লেখক : পিনাকী রঞ্জন পাল
অর্ক, চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এক শান্ত, সহজ-সরল মানুষ। জীবনে চাওয়া-পাওয়ার তালিকা খুবই ছোট, কিন্তু তার প্রতিটি ইচ্ছার সঙ্গে মিশে থাকে পরিশ্রম আর সততার ছাপ। জলপাইগুড়ি শহরের শিরীষতলা বাজারে ছোট্ট একটা মুদিখানা দোকানই তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। ভোরের আলো ফুটতেই সে প্রতিদিন দোকানের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। বাড়ির ঘড়িতে তখন ছয়টা বাজে, কিন্তু অর্কের দিন শুরু হয়ে গেছে অনেক আগেই।
অর্কের জীবনটা যেন একটা নিরন্তর লড়াই। শহরের নানা কষ্টসাধ্য দিন আর রাত পেরিয়ে, অল্প আয়ে তার সংসার কোনো মতে টিকে আছে। কিন্তু সচ্ছলতা? সেটুকু যেন তার জন্য অধরা। ছোট্ট দোকানে বিভিন্ন গ্রাহকের জন্য সামান্য রোজগার হলেও, সেটা কখনোই সংসারের সব প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তবুও, সে কখনো হাল ছাড়ে না। পরিবারের সুখ আর নিরাপত্তার জন্য তার এই প্রাণপণ চেষ্টা প্রতিদিনের বাস্তবতার মুখে এক বীরের মতো লড়াই।
স্ত্রী নন্দিনী এবং অর্কের সংসারের টানাপোড়েন
অর্কের স্ত্রী, নন্দিনী, তার থেকে অনেকটাই ভিন্ন স্বভাবের। স্বামীকে সে একরকমের দায় হিসেবে দেখে। সংসারের টানাপোড়েনের চাপ, অভাব-অনটনের ঘেরাটোপে নন্দিনী নিজেকে বেশ বিরক্ত আর অসন্তুষ্ট বোধ করে। তার মনে সবসময় একটা তিক্ততা জমে থাকে, যেটা অর্কের বিরুদ্ধে রূপ নেয় ক্ষোভের আকারে।
যখন ঘুম থেকে ওঠে, তখনও তার মুখে থাকে বিরক্তির ছাপ। তার কপালে স্নিগ্ধতার কোনো চিহ্ন নেই। এতদিন ধরে অভাবের মধ্যে কাটিয়ে আসার কারণে যেন তার মনটা কেমন সংকীর্ণ আর কুৎসিত হয়ে গেছে। আর সেই কুৎসিততার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে অর্কের ওপর। প্রতিদিনের শুরুতে তাকে বলে ওঠে, “এই যে এত কাজ করছো, দিনরাত এক করে খেটে যাচ্ছো—কিন্তু ফলাফল কই? সংসারে একটু সুখ এনে দিতে পারলে না।”
অর্ক তাতে কিছু বলে না। সে জানে, কথা বললে ঝগড়া বাড়বে এবং তাতে তাদের ছোট সংসারের ক্ষত আরও বাড়বে। তাই সে নিজেই চুপচাপ নীরবে সবকিছু সহ্য করে নেয়। নিজের জন্য রান্না করাটা তার প্রতিদিনের কাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে উঠে সে চুপচাপ রান্নাঘরে গিয়ে চা বানায়, নিজের জন্য সামান্য ভাত, ডাল আর আলুভাজা তৈরি করে। ভাত খেতে খেতে ছেলেটাকে এক কাপ হরলিক্স বানিয়ে দেয়, যাতে সে উঠে পড়ার সময় হরলিক্সটা খেতে পায়। তারপর তাকে পড়ার জন্য বসিয়ে দেয়।
অভ্যাসের শৃঙ্খলায় বাঁধা অর্কের জীবন
প্রতিদিন ভোরবেলা থেকে তার জীবন যেন একটা চেনা ছন্দে বাঁধা। সকালে নিজের খাবার তৈরি করা, ছেলেকে পড়তে বসানো এবং নিজের বাজারের দোকান খোলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া—এই অভ্যাসগুলোই তার জীবনের স্বাভাবিক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নন্দিনী বিছানা থেকে অনেক পরে উঠেও কোনও সাহায্যের হাত বাড়ায় না, বরং নিজেই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
