জলপাইগুড়ি : ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল হতেই তীব্র আলোড়ন জলপাইগুড়ি পুলিশ মহলে। মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের ঠিক আগে এমন ঘটনার প্রকাশ্যে আসা প্রশাসনের গায়ে বড় ধাক্কা। ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নিল জেলা পুলিশ—বরখাস্ত করা হল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার কানু রায়কে, ক্লোজ করা হয়েছে ধূপগুড়ির আংরাভাসা পুলিশ ক্যাম্পের এক সাব-ইন্সপেক্টরকেও।

ভাইরাল ভিডিও দু’টি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসার পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। একটি ভিডিওয় দেখা যায়, জলপাইগুড়ি শহরের বড় পোস্ট অফিস মোড়ের ট্রাফিক বুথে সিভিক ভলান্টিয়ার এক বাইক আরোহীর কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন এবং বুথের ভেতরে গুনে দেখছেন। অন্য ভিডিওয় ধূপগুড়ির আংরাভাসা ক্যাম্পের সামনে এক পুলিশ অফিসার এক স্কুটারচালকের কাগজে অসঙ্গতি দেখিয়ে সরাসরি টাকা নিচ্ছেন। দুটি ক্ষেত্রেই ভিডিও ক্যামেরাবন্দি করেছেন উপস্থিত নাগরিকেরা, সম্ভবত গোপনে।

ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়ায় জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খান্ডবাহালে জানান, “ভিডিও দুটি নজরে আসার পরেই প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে দু’জনের বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের আস্থা বজায় রাখতে এ ধরনের দুর্নীতির কোনও স্থান নেই।”
সূত্রের খবর, বড় পোস্ট অফিস মোড়ে নিয়মিত ট্রাফিক চেকিং চললেও, সিভিক ভলান্টিয়ারের এই আচরণ দেখে হতবাক পুলিশ মহল। ভিডিওতে পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে, অভিযুক্ত ভলান্টিয়ার ‘ঘুষ’ হিসাবে নির্দিষ্ট অঙ্ক দাবি করছেন, আর বাইকচালক তাতে অপারগতা প্রকাশ করলেও তা মানছেন না তিনি।
ধূপগুড়ির ঘটনায় একধাপ এগিয়ে, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার স্কুটারচালককে থামিয়ে নিজের হাতে স্কুটার চালিয়ে ক্যাম্পের সামনে এনে কাগজ পরীক্ষা করেন। তারপর সরাসরি টাকা দাবি করেন এবং এক হাজার টাকায় ‘রফা’ হয়। তরুণ স্কুটারচালক জানাচ্ছেন, তিনি শুধু ওষুধ কিনতে ধূপগুড়ি যাচ্ছেন, হাতে সামান্য টাকা রয়েছে। তবু ছাড় মেলেনি।
এই দুই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ার নানা প্ল্যাটফর্মে চলছে নিন্দার ঝড়। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে অনলাইনে ট্রাফিক ফাইন নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে কেন এমন প্রকাশ্য ঘুষ নেওয়ার ঘটনা ঘটছে?

উল্লেখযোগ্য, ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোর সত্যতা জলপাইগুড়ি নিউজ নিজে যাচাই করতে পারেনি। তবে জেলা পুলিশের তরফে দ্রুত পদক্ষেপে আস্থার বার্তা দিতে চেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যদিও জনমানসে প্রশ্ন রয়ে গেছে—কতটা বদলাবে এই ব্যবস্থার মনোভাব? এবং এমন আরও ভিডিও সামনে এলে, কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে তখন?
দুই পরপর দুর্নীতির ঘটনার জেরে, মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের প্রাক্কালে মুখ পুড়ল পুলিশের। প্রশাসনের উচিত এখন শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়, গোড়া থেকে সংস্কার। নইলে ভাইরাল হবে আরও অনেক ভিডিও, আর হারাবে জনআস্থা—ধাপে ধাপে।