বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসের ভাবনা : উত্তরের হিমালয়ের পাখি বৈচিত্র কিছু কথা

অরুণ কুমার : পরিযায়ী পাখির  আবাসস্থলকে নিরাপদ রাখা ও পাখিদের বিচরণস্থল সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিবছর মে ও অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় শনিবার বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস (World Migratory Bird Day) পালিত হয়। এবছরের বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসের থিম হল জল। পরিযায়ী পাখিদের সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৬ সাল থেকে এই দিবস পালন শুরু করা হয়। ২০০৮ সালে এ দিবসের শ্লোগান ছিল “পরিযায়ী পাখি: জীব বৈচিত্রের দূত”। পরিযায়ী পাখিদেরকে আগে অতিথি পাখি বলা হত। কিন্তু নিবিড় গবেষণায় দেখা গেছে যে এরা অতিথি নয়। বরং যে দেশে যায় সেখানে তারা ডিম পাড়ে এবং সেই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের হওয়া পর্যন্ত বাস করে। অর্থাৎ বৎসরের বেশ কয়েকমাস তারা ভিনদেশে বাস করে। বরং তারা নিজ দেশে বাস করে স্বল্প সময়ের জন্য। বর্তমান বিশ্বের জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একারণে পরিযায়ী পাখিরা মারাত্মক খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই অবস্থা দূরীকরণই এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য। আমাদের এই বঙ্গ হিমালয়ের পাদদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান প্রজাতির পক্ষী কুল। উত্তরবঙ্গের পর্যটন বিকাশের আঙিনায় পক্ষী উৎসব বা “নর্থ বেঙ্গল বার্ড ফেস্টিভ্যাল”এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আগামী দিনে এই “নর্থ বেঙ্গল বার্ড ফেস্টিভ্যাল” পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চলেছে বিভিন্নভাবে। আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম উত্তরবঙ্গ বার্ড ফেস্টিভ্যালের অন্যতম আয়োজক পরিবেশপ্রেমী ডা: অঞ্জন কুমার দাসের সাথে। আজকের এই দিনটি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে অনেক কিছু অজানা তথ্য উঠে এলো।

বঙ্গ হিমালয়ের পাদদেশে তরাই ডুয়ার্স অঞ্চলের যত ধরনের পাখি দেখা যায় সেই অর্থে উত্তরবঙ্গ কে বার্ডিং ওয়ান্ডারল্যান্ড বলে অভিহিত করাতে থাকে ‌। প্রতিবছর উত্তরবঙ্গের পাখি বৈচিত্র কে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় উত্তরবঙ্গ পাখি উৎসব বা নর্থ বেঙ্গল বার্ড ফেস্টিভ্যালের আয়োজক অ্যাসোসিয়েশন অফ কনজারভেশন অফ ট্যুরিজম নামে একটি বেসরকারি পরিবেশ পর্যটন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এর সম্পাদক ডাক্তার অঞ্জন কুমার দাস জানিয়েছেন ইতিমধ্যে তারা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বন জঙ্গল জলাভূমি নদীর পাড় ও অন্যান্য জায়গায় সমীক্ষা চালিয়ে প্রায় সাড়ে চারশর বেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সনাক্ত করেছেন এবং। তার একটি তালিকা তৈরি করেছেন। তিনি নিজেও একজন পক্ষে প্রেমী এবং ছবি তুলতে ভালোবাসেন তার মতে উত্তরবঙ্গে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায় সারা ভারতে যেখানে ১২৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে এবং এর মধ্যে ৯০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে উত্তরবঙ্গের বিশেষ করে গজলডোবা রসিক বিল আলিপুরদুয়ারের রসিক বিল আটিয়া মোচড় , রাজাভাতখাওয়া, লাভা লোলেগাঁও মংপো থেকে আরম্ভ করে রঙগিত মাজুয়া প্রভৃতি জায়গায় এই নানান ধরনের নানান প্রজাতির পরিযায়ী ও স্থানীয় পাখিদের দেখতে পাওয়া যায় বছরের বিভিন্ন সময়ে। ছাড়াও ব্যতিক্রমী ছবি আমরা দেখতে পাবো কোচবিহার সাগরদিঘির পারে গ্যালাহান বার্ডসের এগুলি সাইবেরিয়া থেকে আসে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কুলিক পাখিরালয় আমরা পরিযাই পাখিদের দেখা পাই। তারপর ফারাক্কা জঙ্গিপুরে গঙ্গার ধার ভেসেও দেখা মিলবে নানান ধরনের পাখিদের। উত্তরের হিমালয় হাজার বারোশো ফিট অলটিচিউডে নানান ধরনের পাখি দেখতে পাওয়া যায় বলে ডঃ দাস জানিয়েছেন।

তাই নয় উত্তরবঙ্গের সবথেকে বড় যে জলাশয়গুলি রয়েছে বিশেষ করে গজল ডোবার পাশাপাশি ফুলবাড়ি ব্যারেজ রসিক বিল এর সংলগ্ন আরো ছোট বড় মাঝারি ধরনের জলাশয় রয়েছে। সেগুলোর সংরক্ষণ নজরদারি আরো বেশি করে প্রয়োজন আছে পাখিদের বাসস্থানগুলোকে সুরক্ষিত করে রাখার ক্ষেত্রে। উত্তরবঙ্গের হিমালয়ের পাদদেশ সংলগ্ন এলাকায় বড় সংখ্যায় যে পাখি দের আনাগোনা রয়েছে সেগুলো আস্তানা বা আবাসস্থলের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতার প্রয়োজন।

সব থেকে বড় পাখি উৎসব নর্থ বেঙ্গল বার্থ ফেস্টিবলের কর্ণধার পক্ষী প্রেমী ডা: অঞ্জন কুমার দাসের মতে, পাখিদের সব থেকে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেটা হচ্ছে তাদের যাতায়াত বা যে সমস্ত আকাশ পথ দিয়ে তারা আবা গমন করে থাকে সেই প্যাসেজ আজ নানান ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। জল যা পাখিদের জীবন ধারণের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু তা সবথেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।

ডা: দাসের মতে, উত্তরবঙ্গের পাখিদের আস্তানা এবং যাতে পরিযায়ী পাখিরা আরও বেশি সংখ্যায় উত্তরবঙ্গের জলাভূমি গুলোতে আসতে পারে সেই বিষয়টা সুনিশ্চিত করা দরকার এবং এই জলাভূমিগুলোকে প্রটেকশন বা সংরক্ষণ করা জরুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *