পিনাকী রঞ্জন পাল : ৩ বছর ৮ মাস বয়স। এমন বয়সে অধিকাংশ শিশুর দিন কাটে কার্টুন দেখে, খেলনা নিয়ে। অথচ, কলকাতার কৈখালির এক ছোট্ট শিশু অনীশ সরকার এমন কিছু করে দেখিয়েছে, যা দুনিয়ার দাবা বোর্ডে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে ফিডে রেটিং ১৫৫৫ পেয়ে ইতিহাস গড়েছে অনীশ। এই কীর্তি তাকে কেবল ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
অনীশের মা বলছিলেন, “আমরা ওকে ইউটিউবে কার্টুন দেখাতে চেয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন দাবা খেলার একটি ভিডিও দেখে ও যেন সমস্ত কিছু ভুলে গেল। কার্টুন ভুলে সারাক্ষণ দাবা দেখতে চাইত। আমরা ওর এই আগ্রহ দেখে তাকে গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়ার কাছে নিয়ে যাই।”
এই বয়সে যেখানে শিশুরা খেলনা বা গল্পের বই নিয়ে মেতে থাকে, সেখানে অনীশের পুরো মনোযোগ দাবার বোর্ডে। চেয়ারের ওপর হাঁটু মুড়ে বসে যখন সে ঘুঁটি সরায়, তার মধ্যে এক অসাধারণ প্রতিভার ঝলক স্পষ্ট।
অনীশের অসাধারণ প্রতিভার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন সে ভারতের তেজস তিওয়ারির রেকর্ড ভেঙে মাত্র ৩ বছর ৮ মাস বয়সে ফিডে রেটিং অর্জন করে। আগে যেখানে রেকর্ড ছিল ৫ বছর বয়সের, সেখানে অনীশ সেটি প্রায় দেড় বছর আগে ভেঙে দেয়। এই কীর্তি তাকে বিশ্বের দাবা মহলে এক অনন্য পরিচিতি এনে দিয়েছে।
অনীশের প্রশিক্ষক, গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া, বলেন, “এই বয়সে এমন প্রতিভা খুব বিরল। আমি নিশ্চিত, অনীশ বহু দূর এগোবে। ওকে দেখলে মিত্রভা গুহর কথা মনে পড়ে। ভবিষ্যতে ও একদিন গ্র্যান্ডমাস্টার হবে।”
টাটা স্টিল দাবা টুর্নামেন্টে নিজ চোখে অনীশের খেলা দেখে বিস্মিত কিংবদন্তি ম্যাগনাস কার্লসেন। তার মতে, “এই বয়সে এতটা দক্ষতা সত্যিই অবিশ্বাস্য।” এমনকি ভারতের আরেক বিস্ময়, প্রজ্ঞানন্দ, অনীশকে কোলে তুলে আদরে ভরিয়ে দেন।
২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি জন্মানো অনীশ একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হচ্ছে। তার মা-বাবার মতে, অনীশের এই প্রতিভা ঈশ্বরপ্রদত্ত। তার সাফল্যের জন্য পরিবার তাকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে।
তবে অনীশের মা একথা বলতে ভোলেন না, “যেদিন ও গ্র্যান্ডমাস্টার হবে, সেদিন আমাদের নাম জানাতে খুশি হব।”
অনীশের পথচলা এখনও শুরু মাত্র। কিন্তু তার আগ্রহ, নিষ্ঠা এবং প্রতিভা দেখে স্পষ্ট, সে বিশ্বদরবারে ভারতের নাম উজ্জ্বল করবে। দাবার বোর্ডে তার প্রতিভা দেখে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, “অনীশ এক জন্ম প্রতিভা, যে ভবিষ্যতে বিশ্বকে অবাক করে দেবে।”
অনীশ সরকারের জীবন একটি প্রেরণার উৎস। সে শিখিয়ে দিয়েছে, প্রতিভার কোনও বয়স নেই। সঠিক দিকনির্দেশনা এবং উৎসাহ পেলে যে কোনও শিশু বিশ্ব জয় করতে পারে। তার কীর্তি আজকের প্রজন্মকে শেখাচ্ছে, কোনও কিছু অসম্ভব নয়।
যদিও তার যাত্রা এখনও দীর্ঘ, তবুও এই শুরুটিই প্রমাণ করে যে, অনীশ সরকার একদিন দাবার ইতিহাসের এক অমূল্য রত্ন হয়ে উঠবে।