অর্ক জানে, তার কাজটাই তার জীবনের মুখ্য কর্তব্য। সে কোনো অভিযোগ ছাড়াই নিজেকে সঁপে দিয়েছে এই দায়িত্বে। তার চাওয়া, স্ত্রী আর সন্তান যেন একটু হলেও সুখী থাকে, একটু আরাম পায়।
কিন্তু তার জীবনটা যে একটা নিরন্তর সংগ্রাম, তা কেউ বুঝতে চায় না। প্রতিদিন দোকানে দাঁড়িয়ে খদ্দেরদের চাহিদা পূরণ করা, তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা—এগুলো সে মন থেকে করে। কিন্তু তাতেও যেন একটু সচ্ছলতা আসে না সংসারে। অবস্থা দেখে তার মনে হয়, এই সংগ্রামের কোনো শেষ নেই।
অর্কের নির্লিপ্ততা ও স্ত্রী নন্দিনীর উদাসীনতা
নন্দিনী তার দিকে কখনো সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকায় না। বরং তার মনে যেন শুধু একটাই প্রশ্ন—কেন অর্ক তার জীবনটাকে একটু সচ্ছল করতে পারে না? আর তার সব দায় যেন সে অর্কের উপর চাপিয়ে দেয়। এমনকি অর্কের জন্য কোনো বিশেষ যত্নের কথাও তার মাথায় আসে না। যদিও অর্ক কখনও তানিয়ে কোনো অভিযোগ করে না। সংসারের প্রতিটি দায়িত্ব যেন তার নিজের, অথচ তার প্রতি স্ত্রীর সামান্য প্রশংসার অভাব তার মনে একটা চাপা দুঃখের সৃষ্টি করে।
d
অর্ক প্রতিদিনের মতো সেই ভোরবেলা উঠে নিজের জন্য চা বানিয়ে, ডাল, ভাত রান্না করে নিজেই খেয়ে নিলো। আজকেও তার দিনটা শুরু হয়েছে বাজারের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে। বাজারের পথে সে চেনা রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছিলো, কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে হঠাৎ সামনের ছোট একটা গর্তে সাইকেলের চাকা আটকে গেল। ভারসাম্য হারিয়ে সজোরে পড়ে গেল অর্ক। রাস্তায় বেশ কিছু লোকজন ছিল, তারাই ছুটে এসে অর্ককে সাহায্য করল। হাত-পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে সে রাস্তায় কাতরাচ্ছিল।
কাছের মানুষজন তাকে ধরে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর এক্স-রে করে ডাক্তার জানালেন, তার পায়ের পাতায় ফ্র্যাকচার হয়েছে। চিকিৎসক কড়া গলায় বললেন, “পায়ে প্লাস্টার লাগবে, আর পুরো এক মাস বিশ্রামে থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই হাঁটা চলা করা যাবে না।”
অর্ক যেন কেমন হতবাক হয়ে গেল। এক মাস কাজ না করলে তার সংসার চলবে কীভাবে! দোকান বন্ধ থাকলে তো কোনো আয়ের উৎসই থাকবে না। তার মুখটা ভীষণ মলিন হয়ে গেল, মনে হলো পৃথিবী যেন তার থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে সংসারের ব্যয় মেটাবে, স্ত্রী আর সন্তানকে কীভাবে খাওয়াবে—এমনই হাজারটা চিন্তা তার মাথায় ভিড় করছিল।
নন্দিনীর উপস্থিতি এবং তার মানসিক দ্বন্দ্ব
খবর পেয়ে নন্দিনী হাসপাতালে এসে হাজির হলো। অর্ককে দেখে সে যেন এক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে গেল। এতদিন ধরে যে মানুষটাকে অল্প আয় নিয়ে সংসার চালাতে দেখেছে, তার সেই সহজ-সরল স্বামী আজ অসহায়ভাবে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে অর্কের পায়ের প্লাস্টারের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মনের মধ্যে তখন যেন এক অদ্ভুত চিন্তার স্রোত বইছিল। সংসার চালানোর দায়িত্ব এবার তার উপর এসে পড়েছে, এই পরিস্থিতিতে সে কী করবে?
