বৈভব সূর্যবংশীর ব্যাটিং ঝড় : সমালোচনার জবাব দিলেন মাঠে; ভারত সেমিফাইনালে

পিনাকী রঞ্জন পাল : সমালোচনা হজম করাটা সহজ নয়, বিশেষত যখন তা আসে বয়স আর অভিজ্ঞতার প্রশ্নে। মাত্র ১৩ বছর বয়সি বৈভব সূর্যবংশী সেই সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন অনূর্ধ্ব এশিয়া কাপের পরপর দুই ম্যাচে রান না পাওয়ায়। কিন্তু গতকাল সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে তাঁর ব্যাটিং ঝড় যেন সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিল। সমালোচনার জবাব তিনি দিয়েছেন ব্যাট হাতে। মাঠের প্রতিটি শট যেন মূর্ত হয়ে উঠেছিল তাঁর আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ। দলকে সেমিফাইনালে তুলতে তিনি যেমন দুর্দান্ত খেললেন, তেমনি প্রমাণ করলেন কেন তাঁকে ৩০ লক্ষের বেস প্রাইস ছাপিয়ে এক কোটি দশ লক্ষ টাকা দিয়ে আইপিএল-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ম্যাচ শুরুর আগে সমালোচকদের তিরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন বৈভব। প্রথম দুই ম্যাচে রান না পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছিল, “এমন অল্পবয়সি খেলোয়াড়কে কেন আইপিএলে নেওয়া হলো?” কিন্তু গতকালের ইনিংসে তিনি প্রথম বলেই ছক্কা মেরে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করেন। এরপর প্রতিটি বলেই যেন আত্মবিশ্বাসের ঝলক দেখালেন। শেষ পর্যন্ত ৭৬ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করলেন শেষ বলটি ছক্কা মেরে। তাঁর ইনিংসের মধ্যে ছিল ছ’টি ছক্কা এবং তিনটি চার।

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে এই ম্যাচের আগে বৈভবকে ঘিরে যতটা সন্দেহ তৈরি হয়েছিল, তা বেশ যৌক্তিক মনে হয়েছিল অনেকে। আইপিএল নিলামে তাঁকে রাজস্থান রয়্যালস কেনার পর থেকে তাঁর প্রতি প্রত্যাশার চাপ বেড়েছিল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এত বড় মঞ্চে জায়গা পাওয়া সহজ নয়। অথচ এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করে, ১২ বছর বয়সে বিহার রঞ্জি দলে জায়গা করে নেওয়া এই প্রতিভা দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি ব্যতিক্রমী।

তবু আইপিএল নিলামের পরে ব্যর্থতার সেই শুরুর চাপ যে বৈভবের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, তা তাঁর গতকালের ইনিংসের মধ্যেই স্পষ্ট। তাঁর ব্যাটিং ছিল আক্রমণাত্মক, যেন সমালোচকদের প্রতি এক শক্তিশালী জবাব। বৈভব প্রমাণ করলেন, প্রতিভা আর মানসিক দৃঢ়তা একসঙ্গে থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়।

গতকাল ম্যাচের শুরুতে ভারতীয় দলকে স্বস্তি দিয়েছিলেন বাংলার যুধাজিৎ গুহ। তাঁর দুর্দান্ত বোলিং স্পেল সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর ব্যাটিং লাইনআপকে চেপে ধরে। মাত্র ১৫ রান দিয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন তিনি। আমিরশাহির ১৩৭ রানের চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে মাঠে নেমেই মারমুখী হয়ে ওঠে বৈভব। এদিন ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে মাঠে নামেন বৈভব। শেষপর্যন্ত ৭৬ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়ে এদিন।

এই জয়ে ভারত সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে। শারজার মাঠে এই ম্যাচটি ভারতীয় দলের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, বিশেষত স্পিন-বান্ধব উইকেটে। বৈভবের ফর্ম ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ভারত ও শ্রীলঙ্কা ছাড়াও পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে উঠেছে। শুক্রবার হবে দু’টি সেমিফাইনাল। ফাইনাল রবিবার।

বৈভব সূর্যবংশীর গতকালের ইনিংস শুধু ভারতীয় দলের জন্য নয়, তাঁর নিজের কেরিয়ারের জন্যও একটি মোড় পরিবর্তনের দিন। তরুণ প্রতিভাদের ক্ষেত্রে চাপ এবং প্রত্যাশা একইসঙ্গে যেমন শক্তি দেয়, তেমনি তা তাঁদের ভেঙে দেওয়ারও ক্ষমতা রাখে। বৈভব আজ দেখিয়ে দিলেন, কেবল প্রতিভা নয়, মানসিক দৃঢ়তাও তাঁকে আরও বড় মঞ্চে সফল হতে সাহায্য করবে।

সেমিফাইনালের আগে রাজস্থান রয়্যালস এবং দ্রাবিড়ের প্রশিক্ষণ দল নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছে এই ঝোড়ো ইনিংস দেখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *