ডিজিটাল ডেস্ক : বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবুও অনেক গ্রাহক আছেন যাঁদের মোবাইল ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কেবলমাত্র কল করা ও এসএমএসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁদের কথা মাথায় রেখে ভারতের টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি (TRAI) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করে। নির্দেশ অনুযায়ী, টেলিকম সংস্থাগুলিকে বাধ্যতামূলক ইন্টারনেট প্যাক ছাড়াই কেবলমাত্র ভয়েস কলিং এবং এসএমএসের জন্য প্ল্যান চালু করতে হবে।
TRAI-এর এই নির্দেশিকাকে বাস্তবায়িত করে ভারতীয় টেলিকম কোম্পানিগুলি—Bharti Airtel, Reliance Jio, এবং Vi (Vodafone Idea)—নতুন ধরনের প্ল্যান চালু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই নতুন পরিকল্পনা কি সত্যিই গ্রাহকদের পকেটের চাপ কমিয়েছে, নাকি নতুন নামে তাঁদের ওপর আরও বেশি খরচের বোঝা চাপানো হয়েছে?

নতুন প্ল্যানের বিবরণ : নতুন চালু হওয়া এই প্ল্যানগুলিতে ইন্টারনেট ব্যবহারের কোনও সুবিধা নেই। তবে ভয়েস কল এবং এসএমএসের সুবিধা বজায় রাখা হয়েছে। যেমন, Airtel-এর ৪৯৯ টাকার প্ল্যানে ৮৪ দিনের বৈধতা সহ আনলিমিটেড কলিং এবং ৯০০টি এসএমএস পাঠানোর সুবিধা রয়েছে। একইভাবে, Reliance Jio-এর ৪৫৮ টাকার প্ল্যানেও ৮৪ দিনের মেয়াদে আনলিমিটেড ভয়েস কল এবং ১,০০০টি এসএমএসের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
Vi (Vodafone Idea) কোম্পানি ১,৪৬০ টাকায় ২৭০ দিনের জন্য আনলিমিটেড কল এবং ১০০টি এসএমএসের সুবিধা চালু করেছে। তবে, অন্যান্য সংস্থার তুলনায় Vi-এর প্ল্যানে অতিরিক্ত কোনও সাবস্ক্রিপশন সুবিধা নেই।
ট্রাইয়ের উদ্দেশ্য এবং টেলিকম সংস্থার বাস্তবায়ন :
TRAI-এর নির্দেশিকাটি মূলত সেইসব গ্রাহকদের জন্য উপকারী, যাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। অহেতুক ডেটা প্যাকের খরচ বাঁচানোই ছিল এর মূল লক্ষ্য। কিন্তু বাস্তবে, নতুন প্ল্যানগুলির দাম বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, আগের ইন্টারনেটসহ প্যাকের তুলনায় দাম খুব একটা কমানো হয়নি।
Jio-এর উদাহরণ ধরা যাক। ৪৫৮ টাকার নতুন প্ল্যানে ইন্টারনেট সুবিধা নেই। অথচ আগে ৪৭৯ টাকায় ৬ জিবি ডেটা-সহ একটি প্যাক ছিল, যার মেয়াদও ছিল ৮৪ দিন। ইন্টারনেট বাদ দেওয়ার পরেও দাম মাত্র ২১ টাকা কমানো হয়েছে। একইভাবে, ১,৯৫৮ টাকার বার্ষিক প্ল্যানেও আগের তুলনায় ইন্টারনেট বাদ দেওয়ার পর মাত্র ৫৯ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গ্রাহকের পকেটে চাপ : নতুন প্ল্যানগুলির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, স্বল্পমেয়াদি বা মাসিক রিচার্জের অভাব। প্রতিটি প্ল্যানেই দীর্ঘমেয়াদি বৈধতা রাখা হয়েছে, যার ফলে এককালীন রিচার্জে গ্রাহকদের একটি বড় অঙ্কের টাকা খরচ করতে হচ্ছে। মাসিক খরচের হিসেব করলেও দেখা যাচ্ছে, ইন্টারনেট ছাড়া এই প্ল্যানগুলিতে গ্রাহকদের প্রায় ২০০ টাকার মতো খরচ করতে হচ্ছে।
TRAI-এর উদ্দেশ্য বনাম বাস্তবতা : TRAI-এর মূল লক্ষ্য ছিল গ্রাহকদের খরচ কমানো। কিন্তু টেলিকম সংস্থাগুলি নতুন প্ল্যানের মাধ্যমে সেই উদ্দেশ্যকে কার্যত উপেক্ষা করেছে। গ্রাহকরা যাঁরা কেবলমাত্র কলিং এবং এসএমএসের জন্য রিচার্জ করতে চান, তাঁরাও এখন বাধ্য হচ্ছেন বেশি টাকা খরচ করতে।
TRAI-এর নির্দেশিকা গ্রাহকদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য জারি করা হলেও, টেলিকম সংস্থাগুলির এই নতুন প্ল্যানগুলি কার্যত সেই সুবিধা দেয়নি। বরং, এটি একপ্রকার গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের আরেকটি পন্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বল্পমেয়াদি রিচার্জ এবং স্বচ্ছ প্ল্যানিং না এলে গ্রাহকদের ওপর থেকে এই বাড়তি চাপ কখনও কমবে না।