কিছুক্ষণ পর নন্দিনী ধীরে ধীরে অর্কের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। চোখে-মুখে দ্বিধার ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছিল। নিজের সমস্ত সংকোচ দূরে সরিয়ে, নন্দিনী তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “তুমি চিন্তা করো না। আমি গিয়ে দোকানটা দেখব। সামলাতে পারব কিনা জানি না, তবে চেষ্টা করব।”
অর্কের অবাক হওয়া এবং স্ত্রীর প্রতি নতুন উপলব্ধি
নন্দিনীর মুখে এমন কথা শুনে অর্ক কিছুটা অবাক হলো। এতদিন ধরে তার সংসারের প্রয়োজনে একা লড়াই করা অর্ক কখনো কল্পনাও করেনি যে নন্দিনী দোকানে যেতে আগ্রহী হবে। কিন্তু তার চোখে আজ যেন এক নতুন দৃঢ়তার ছাপ ফুটে উঠেছে। সে নন্দিনীর দিকে তাকিয়ে অনুভব করল, হয়তো এতদিন ধরে সে যে দায়িত্ব নিয়ে সংসার চালিয়ে আসছে, সেই দায়িত্বের বোঝা এবার নন্দিনীর কাঁধে নেওয়ার সময় এসেছে।
অর্ক একটু আশ্বস্ত হলো। নন্দিনী তার হাতটা ধরে সাহস জোগালো, “তুমি শুধু দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার চেষ্টা করো। আমি চেষ্টা করব দোকানের দায়িত্ব পালন করতে।” কথাগুলো শুনে অর্কের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
এখনও তার মনে সংশয় আছে—নন্দিনী কতটা সফল হবে সেটা জানে না, কিন্তু তার চোখে আজ নতুন এক আলো দেখল। এই ঘটনাটি যেন তার মনে একটা উপলব্ধির জন্ম দিল, হয়তো এতদিনের পরিশ্রমের একটা প্রভাব নন্দিনীর উপর পড়েছে, সে তার কষ্টের মর্মটা একটু হলেও বুঝতে শুরু করেছে।
নতুন দায়িত্বের প্রথম দিন
পরের দিন সকালে, নন্দিনী তার রোজকার স্বাভাবিক অভ্যাসগুলিকে দূরে সরিয়ে নিজের কাজগুলো দ্রুত সেরে দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। তার মাথার মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন আর চিন্তা ঘুরছে। খদ্দেররা কী বলবে? কীভাবে দোকান সামলাবে? সবার মন ভরাতে পারবে তো? কিন্তু সে ঠিক করল, এই কাজ সে করবেই, কারণ এর ওপরই নির্ভর করছে তার সংসার।
বাজারের দোকানে পৌঁছে নন্দিনী একটু নার্ভাস বোধ করল, কিন্তু পরপর খদ্দের আসতে শুরু করল। সে ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে গল্প শুরু করল, অর্ডার নিলো, দাম মিলিয়ে হিসেব করল। কিছুটা ভুলভ্রান্তি হলেও খদ্দেরদের অনেকে তাকে দেখে মুগ্ধ হলো, কারণ তারা জানত যে অর্কের জায়গায় আজ তার স্ত্রী এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকে তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলো।
সংসার চালানোর সংগ্রাম এবং নন্দিনীর মানসিক পরিবর্তন
এভাবে দিন কয়েক কেটে গেল। নন্দিনী এখন বুঝতে পারছিল যে দোকান চালানো একটা বড় দায়িত্ব এবং এর মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন কতখানি কষ্ট করে সংসার চলে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীরে যখন সে শুয়ে পড়ত, তখন তার মনে হতো—এতদিন ধরে অর্ক কীভাবে একা এই পরিশ্রম সামলাত।
তার মনের কোণে একটা অপরাধবোধও জাগ্রত হলো, কারণ এতদিন ধরে সে শুধু অর্ককে দোষ দিয়েছে, কিন্তু আজ নিজে সেই পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারল, অর্ক কতটা কষ্ট করে তাদের সংসারটা চালিয়ে এসেছে। তার কণ্ঠে এখন আর অভিযোগ নেই, বরং একধরনের নীরব প্রশংসা অর্কের জন্য।
নন্দিনীর এই পরিবর্তন অর্কও লক্ষ করল। তার প্রতিদিনের জীবনের সংগ্রাম আর অগোছালো দিনগুলো যেন ধীরে ধীরে এক নতুন অর্থ লাভ করতে শুরু করল। তারা এখন একসঙ্গে সংসারের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে চায়, একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শুরু করেছে।
নন্দিনীর মনে আস্তে আস্তে পরিবর্তন আসতে লাগল। একসময় অর্কের কষ্ট এবং পরিশ্রম নিয়ে যে অবজ্ঞা করত, সেই নন্দিনী এখন সেই একই পরিশ্রমের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ভোরে উঠে দোকানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, খদ্দেরদের চাহিদা মেটানো, বাজার থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করা—এসব কাজ করতে গিয়ে সে উপলব্ধি করল, অর্ক প্রতিদিন কতটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে এই সংসার চালানোর সংগ্রাম করে।
নন্দিনী একসময় বুঝতে শুরু করল, দোকান চালানো শুধু একটা কাজ নয়, বরং এর ভেতর দিয়ে সংসারের সব চাহিদা পূরণ হয়। দিনশেষে দোকানের হিসাব মিলাতে গিয়ে সে উপলব্ধি করল, একটা ছোটখাটো ভুলও কীভাবে সংসারে প্রভাব ফেলতে পারে। সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে, তার মনটা ভারী হয়ে উঠত—অর্কও কি প্রতিদিন এমন ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে?
