সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি : চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য জলপাইগুড়ি পুরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের পান্ডাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুবোধ ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন উপ পুরমাতা অপর্ণা ভট্টাচার্যের শনিবার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া চার পাতার সুইসাইড নোটে লেখা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও সুইসাইড নোটে হাতের লেখা, স্বাক্ষর আদৌ সুবোধ ভট্টাচার্য ও অপর্না ভট্টাচার্যের কি না তা নিয়ে পুলিশ এখনো কিছুই জানায় নি।

স্বামী-স্ত্রীর লেখা সুইসাইড নোটে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার উপ পুরপিতা সৈকত চ্যাটার্জি, ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্দীপ ঘোষ, সোনালী বিশ্বাস ও মনোময় সরকারের নাম উঠে এসেছে বলে সূত্রের খবর। সুইসাইড নোটে রাজনৈতিক নেতাদের চাপের কাছে অসম্মানিত হয়েই ‘আত্মহত্যা’র পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন ভট্টাচার্য দম্পতি লিখেছেন বলে খবর। সেই সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে রবিবার জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার দারস্থ হলেন মৃত সুবোধ ভট্টাচার্যের দিদি ডাবগ্রাম ফুলবাড়ী বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়িকা শিখা চ্যাটার্জী। দম্পতি অপর্ণা ভট্টাচার্য এবং সুবোধ ভট্টাচার্যকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে উপরোক্ত চারজনের নামে রবিবার জলপাইগুড়ি কোতয়ালী থানায় এফআইআর করেন এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানান।

থানায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিধায়িকা শিখা চ্যাটার্জি বলেন, শিশু পাচার কাণ্ডে সৈকত ও অন্য নেতারা যুক্ত ছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালী বলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযুক্তরা বিভিন্নভাবে তাঁর ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর ওপর চাপ তৈরি করাতেই তাঁরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবী করেন শিখা দেবী।

অপরদিকে জলপাইগুড়ির পুরসভার উপ পুরপিতা তথা জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সৈকত চ্যাটার্জী শিখা দেবীর করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানান, ২০১৩- ‘১৪ সালে সোনালি বিশ্বাস নামে এক মহিলা তাঁর স্বামী দিব্যেন্দু বিশ্বাসের জলপাইগুড়ি পুরসভায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে চাকরির জন্য ওই দম্পতিকে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তৎকালীন তৃণমূল নেত্রী শিখা চ্যাটার্জীর সঙ্গে মৃত দম্পতির পারিবারিক সম্পর্ক দেখেই সোনালি দেবী ওই টাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি সৈকত চ্যাটার্জীর। সৈকত বলেন, আমাকে যদি এই গ্রেপ্তার করতেই হয়, তাহলে শিখা চ্যাটার্জীকেও গ্রেপ্তার করতে হবে। কেন অপর্ণার মেয়ে তানিয়া ভট্টাচার্য অভিযোগ দায়ের করলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সৈকত। এছাড়া সুইসাইড নোটে হাতের লেখা মৃতদের নয় বলেও দাবী সৈকত বাবুর। তিনি জানান, দোষী প্রমাণিত হলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।

পাশাপাশি এদিন জলপাইগুড়ি বিজেপি জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিজেপি জেলা সভাপতি বাপী গোস্বামী। বাপি বাবু অভিযোগ করেন, শিশু পাচারের ঘটনায় বিজেপির নামে অভিযোগ তুলেছিলেন সৈকত চ্যাটার্জী।
সিআইডির তদন্তকারী অফিসারকে সরিয়ে অন্যকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এরাই। মস্তানি করা, দাদাগিরিতে যুক্ত থাকা, জমি মাফিয়া অভিযুক্তদের অবিলম্বে এই গ্রেপ্তার করতে হবে। এরা দম্পতির উপর মানসিক চাপ তৈরি করেছিল। পুলিশ যদি এঁদের গ্রেপ্তার না করে তাহলে বিজেপি জেলাজুড়ে আন্দোলনে নামবে।