জলপাইগুড়িতে ভোট লুঠ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব সচেতন নাগরিকরা, বামেদের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ, বিজেপির বনধে আংশিক প্রভাব, নির্বাচন কমিশনকে বার্তা কংগ্রেসের

নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি : জলপাইগুড়িতে শেষ হল ২০২২ এর পুর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। রবিবার বিকেল পাঁচটার সময় ভোট শেষে সমস্ত ইভিএম মেশিনগুলিকে ডিসিআরসি কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন জলপাইগুড়ি শহরে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিপ্তভাবে দেখা যায় ছাপ্পা ভোট, বুথ জ্যাম, ইভিএম মেশিন ভাঙচুর এমনটাই অভিযোগ বিরোধী দলের। বিরোধী দলের অভিযোগ জলপাইগুড়ির মতো শান্ত শহরে শাসক দল তাদের নোংড়ামি দ্বারা এই শহরের পুরনো ঐতিহ্যকে নষ্ট করেছে। গতকালের ঘটনায় জলপাইগুড়ি শহরের রাজনৈতিক সৌজন্যতা ধ্বংস হয়েছে। পুর ভোটের ভোট গ্রহণ ছাপিয়ে গেছে আঠারোর পঞ্চায়েত ভোটকেও বলে অভিমত জলপাইগুড়ির সচেতন নাগরিকদের। তাদের মতে আঠারোর আগে জলপাইগুড়িতে ভোটকে ঘিরে হিংসা অশান্তি মারপিটের ছবি মনে পড়ে না। পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ তাদের যথাযথ ভূমিকা পালনে। তারা রাজ্যের শাসকদলের পুতুলে পরিণত হয়েছেন এটা আবার পরিষ্কার হয়ে গেল গতকালের ঘটনায়। শুধু তাই নয় গতকাল সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে গণতন্ত্র এর চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদিকরাও। শাসক দলের দামাল ছেলেরা এই সাংবাদিকদেরকেও ছেড়ে কথা বলে নি।

গতকালের ঘটনা নিয়ে জলপাইগুড়ির অনেক সচেতন নাগরিক তাদের মতামত তুলে ধরেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারই কিছু এবার তুলে দিচ্ছি।

গতকালের ঘটনা নিয়ে অলোক সুধীর সরকার একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতার নাম – “অনভিপ্রেত”। তিনি লিখেছেন –

জলপাইগুড়িতে হলো যা,
স্বপ্নেও ভাবা যায় না তা,
শহরবাসীর লজ্জ্বা,
না ঢাকা যাবে না
চোর গুন্ডা বদমাশ
করে গেল সর্বনাশ।

সুদীপ সরকার বান্টু লিখেছেন, সেই ছোট্টোবেলা থেকে রাজনীতির সাথে পারিবারিক সূত্রে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, এমন ভোট জলপাইগুড়ি শহরে আগে কখনো দেখিনি, যারা আজকে এই সন্ত্রাসের নোংরামি জলপাইগুড়ি শহরে আমদানি করলেন, দেখবেন এই আগুনে একদিন আপনাদের পুড়তে না হয় ….!!! তৃণমূলের যারা নেতৃত্ব, তাঁদের কাছে আমার বিনম্র প্রশ্ন …. আজকের এই তান্ডব, আপনারা কি সমর্থন করেন …??? এতে কি দলের ভাবমূর্তি মানুষের কাছে খুব ভালো হলো…..??? দেবাংশুর কথা টা আজ খুব প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে …. ২০১৮ বারবার হলে ২০১৯ আবার হবে, কিন্তু ২০২১ কিন্তু বারবার হবে না ….!!!

দীপঙ্কর চক্রবর্তী লিখেছেন, সাব্বাস জলপাইগুড়ি। যে কৃতিত্ব এতদিন অর্জন করতে পারে নাই। এবার তা পারলো। এবার বাড়িতে উন্নয়ন ঢুকবে।

জয়দীপ দাস লিখেছেন, জলপাইগুড়িতেও বুথ দখল চালু হয়ে গেল।

রকি দে লিখেছেন, আজ আবার জলপাইগুড়িতে পুলিশ কে নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখলাম।

সাংবাদিক তিতাস পাল লিখেছেন, আশঙ্কা ছিলই, সেটা সত্যিও হল। আক্রান্ত হলেল গণতন্ত্রের উৎসব।আক্রান্ত হল গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভও।

জয়ন্ত বণিক পম লিখেছেন, জলপাইগুড়িবাসীর উচিত পুলিশ প্রশাসন কে থানায় গিয়ে শাড়ি আর চুরি উপহার দিয়ে আসা। লজ্জ্বা।

