পিনাকী রঞ্জন পাল
ভগবান তার সৃষ্ট পৃথিবীর জন্য বসবাসকারী সমস্ত প্রাণী তৈরি করে তাদের মধ্যে বুদ্ধি বিতরণ করছিলেন। সৃষ্ট প্রাণীদের মধ্যে ভগবানের সবচেয়ে প্রিয় ছিল –“মানুষ’। অতএব বুদ্ধির অধিকাংশই মানুষের ভাগে পড়ে। অন্য প্রাণীদেরও ভগবান অল্পস্বল্প করে বুদ্ধি বিতরণ করেন। সমস্ত পশুপাখি নিজেদের সীমিত বুদ্ধির দ্বারা দিন অতিবাহিত করতে থাকে।
প্রাণীদের প্রতি নিজের এই অবিচারে ভগবান অনুতপ্ত বোধ করে একদিন তিনি মানুষকে বাদ দিয়ে সবাইকে ডেকে পাঠান। প্রাণীরা সামনে এসে দাঁড়ালে ভগবান তাদের একে একে জিজ্ঞেস করেন তাদের নাম।
প্রাণীরা সকলে চুপচাপ নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারা কোনো উত্তর দিতে পারে না, কেন-না তারা এটাও জানে না যে তাদের নাম কী ? এসব দেখে ভগবানের করুণা হয়। তিনি সমস্ত প্রাণীদের নামকরণ করার মনস্থির করেন। কাউকে বাঘ, কাউকে হাতি, কাউকে ময়ূর, কাউকে বা পায়রা, ঘোড়া, গোরু, তোতা, বাঁদর, কুকুর, হরিণ প্রভৃতি নাম দিয়ে দেন। তখন সব প্রাণী খুশি হল যে তাদের একটা নাম হয়েছে। যখন তারা ফিরে যাচ্ছিল ভগবান বললেন-দেখো, সবাইয়ের আলাদা আলাদা নামকরণ করে দিয়েছি। প্রত্যেকে নিজের নাম মনে রাখবে। ভুলে যেও না। ছয়মাস পরে আমি তোমাদের সকলের পরীক্ষা নেব।
সব প্রাণী খুশি মনে সেখান থেকে চলে গেল। সবাই নিজের নিজের নাম বারংবার স্মরণ করে মনে রেখে দিল।
সময় কেটে যায়। দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেল। ভগবানের আদেশে সবাই পুনরায় একত্রিত হল। ভগবান গাছে গাছে লাফালাফি করতে থাকা প্রাণীকে বললেন- তোমার নাম কী ?
দাঁত কিটকিট করে সে জবাব দেয় -বাঁদর।
বিরাট দেহের অধিকারী এক প্রাণীকে ভগবান বললেন-তোমার নাম বল ?
মুখের ওপর থাকা শুঁড় দুলিয়ে সে উত্তর দেয়-হাতি।
এইভাবে ভগবান প্রত্যেক প্রাণীকে তার নাম জিজ্ঞাসা করতে থাকেন। আর প্রত্যেকে নিজের নিজের নাম বলতে থাকে। কুকুর, বিড়াল, ময়ূর, বাঘ, হরিণ, সাপ, উট, তোতা প্রভৃতি সবাই বড়োই উৎসাহিত হয়ে নাম বলে। অলসভাবে একটি ছোটো আকারের প্রাণী দূরেই চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। সবশেষে ভগবান তাকে দেখতে পেয়ে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেন-তোমার নাম কী ?
সে অবাক দৃষ্টিতে ভগবানকে দেখতে থাকে। কোনো উত্তর দিতে পারে না। আসল কথা হল যে প্রাণীটি নিজের নামই ভুলে গিয়েছিল। ভগবান ওর ওপরে ভীষণ ক্রুদ্ধ হন। তিনি বলেন -মূর্খ, গর্দভ। তোমার নিজের নাম পর্যন্ত মনে নেই ? কত বোকা তুমি !
কিন্তু তখনও সেই প্রাণীটি অলসভাবেই সেখানে দাঁড়িয়েছিল, যেন কিছুই হয়নি। ভগবান এই দেখে আর থাকতে না পেরে ক্রোধে ফেটে পড়েন। তিনি সেই প্রাণীর কান ধরে জোরে টান দিয়ে বলেন-আরে মূর্খ, বোকা গর্দভ। তোর নাম গাধা, বুঝলি গাধা।
এবার গাধা বুঝতে পারল যে তার নাম ‘গাধা’। কিন্তু ভগবান ওর কান এত জোরে টেনেছিলেন যে তা বেশ বড়ো হয়ে গেল। তখন থেকে আজ পর্যন্ত গাধাদের কান লম্বাই হয়ে আসছে।
(লোককথা অবলম্বনে)