এদিকে অর্ক তার ঘরে শুয়ে থেকে একদিক থেকে বেশ চিন্তিত থাকলেও অন্যদিকে একধরনের স্বস্তি অনুভব করছিল। নন্দিনীর উপর যখন দোকান চালানোর দায়িত্ব পড়ল, তখন সে ভেবেছিল, হয়তো নন্দিনী সামলে উঠতে পারবে না। কিন্তু দিন কয়েক যেতেই সে বুঝতে পারল, তার স্ত্রী ধীরে ধীরে দায়িত্বশীল হয়ে উঠছে।
অর্ক প্রতিদিন দুপুরের দিকে নন্দিনীকে ফোন করত জানতে চাওয়ার জন্য যে, দোকানে সব ঠিকঠাক চলছে কিনা। প্রতিবারই নন্দিনী বলে উঠত, “তুমি চিন্তা করো না, আমি ঠিক সামলে নিচ্ছি।” কথাগুলোর মধ্যে একধরনের দৃঢ়তা আর আন্তরিকতার ছোঁয়া থাকত, যা অর্ক আগে কখনো অনুভব করেনি।
অর্কের সুস্থ হয়ে ওঠা এবং প্লাস্টার খোলার দিন
অর্ক ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিল। প্লাস্টার খোলার দিনও এসে গেল। নন্দিনী সেদিন খুব তাড়াতাড়ি উঠে অর্কের প্রিয় খাবার রান্না করল। সেদিনের সকালটা যেন অন্যরকম ছিল। এতদিন পর অর্কও খানিকটা অবাক হল এই পরিবর্তন দেখে।
নন্দিনী এবার অর্কের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি দোকানে আর একা যাবে না। আমি তোমার সাথে কাজ করব। এতদিন তোমার কষ্টটা আমি বুঝিনি। কিন্তু এখন বুঝেছি, সংসার চালানো শুধু এক জনের কাজ নয়।” অর্ক শুনে অবাক হলেও মনে মনে স্বস্তি পেল।
নতুন পথচলা
দু’জনে মিলেই দোকান চালাতে শুরু করল। নন্দিনী এখন প্রতিদিন সংসারের কাজ সেরে দোকানে যায়। খদ্দেরদের সাথে গল্প করে, অর্ডার নেয়। কখনো মশলাপাতি গুছিয়ে দেয় তো কখনো হিসেব-নিকেশ করে। দোকানটাও যেন এবার একটু প্রাণ ফিরে পেল। খদ্দেররাও নন্দিনীর উপস্থিতি পছন্দ করতে লাগল, আর তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কের বাইরেও একটা বিশ্বাস গড়ে উঠতে থাকল।
অর্কও আনন্দে দিন কাটাতে লাগল। এতদিনের পরিশ্রম এখন যেন অনেকটাই হালকা হয়ে গেল। অর্কের মনে হলো, এতদিনের সংগ্রাম সার্থক হয়েছে। স্ত্রী এখন তার পাশে আছে, তাকে বোঝে, এবং তার এই কষ্টে ভাগীদার হয়েছে।
অর্ক ও নন্দিনীর একসাথে কাজ করা দেখে তাদের সন্তানও বাবার কষ্টকে বুঝতে শুরু করল। একদিন রাতে খাওয়ার টেবিলে বসে সে হঠাৎ বলল, “বাবা, আমি বড় হয়ে তোমার মতো পরিশ্রম করতে চাই। তোমার কষ্ট আমি বুঝি।”
অর্ক মৃদু হাসল, সন্তানের কথা শুনে গর্বে তার চোখ ভিজে গেল। সে উপলব্ধি করল, কঠিন সময়গুলো তাদের পরিবারকে একসূত্রে বেঁধে ফেলেছে, এবং তারা একে অপরের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
এভাবেই চলতে থাকল অর্কের জীবন। সাইকেলের চাকায় চাকায় গড়িয়ে চলা তার এই জীবনযাত্রা এবার ধীরে ধীরে স্বচ্ছলতার দিকে এগিয়ে চলল। পরিবারের বন্ধন আরও মজবুত হলো, এবং তারা একসাথে অনেক কষ্টের ভেতরেও সুখ খুঁজে পেতে শিখল।
© পিনাকী রঞ্জন পাল