জয়দীপ ভৌমিক লিখেছেন, যে যাই বলুক না কেন আজ আমাদের প্রিয় শহর জলপাইগুড়িও দেখিয়ে দিলো যে আমাদের শহর ও আধুনিকতার অন্যতম নিদর্শন গনতান্ত্রিক (?) ভাবে ছাপ্পা ভোট ও দিতে পারে l আর কিন্তু বলা যাবে না আমরা পিছিয়ে আছি l আবারো ধন্যবাদ জানাই ছাপ্পা ভোটের কুশীলবদেরl

যদিও গতকাল ভোটের পর জেলা তৃণমূল সভানেত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে সমস্ত অশান্তি বিরোধীদের চক্রান্ত বলে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মানুষ কি এতোই বোকা? তারা কি কিছুই বোঝে না? এটা কি হীরক রাজার দেশ নাকি?

এদিকে যে পুলিশ গতকাল ভোট লুঠের সময় নিষ্ক্রিয় ছিল, সেই পুলিসকেই আজ সোমবার দেখা গেল অতি সক্রিয় হতে। গতকালের ভোট লুটের প্রতিবাদ করতে জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসকের দপ্তরে বামফ্রন্টের প্রতিনিধিরা মিছিল করে স্লোগান দিয়ে স্মারকলিপি দিতে এলে তাদের উপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে পুলিশ বলে অভিযোগ৷

মহিলাদের ওপরও লাঠিচার্জ করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ আক্রমণ চালাতেই দু’পক্ষের মধ্যে রীতিমতো হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। বামপ্রার্থী দুর্বা ব‍্যানার্জি‌কেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য সহ অনেক নেতা কর্মী। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত বাম নেতা কর্মীদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, গতকাল পুলিশের এই সক্রিয়তা কোথায় ছিল। আজ তারা একটা শান্ত রাজনৈতিক মিছিলের উপর নির্বিচারে লাঠি চালালো। তারা যদি গতকাল এরকম সক্রিয় থাকতেন তাহলে ভোট লুঠ হত না। রক্ষা পেত গণতন্ত্র।

সোমবার বিজেপির ডাকা বনধের আংশিক প্রভাব পড়ল জলপাইগুড়ি শহরে। পুরসভা নির্বাচনে ব‍্যাপক ছাপ্পা ভোট ও গন্ডগোলের প্রতিবাদে গোটা রাজ‍্য জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। সোমবারের ডাকা বনধের আংশিক প্রভাব লক্ষ‍্য‍ করা যায় শহরের সব জায়গাতেই।

দেখুন ভিডিও

কদমতলা, ডিবিসি রোড, মার্চেন্ট রোড, দিন বাজার, ইন্দিরা কলোনি বাজার, শান্তিপাড়া এলাকায় বনধের প্রভাব রয়েছে। এই সমস্ত এলাকায় বাজার ও দোকানপাট বন্ধ থাকলেও সবজি ও ছোট ব‍্যবসায়ীরা নিজেদের ব‍্যবসা চালিয়ে গেছেন। বনধ নিয়ে গন্ডগোল এড়াতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিসি টহল রয়েছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের দেখা মেলেনি। ব্যস্ততম রাস্তাগুলোতেও মানুষ ও যানবাহন কম চলাচল করেছে। তবে সরকারি অফিসগুলো খোলা রয়েছে সর্বত্র।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের কাছে বার্তা পাঠালো জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস। ভোট গ্রহণের দিনে ইভিএম ভাঙা থেকে বুথ দখল, শহর জুড়ে মুখে কালো কাপড় বাধা দুষ্কৃতীদের তাণ্ডপের সমস্ত তথ্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠালো জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস। পাশাপাশি দু তারিখে ভোট গণনাকে নিয়ে আগাম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হলো।

সোমবার জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা সদ্য সমাপ্ত পুর নির্বাচনের প্রার্থী পিনাকী সেনগুপ্ত। ভোট গ্রহণের দিনে জলপাইগুড়ি শহরে যা ঘটেছে তা জলপাইগুড়ির সংস্কৃতির পরিপন্থী নয় বলে মনে করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি। মুখে কালো কাপড় বাধা যে সব দুষ্কৃতীদের শহরে এনে শাসক দল ভোট লুঠ করালো, তাদের বিরুদ্ধে এই ঐতিহ্যবাহী শহরের সুশীল সমাজ অবশ্যই প্রতিবাদ করবেন বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *