পুরুলিয়ার কাশীপুর রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজা

জলপাইগুড়ি নিউজে বিশেষ রিপোর্ট : এই রাজ্যের পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর রাজবাড়ির পূজো অনেক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক দুর্গাপূজা। প্রায় চারশ বছরের পুরোনো এই পূজো ঘিরে সমগ্র পুরুলিয়া ঘিরে আছে উচ্ছ্বাস, আনন্দ ও ভালোবাসা। প্রসিদ্ধ এই পূজো আশেপাশের এলাকার মানুষদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শোনা যায়, এই রাজবাড়িতে অধিষ্ঠিত দেবী রাজ-রাজেশ্বরী, বারোমাসেই হয়ে থাকে ওনার পূজো। জেলার রঘুনাথপুর ও অন্যান্য এলাকার মানুষের কাছে কাশীপুর রাজবাড়ির দুর্গাপূজা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথারিতী নিয়ম মেনে রাজপুরোহিতের দ্বারা এই পূজো সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রচুর দর্শনার্থী আসেন দেবীদর্শনে। রাজপুরোহিত শ্রী স্বপন হাজরার কথায় মহালয়ার দিন থেকেই আয়োজিত হতে থাকে পূজার যাবতীয় কার্যক্রম। উনি প্রায় চব্বিশ বছর ধরে এই পূজো করে আসছেন। বংশ পরম্পরায় পুরোহিত নিয়জিত হয়ে থাকে এখানে।

রাজপুরোহিত স্বপন হাজরা জানিয়েছেন,
এখানে পূজো হয়ে থাকে ঘড়ির কাঁটা ধরে। যা বাইরের মন্ডপ/বারোয়ারি পূজো গুলোতে লক্ষ্য করা যায় না। সপ্তমীর রাত্রে হয়ে থাকে মহাশক্তির আরাধনা; যা এই রাজবাড়ীর পূজোর অন্যতম বৈশিষ্ট। এখন যদিও বলিপ্রথা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ, তবে প্রায় বাইশ/তেইশ বছর আগে হয়ে থাকত পশুবলি। তবে এখন মায়ের পূজো হয়ে থাকে সম্পূর্ণ নিরামিষাশী। বৈষ্ণব মতে হয়ে থাকে পূজোর যাবতীয় আয়োজন। পূজো ক’দিন মায়ের অন্নভোগ দেওয়া হয়ে থাকে। ভোগের আয়োজন পর্ব চলে রন্ধনশালাতে, ও রাঁধুনি ঠাকুরেরাই এসব কিছুই পরিচালনা করে থাকেন। দর্শনার্থী বিজয় মহান্তের কথায়- এই কাশীপুর রাজপরিবার আসলে পঞ্চকোট রাজবংশের শেষ একটা রাজপরিবার। কয়েকশ বছর আগে পঞ্চকোট পাহাড়ের পাদদেশে এই রাজবংশ বসবাস করত। সেখান থেকে বর্গিরাজাদের আক্রমণের পর কাশীপুরের যিনি মহারাজা ছিলেন উনি রঘুনাথপুর পালিয়ে আসেন সপরিবারে; এবং তারপর থেকে এখানেই অর্থাৎ পুরুলিয়ার কাশিপুরে পুরোপুরি ভাবে অবস্থান করেন। তারপর ধীরে ধীরে উনি ওনার সাম্রাজ্য বিস্তার করেন ও কাশীপুরের এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন ও সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। দুর্গাপূজার প্রচলন করেন যা আজও অব্যাহত।

তিনি আরও বলেন যে, প্রচলিত একটি কথিত আছে, পূজোর অষ্টমী তিথিতে নিশিপূজোর সময় নাকি সিঁদুরের থালার মধ্যে মায়ের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। সেই সময়টাতে ঠাকুর দালান ভারী পর্দা দিয়ে আচ্ছাদন করে দেওয়া হয় এবং সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে শুধু সেই সময়টুকু মাত্র। বিশ্বাস আর আস্থার মাঝে আনন্দ টুকুই সত্য, তাই মানুষ এই ক’দিন আনন্দের জোয়ারে মেতে থাকেন। রাজবাড়ির সদর দরজা থেকে ঠাকুর দালান প্রাঙ্গন সর্বত্র থাকে মানুষজনের জন্য খোলামেলা। অবাধ যাতায়াত লেগেই থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যে।

পুরুলিয়ার কাশিপুর রাজবাড়ি থেকে ভাগ্যশ্রী সিংহের সঙ্গে অরুন কুমারের রিপোর্ট জলপাইগুড়ি নিউজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *