বারকোড কি? এর সুবিধা কি কি?

নামী দামী কোম্পানির জিনিসে লম্বা লম্বা সাদা কালো কিছু দাগ থাকে। যাকে বলা হয় ‘বারকোড’। বারকোড জিনিসটা কী? কবে কোথায় কেন বারকোডের ব্যবহার শুরু হয়। বারকোড ব্যবহারের সুবিধা কি? ইত্যাদি নানান জানা অজানা তথ্য নিয়েই লিখেছেন পিনাকী রঞ্জন পাল।

ওপরের ওই লম্বা সাদা কালো দাগগুলো আজকাল বিদেশি দ্রব্যসামগ্রীর পাশাপাশি বেশিরভাগ দেশি সামগ্রীর প্যাকেটেও দেখা যায়। এই দাগগুলোকেই বলা হয় ‘বারকোড’। এর পুরো নাম হচ্ছে ‘ইউনিভার্সাল প্রোডাক্ট কোড’। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে প্রায় ৯৫ শতাংশ ব্যাবসায়িক কাজে বারকোড ব্যবহৃত হয়। ধীরে ধীরে বারকোড পদ্ধতি আমাদের দেশেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তোমরা নামিদামি কোম্পানির গ্রিটিংস কার্ড কিনলে তার পেছনে এই পদ্ধতিতে দাম লেখা দেখতে পাবে। এছাড়াও ম্যাগাজিন, প্রসাধনী দ্রব্য, বিভিন্ন যন্ত্রাংশের প্যাকেটে এই বারকোড দেখা যায়।

বারকোডের প্রথম প্রয়োগ শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপার মার্কেটগুলিতে। এই বাজারের বেশিরভাগ খাবারের দোকানগুলোতে সময়ের সমস্যা হচ্ছিল। দাম মিটিয়ে কাস্টমারদের বিদেয় করতে প্রচুর সময় লেগে যাচ্ছিল। দোকানদারদের এই সমস্যা দূরীকরণে এগিয়ে এল ‘লজিকন’ নামে এক কোম্পানি। ১৯৬৯ সালে তারা একটা কোডিং পদ্ধতির প্রস্তাব দিল। লজিকনের এই প্রস্তাব চার বছর পরে যুক্তরাষ্ট্রের সুপার মার্কেট কমিটির অনুমোদন লাভ করে। এই কোডিং পদ্ধতির নাম দেওয়া হল ‘ইউনিভার্সাল প্রোডাক্ট কোড’, সংক্ষেপে ‘ইউপিসি’। এরপর অস্বাভাবিক গতিতে ইউপিসি সুপার মার্কেটে ছেয়ে যায়, মাত্র সাত-আট বছরের মধ্যে আমেরিকা তো বটেই এমনকি কানাডার সুপার মার্কেটে ব্যবহৃত হতে থাকে ইউপিসি। ইউরোপের দেশগুলো বারকোডের সুবিধা দেখে উৎসাহিত হয়ে এই প্রযুক্তি একে একে গ্রহণ করল। জাপানও তার দেশের উৎপাদিত পণ্যতে এই কোড ব্যবহারের অনুমতি দিল।

বারকোড জিনিসটা কী? বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর বারকোড লক্ষ করলে তোমরা দেখতে পারে যে, এতে ২৯টা সাদা ও ৩০টা কালো লম্বা দাগ রয়েছে। বারকোডের প্রতিটি সংখ্যা বোঝানোর জন্য দুটো সাদা ও দুটো কালো দাগ ব্যবহার করা হয়। পুরো বারকোডকে দুটো ভাগে ভাগ করা। হয়। একটাকে বলা হয় ‘বামপক্ষ’ এবং অপরটা ‘ডানপক্ষ’। বামপক্ষের একদম প্রথমে ও ডানপক্ষের একদম শেষে ‘গার্ডবার’ থাকে, যাদের সাহায্যে বারকোডের শুরু ও সমাপ্তির সংকেত বোঝা যায়। গার্ডবারের পরে বামপক্ষের প্রথম সংখ্যাটা রাখা হয় নম্বর পদ্ধতির জন্য। তার পরের পাঁচটা সংখ্যা উৎপাদনকারী বা কোম্পানির জন্য সংরক্ষিত। কোম্পানির বিভিন্ন তথ্য এতে ‘কোড’ করে রাখা হয়।

ডানপক্ষের প্রথম পাঁচটা সংখ্যা ব্যবহার করা হয় উৎপাদিত পণ্যের নানা তথ্য ধরে রাখার জন্য। এর পরের চারটে সাদা-কালো দাগ সংখ্যা পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। কোনও ভুলভ্রান্তি থাকলে তা এর সাহায্যে ধরা পড়ে। বারকোডের সংকেতগুলো চটজলদি পড়ে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয় ‘স্ক্যানার’। লম্বা সাদা কালো দাগগুলোর ওপর স্ক্যানারের সাহায্যে লেসার রশ্মি ফেলা হয়। কালো দাগের আলো পড়ে তা প্রতিফলিত হয় না। কিন্তু সাদা রেখাগুলো আলো প্রতিফলিত করে। এর থেকে এক ধরনের পরিবর্তিত প্রবাহের জন্ম হয়। এই পরিবর্তনশীল ভোল্টেজকে ডিকোডারের সাহায্যে পুনরায় আসল তথ্যে রূপান্তরিত করা হয়। এছাড়া খালি চোখে যাতে বারকোড পড়তে পারা যায় তার জন্য প্রতিটা কোডের নীচে নম্বর লেখা থাকে।

আমরা বারকোড কেন ব্যবহার করব ? বারকোড ব্যবহারে একদিকে যেমন পণ্যের উৎপাদন ও গুণমান বাড়ে তেমনি দাম ও মানুষঘটিত ভুল-ভ্রান্তি অনেক সময় কমে যায়। খুব তাড়াতাড়ি ও নির্ভুলভাবে পণ্যবস্তুর হিসেব দিতে বারকোডের কোনো বিকল্প নেই। ভারতে প্রথম বারকোড ব্যবহারের সূচনা করে গাড়ির যন্ত্রপাতি ও বস্ত্র উৎপাদনকারী কিছু দামি কোম্পানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *