লেখক : মলয় চক্রবর্তী
২৪ শে মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস।
“রাখছি খেয়াল জনে জনে, টিবি মুক্ত ভারত অভিযানে”
এই স্লোগান কে সামনে রেখে আসুন জেনে নেই যক্ষ্মা বা টিবি রোগ সম্পর্কে কিছু কথা।
টিবি বা যক্ষ্মা জীবাণুঘটিত একটি রোগ, জীবাণুর নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবার কিউলিসিস, ফুসফুসে যক্ষ্মা সংক্রামিত ব্যাক্তির হাঁচি কাশির মাধ্যমে টিবির জীবাণু বাতাসে নির্গত হয় ড্রপলেট আকারে, এই ড্রপলেট সংক্রামিত বাতাস যখন কোনো রোগপ্রতিরোধ কম ক্ষমতাশুন্য সুস্থ ব্যাক্তির প্রশ্বাস এর মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে তখন সেই ব্যাক্তি যক্ষ্মা বা টিবি রোগে আক্রান্ত হন, একজন ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগী ঠিক মতো চিকিৎসা না করলে তার মাধ্যমে বছরে আরো দশ থেকে পনেরো জন ব্যাক্তি কে সংক্রামিত করতে পারে, এছাড়া ডায়বেটিস, তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন, ধূমপান,অ্যালকোহল আকৃষ্ট ব্যাক্তি এবং এইচ আই ভি রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের টিবি রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা অনেক বেশি সাধারণ মানুষের থেকে। তবে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা ডটস (DOTS) সিস্টেম এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনেপয়সায় চিকিৎসক এর পরামার্শে ওষুধ খেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। তাই ২ সপ্তাহের বেশি কাঁশি,রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া,দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, কাশিতে রক্ত পড়া এই সব এর মধ্যে যেকোনো একটা লক্ষন থাকলে রোগ লুকিয়ে না রেখে সামাজিকতা কে ভয় না পেয়ে অবশ্যই কফ পরীক্ষা করিয়ে নিন সরকারি হাসপাতালে একদম বিনে পয়সায়।আপনাদের যে কোনো জিজ্ঞাসায় জেলা যক্ষা বিভাগ সর্বদা আপনাদের সাথে রয়েছে।
দ্রুত রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে আমরা যক্ষ্মা ভীতিকে দূরে সরিয়ে যক্ষ্মা মুক্ত ভারত তথা পৃথিবী অবশ্যই গড়ে তুলতে পারবো।
মানব শরীরে চুল এবং নখ ছাড়া যে কোনো জায়গায় যক্ষ্মা বা টিবি রোগ হতে পারে, যেমন অস্থি, গ্লান্ড, অন্ত্র, যকৃৎ, মস্তিস্ক এবং চামড়া তেও টিবি রোগ হতে পারে,লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া, ব্যাথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া,জয়েন্টে ব্যাথা ও ফোলাভাব,সময়মতো এই সব জায়গায় যে কোনো লক্ষণ দেখা গেলে চলে আসুন চিকিৎসক এর কাছে জেলা যক্ষ্মা বিভাগে।
সময়মতো চিকিৎসা না করালে আগামীতে আমি আপনি আমরা সবাই আক্রান্ত হতে পারি এই যক্ষ্মা রোগে,কারণ টিবি বা যক্ষ্মা রোগ ধনী গরিব দেখে হয় না,আগামী প্রজন্ম কে সুস্থ রাখতে আজই চলে আসুন সরকারি চিকিৎসা ব্যাবস্থায়।
পুরো কোর্স চিকিৎসা না করালে আরো ভয়াবহ MDR রোগীতে আক্রান্ত হতে পারে টিবি রোগীরা, তাই তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজের সবার উচিত পুরো কোর্স ওষুধ খেতে রোগীকে উৎসাহ প্রদান করা। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হয়, কেন্দ্রীয় সরকারি পুষ্টি সহায়ক প্রকল্প নিক্ষয়প্রশন যোজনায় চিকিৎসা চলাকালীন টিবি রোগীদের মাসিক অনুদান দেওয়া হয় DBT ডাইরেক্ট বেনিফেশিয়ারি সিস্টেম এর মাধ্যমে অনুদান পৌঁছে যায় রোগীর একাউন্টে,রাজ্য সরকারি সাহায্য হিসেবে রেশন থেকে চাল ডাল আটা বিনে পয়সায় সরবরাহ করা হয়, এছাড়া ও চিকিৎসা চলাকালীন নিক্ষয় মিত্র প্রকল্পের মাধ্যমে দত্তক নিয়ে রোগী কে সাহায্য করা হয়ে থাকে, আপনি ও হতে পারেন নিক্ষয় মিত্র যদি আপনি একজন যক্ষ্মা রোগী কে চিকিৎসা চলা কালীন ছয় মাস দত্তক নিয়ে মাসে সামান্য কিছু পুষ্টিকর খাবার টিবি রোগীদের হাতে তুলে দিতে পারেন, সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তরের আধিকারিক,যক্ষা বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্তাব্যাক্তি, চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা রোগীর বাড়িতে গিয়ে রোগীর খোঁজ খবর নিয়ে আসেন এবং রোগী কে ও রোগীর পরিবার কে অভয় দান করেন, যক্ষ্মা যাতে না হয় সেই টিপিটি র ওষুধ ও প্রদান করা হয়ে থাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।আপনার চিকিৎসা ও সম্পূর্ণ ভাবে গোপন রাখা হয়।
২৪ শে মার্চ সারা বিশ্বে পালিত হয় বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, যক্ষ্মা সম্পর্কে সামাজিক ভীতি সরিয়ে রেখে এই দিবস কে স্বরণ করে টিবি বা যক্ষ্মা যুক্ত ব্যাক্তিদের চিকিৎসার জন্য উৎসাহ প্রদান করে আসুন আমি আপনি সামাজিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে চলি। আমি আপনি আমরাই পারি যক্ষা মুক্ত পৃথিবী গড়তে।
ছবি এআই
