার, ও কিছু করেনি। আমিই ডেকেছিলাম।”

বসন্তবাবুর চোখে তখন কঠোর দৃষ্টি। তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন। তৃষার দিকে তাকালেন। “তুমি আমার অনুমতি ছাড়া এখানে কেন এসেছ?”

তৃষা মাথা নিচু করে বলল, “আমি আসতে চেয়েছিলাম, বাবা।”

বসন্তবাবু একটু নরম হলেন। তার মুখের ভঙ্গি একটু বদলাল। “তুমি এখানে আসতে চেয়েছিলে?”

তৃষা মাথা নাড়ল। “আমি রঙ খেলতে চেয়েছিলাম।”

বসন্তবাবু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। চারপাশ তখন নিস্তব্ধ। বাতাসে শাল ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে।

কমল একটু জোর দিয়ে বলল, “স্যার, দোল উৎসব তো রঙ আর আনন্দের উৎসব। এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। এখানে সবাই সমান। এখানে সবাই বন্ধু।”

বসন্তবাবু কমলের চোখের দিকে তাকালেন। কমলের চোখে সাহস আর সততার ছাপ। বসন্তবাবু একটু এগিয়ে এলেন। তারপর ধীরে ধীরে একটা লাল আবিরের প্যাকেট তুললেন।

তৃষা চমকে তাকাল। কমল অবাক হয়ে বসন্তবাবুর দিকে তাকিয়ে রইল।

বসন্তবাবু ধীরে ধীরে কমলের দিকে এগিয়ে এলেন। তারপর এক চিমটি লাল আবির তুলে কমলের গালে ছুঁয়ে দিলেন।

সবাই চমকে উঠল!

খোকন ফিসফিস করে বলল, “এ কী হচ্ছে?”

বসন্তবাবু ধীরে ধীরে বললেন, “তোমরা ঠিকই বলেছো। এই উৎসব বিভেদের নয়। এটা আনন্দ আর বন্ধুত্বের উৎসব। আমি গর্বিত যে আমার মেয়ে এই আনন্দের অংশ হতে চেয়েছে।”

তৃষার চোখে জল চলে এল। কমল মৃদু হেসে বলল, “তৃষা, এখন তো আর কোনও বাধা নেই!”

তৃষা একটু হাসল। তারপর সে বসন্তবাবুর দিকে তাকাল। বসন্তবাবু হাসলেন। “যাও, রঙ মেখে নাও।”

তৃষা কমলের হাত থেকে একটা পিচকারি নিল। তারপর সোজা বসন্তবাবুর দিকে তাকিয়ে পিচকারিটা চাপ দিল। নীল রঙ গিয়ে পড়ল বসন্তবাবুর সাদা পাঞ্জাবিতে।

সবাই হেসে উঠল। খোকন হাততালি দিল। “দোল শুরু হয়েছে!”

বসন্তবাবু হাসলেন। তার মুখে তখন আনন্দ আর প্রশান্তির ছাপ। তিনি বললেন,”তৃষা, এবার আমাকে সত্যিই রঙে রাঙিয়ে দিল!”

তৃষা হাসল। তারপর কমল আর বসন্তবাবুর হাত ধরে একসঙ্গে রঙের স্রোতে ভেসে চলল।

তিস্তার পাড় তখন সত্যিই রঙ আর আনন্দের জোয়ারে ভেসে চলেছে। আকাশে তখন রোদ আর মেঘের লুকোচুরি। বাতাসে তখন বসন্তের ছোঁয়া।

(শেষ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *