জলপাইগুড়ি, ১০ জুলাই: নাবালিকাকে অপহরণ, ধর্ষণ এবং নির্মমভাবে খুনের ঘটনায় নজিরবিহীন রায় শুনাল জলপাইগুড়ির পকসো আদালত। বৃহস্পতিবার বিচারক রিন্টু সুর এই মামলার তিন অভিযুক্ত— রহমান আলী, তার সহযোগী ও আরও এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একযোগে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন। এই প্রথম জলপাইগুড়ি জেলার কোনো আদালতে একসঙ্গে তিনজনের ফাঁসির নির্দেশ এল। রায় ঘোষণার মুহূর্তে আদালত চত্বরে ভিড় ছিল উপচে পড়া।

ঘটনাটি ২০২০ সালের। রাজগঞ্জ থানার অন্তর্গত এক গ্রাম থেকে এক নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে যায় বাড়ির সামনের রাস্তায় থেকে। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর পরিবার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। কয়েকদিন পর একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন করে সেই নাবালিকা জানায়, সে চটেরহাটে রহমান আলী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আটকে রয়েছে। সেখান থেকে তদন্তের সূত্রপাত।
পুলিশ রহমান আলীকে গ্রেফতার করে এবং তাকে জেরা করে উঠে আসে আরও দুই অভিযুক্তের নাম। ধৃতদের জবানবন্দিতে জানা যায়, তিনজন মিলে মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণ করে এবং পরে একটি নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে গেঞ্জি দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে। হত্যার পর তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহ ফেলে রাখা হয় একটি সেপটিক ট্যাংকে।

মামলার তদন্তে পুলিশ উদ্ধার করে খুনে ব্যবহৃত গেঞ্জি, অভিযুক্তদের মোবাইল, বাইক এবং মেয়েটির জন্য কেনা পোশাক। আদালতে ২৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
এই রায়ের পর সহকারী সরকারি আইনজীবী দেবাশীষ দত্ত বলেন, “এটি জলপাইগুড়ির ইতিহাসে বিরল রায়। একইসঙ্গে তিনজন ধর্ষক খুনিকে ফাঁসির সাজা হয়েছে—এটা সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেবে।” পাশাপাশি তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগেও অভিযুক্তদের ৫ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
অন্যদিকে, কেঁদে ভেঙে পড়েন মৃতার বাবা। তাঁর কথায়, “আমার মেয়ের প্রাণ তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু এই রায়ে কিছুটা হলেও বিচার পেলাম আমরা।”
এই ঐতিহাসিক রায় কেবল জলপাইগুড়ি নয়, গোটা রাজ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। নারী ও শিশুর প্রতি অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিল এই দৃষ্টান্তমূলক ফাঁসি।