পিনাকী রঞ্জন পাল : আধুনিক জীবন যাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি এমনভাবে ক্রমশ কম্পিউটার ভিত্তিক হয়ে পড়ছে যে অনেক সময় সেগুলি যে কম্পিউটার কেন্দ্রিক এ কথা আমাদের মনেও থাকে না। বিদ্যুতের বিল, টেলিফোন বিল, রান্নার গ্যাসের বুকিং, ট্রেনের টিকিট সংরক্ষণ, পরীক্ষার মার্কশিট তৈরি এসবই ইদানিং কম্পিউটারের মাধ্যমে হচ্ছে। জীবন যাত্রার সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী এই যন্ত্রটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল ‘মাউস’। আজ এই মাউস নিয়ে দু-চার কথা তোমাদের জানাব।
‘কি-বোর্ড’ আর মনিটারের মত মাউসেরও অবস্থান কম্পিউটারের মূল অংশের বাইরে। মনিটারের পর্দায় যে তীর চিহ্ন আকৃতির কার্সার তোমরা দেখে থাক তার সঙ্গে রয়েছে মাউসের নাড়ির যোগ। মাউসকে ব্যবহার করে কাজ হয় খুব দ্রুত এবং সময়ও লাগে খুব কম। মাউস ব্যবহার না করেও কি-বোর্ডের চাবি টিপে কম্পিউটারে সমস্ত কাজ করা যায়, তবে এক্ষেত্রে সময় লাগে অনেক বেশি। মাউসকে তার নিজস্ব প্যাডের ওপর এদিক-ওদিক নাড়াচাড়া করে মনিটরের পর্দায় অবস্থিতি বিভিন্ন আইকনের ওপর কার্সারকে বসিয়ে মাউসের বোতামে চাপ দিয়ে আমরা কম্পিউটারে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকি।
মাউসের আবিষ্কারক ডগলাস অ্যাঙ্গেলবার্ড ১৯৬৮ সালের ৮ ডিসেম্বর এক তথ্য প্রযুক্তি সম্মেলনে সেটিকে জনসমক্ষে হাজির করেন। তবে তখনও তিনি ঠিক করে উঠতে পারেননি তাঁর আবিস্কৃত বস্তুটির কি নামকরণ করবেন। সম্মেলনে কোনও এক প্রতিনিধি এর আকার এবং আকৃতি দেখে একে মাউস বলে অভিহিত করেন। ব্যস, সেই থেকেই এই বস্তুটি সারা বিশ্বে ‘মাউস’ নামে পরিচিত হয়ে যায়।
কম্পিউটার প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মাউসেরও আকার, আকৃতি এবং প্রয়োগক্ষেত্রে বিস্তৃতি আর পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমদিকে এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল অ্যাপেল কোম্পানি ম্যানিকটোস কম্পিউটারের সঙ্গে। পরবর্তী কালে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার শুরু হওয়ায় মাউসের প্রচলন দারুণভাবে বেড়ে যায়।
মাউস নিয়ে ঠিকমত কাজের জন্য দরকার হয় একটি ছোট প্যাডের। এর আকার প্রায় আট ইঞ্চি বাই আট ইঞ্চি। এই মাউস প্যাড তৈরির জন্যও গড়ে উঠেছে অনেক ছোট খাটো শিল্পোদ্যোগ। একটু ভারি ধরনের এবং প্যাডের ওপরের দিকটা একটু খসখসে রাফ ধরনের গ্যাড সবচেয়ে ভাল। অবশ্য মাউস প্যাড যে ব্যবহার করতেই হবে তেমন কোন কথা নেই, খসখসে ধরনের টেবিলের ওপর মাউসকে রেখেও কাজ করা যায়।
বর্তমানে বাজারে মোটামুটি দুই ধরনের মাউস প্রচলিত রয়েছে—সিরিয়াল মাউস এবং পি এস/২ মাউস। মাউস বিভিন্ন রকমভাবে কাজ করলেও একটি বলের সাহায্যে সেনসার ঘোরানর পদ্ধতিযুক্ত মাউস সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত। সেনসারের সঙ্গে যুক্ত একটি বল যার কিছুটা অংশ মাউসের নিচের দিক থেকে বেরিয়ে থাকে, যখন আমরা মাউসকে প্যাডের ওপর বিভিন্ন দিকে সরাই তখন এই বলটি প্যাডের সংস্পর্ষে এসে ঘুরতে থাকে এবং বলের সঙ্গে লাগান সেনসারগুলিকে ঘোরায়। মাউসের ভেতরের ইলেকট্রনিক সার্কিট এই সেনসারের মুভমেন্টকে বুঝতে পারে এবং প্রয়োজনীয় ডেটা প্রেরণ করে। সিস্টেমে অবস্থিত মাউস ড্রাইভার সফটওয়্যার এই ডেটা গ্রহণ করে মাউস কার্সারের সঠিক অবস্থান পদায় ফুটিয়ে তোলে।
ক্রমাগত মাউস ব্যবহারের ফলে হাতের এবং আঙুলের পেশীতে টান পড়ে। এর ফলে অনেকেই অনুভব করেন এক ধরনের ব্যাথা। চিকিৎসকদের ভাষায় এই রোগের নাম ‘টেভিনিটিস’। তবে বর্তমানে নির্মাতারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন এর আকৃতি এবং ডিজাইনকে পরিবর্তন করে উক্ত রোগের প্রভাব কমানর। আশা করা যায় এই নতুন ডিজাইনের মাউস হাতের ব্যাথা দূর করতে অনেকাংশে সক্ষম হবে।