হাতুড়ি-রেঞ্জে আঁকা জীবনের লড়াই; সংসারের হাল ধরেছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের অঞ্জলি দেবী

জয়দীপ মৈত্র, দক্ষিণ দিনাজপুর : নারী শুধু সংসারই নয়, প্রয়োজন হলে জীবনের রঙ বদলে দেন। কখনো মা, কখনো স্ত্রী, কখনো আবার লড়াকু যোদ্ধা হয়ে ওঠেন তিনি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বংশীহারী ব্লকের কুসুম্বা গ্রামের অঞ্জলি বর্মন যেন তারই এক জীবন্ত উদাহরণ। সংসারের হাল ধরতে পুরুষ-অধ্যুষিত পেশা বেছে নিয়েছেন তিনি—সাইকেল সারাইয়ের দোকান।

গত চার বছর ধরে গ্রামের রাস্তার পাশে ছোট্ট দোকান খুলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতুড়ি, রেঞ্জ, স্ক্রু-ড্রাইভার নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন অঞ্জলি দেবী। সাইকেলের পাশাপাশি মোটরসাইকেলেরও ছোটখাটো মেরামতির কাজ করেন তিনি। এলাকার অনেকেই প্রথমদিকে চমকে গিয়েছিলেন—একজন মহিলা সাইকেল সারাই করছেন! কেউ কেউ কটুক্তিও করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই বিস্ময় মিলিয়ে গিয়ে আজ অনেকেই নির্ভর করেন তাঁর দোকানের ওপর।

অঞ্জলির কথায়, “ছেলেরা যদি সব কাজ করতে পারে, আমরা মেয়েরা কেন পারব না? যা আয় হয়, তাতেই সংসার মোটামুটি চলে যায়। অন্তত ভিক্ষার ঝুলি নিতে হয়নি।”

একসময় স্বামীই সংসার চালাতেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আর কাজ করতে পারেন না। সেই দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন অঞ্জলি বর্মন। সংসার চালানো, সন্তানের দায়িত্ব, আবার দোকানে সারাদিনের পরিশ্রম—সবকিছু একসঙ্গে সামলাচ্ছেন তিনি।

গ্রামের মহিলারা যেখানে এখনো গৃহস্থালির কাজের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ, সেখানে অঞ্জলি বর্মন আজ আলোচিত নাম। তাঁর লড়াই শুধু নিজের নয়—সমাজে অন্য নারীদের কাছেও এক অনুপ্রেরণা।

বলাই বাহুল্য, হাতুড়ি-রেঞ্জ হাতে নিয়ে জীবনের যুদ্ধ লড়ে অঞ্জলি বর্মন প্রমাণ করেছেন—নারীর শক্তিই জীবনের আসল ভরসা। তিনি যেন প্রতিটি গ্রামীণ নারীর কাছে প্রতিবাদের প্রতীক, সাহসের প্রতিচ্ছবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *