দুই বছর পরে তারাপীঠে হচ্ছে কৌশিকী অমাবস্যা, ভিড়ে ঠাসা মন্দির চত্বর

সংবাদদাতা, বীরভূম, ২৭ আগস্ট : কথিত আছে পুরাকালে দানব দ্বারা পীড়িত ক্লান্ত দেবতারা যখন কৈলাশে আশ্রয় নিলেন, তখন শিব সব দেবতাদের সামনেই মা পার্বতীকে বলেন, “কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।” সবার সামনে ‘কালী’ বলে ডাকায় মা পার্বতী অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন, অপমানিত মা পার্বতী ক্রদ্ধ মনে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যায় মগ্ন হন। তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো পরিত্যাগ করলেন ও পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন সেই সঙ্গে কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। ইনি দেবী কৌশিকী। শুক্রবার ছিল সেই তিথি, যে দিন এই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা। আবার এই দিনে দশ মহাবিদ্যার অন্যতম দেবী মা তাঁরা মর্ত ধামে আবির্ভূত হন। আবার এই দিনেই মা তাঁরা তার মানস পুত্র বামদেবকে প্রথম দর্শন দেন। এই উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বীরভুম জেলার তারাপীঠে প্রতিবছর বিশেষ পুজা পাঠ তৎসহ হোম যোজ্ঞের আয়োজন উত্‍সব হয়৷ জনশ্রুতি আছে এই দিনে তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথিতে সাধনা করলে আশাতীত ফল মেলে। সাধক তার কুলকুণ্ডলিনী চক্রকে জাগ্ৰত করার শক্তি অর্জন করে। এই দিনেই এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক উভয়েরই দ্বার মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো শুভ অথবা অশুভ শক্তির সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন৷ স্বাভাবিক ভাবেই এই বিশেষ অমাবশ্যা তিথিতে তারাপীঠে বিপুল ভক্ত সমাগম হয় মোক্ষলাভের উদ্দেশ্যে। তারাপীঠ মন্দির কমিটি জানিয়েছে, গত দু’বছর থেকে করোনা মহামারীর জন্য তারাপীঠে তারা মায়ের মন্দিরে কৌশিকী আমাবস্যা বন্ধ ছিল। বর্তমানে কিছুটা স্বাভাবিক হাওয়ায় এই বছর প্রশাসনের নির্দেশে কৌশিকী অমাবস্যায় দর্শনার্থীর পুজো দিতে পারবেন মন্দিরে। কৌশিকী অমাবস্যার তিথি পড়েছে ২৬ আগস্ট অর্থাৎ শুক্রবার বেলা ১২ টা বেজে ০২ মিনিট থেকে এবং শনিবার দুপুর ১ টা বেজে ২৫ মিনিট পর্যন্ত। এই বিশেষ তিথিতে তারাপীঠ মহাশ্মশান এর শ্বেত শিমুল তলায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সাধক ব্যামাক্ষ্যাপা। কথিত আছে এই তিথিতে দ্বারকা নদীতে স্নান করে তারা মায়ের পুজো দিলে পাপ নাশ হয়। সেই বিশ্বাস কে কেন্দ্র করে প্রত্যেক বছর আজকের এই বিশেষ দিনে বহু ভক্ত ভিড় করেন। সকাল থেকেই লম্বা লাইনে পড়েছে পুজো দেওয়ার জন্য। কার্যত ভিড়ে ঠাসা। মন্দির কমিটির আশা এবছর প্রায় ছয় লাখ ভক্ত সমাগমের, সেই জন্য শুক্রবার সারা রাত মন্দিরের গর্ভ গৃহ ভক্তদের জন্য খোলা রাখবেন, সেই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন ও সতর্ক রয়েছে যেকোনো রকম অপ্রিতিকর পরিস্থিতির রাতে সৃষ্টি না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *