নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি : রাজ্যের অন্যান্য পুরসভার মতো জলপাইগুড়ি পুরসভাতেও সবুজ ঝড় অব্যাহত। পুরসভার 25 টি আসনের মধ্যে বিরোধী মুখ মাত্র তিনজন। এদের মধ্যে দুজন জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী এবং একজন বামফ্রন্ট প্রার্থী। বাকি 22 টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গতবারের পুরসভায় বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা ছিল 5, সেই আসনসংখ্যা এবার ধরে রাখতে ব্যর্থ বামফ্রন্ট। গতবারের পুর নির্বাচনে বামফ্রন্ট পেয়েছিল 2, 3, 9, 10 এবং 23 নম্বর ওয়ার্ড। কিন্তু এ বছর এই 5 টি ওয়ার্ডের মধ্যে কেবল মাত্র 23 নম্বর ওয়ার্ডটি তারা নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ হয়েছে।

অন্যদিকে গতবারের পুর নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসও জলপাইগুড়ি পুরসভায় পাঁচটি আসন পেয়েছিল। পুরসভার 12, 14, 22, 24 এবং 25 নম্বর ওয়ার্ড তাদের দখলে ছিল। এবারের পুরসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটি আসন খুইয়ে দুটি আসন ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। 22 নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থী তথা জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত। এবছর কংগ্রেস 20 এবং 24 নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হয়।

জলপাইগুড়ি পুরসভার 23 নম্বর ওয়ার্ডে এবছর বামফ্রন্টের প্রার্থী সঞ্জিতা পঞ্চানন ধর বিজয়ী হন। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি তৃণমূলের সুজাতা সরকার বর্ধনকে 838 ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। তৃণমূলের প্রার্থী পেয়েছেন 564 ভোট এবং বামফ্রন্ট প্রার্থী সঞ্চিতা পঞ্চানন ধর পেয়েছেন 1402 টি ভোট। এই ওয়ার্ডের অপর প্রার্থী ছিলেন বিজেপির পারমিতা সরকার।
জয়ের পর বামফ্রন্ট প্রার্থী সঞ্চিতা পঞ্চানন ধর জানান, এই জয় মানুষের জয়, গণতন্ত্রের জয়, সত্যের পথে জয়। তিনি বলেন, এই পুর নির্বাচনে যেভাবে জলপাইগুড়ির বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবাধে ছাপ্পা ভোট হয়েছে, তার ওয়ার্ডেও ছাপ্পা ভোট দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তবে 23 নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ সেই অপপ্রয়াসকে রুখে দিয়েছেন বলে জানান সঞ্চিতা পঞ্চানন ধর।

জলপাইগুড়ি পুরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হয় কংগ্রেস প্রার্থী শুভ্রা দেব এবং 24 নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হয় কংগ্রেসের টাউন ব্লক সভাপতি অম্লান মুন্সি। 20 নং ওয়ার্ডের বিজয়ী প্রার্থী জাতীয় কংগ্রেসের শুভ্রা দেব পেয়েছেন 1363টি ভোট । তৃণমূলের সুনীতি সরকার পেয়েছেন 1056টি এবং বিজেপির অনিতা মৌলিক পেয়েছে 566টি ভোট।
কংগ্রেসের অপর বিজয়ী প্রার্থী 24 নং ওয়ার্ডের অম্লান মুন্সি পেয়েছেন 2018 টি ভোট, অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি তৃণমূলের পল্লব দাস পেয়েছেন 811 টি ভোট। অম্লান মুন্সী বিজয়ী হয়েছেন বারোশো সাতটি ভোটের ব্যবধানে। ভোটে জেতার পর অম্লান মুন্সি জানান, এই জয় আমার জয় নয়। এই জয় 24 নম্বর ওয়ার্ডের সব মানুষের জয়। অম্লান বাবু তার এই জয়কে ওয়ার্ডের মানুষদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। সেই সাথে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে ভোট গ্রহণের সময় এই শহরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের পর হিংসা নেমে আসতে পারে। তাই তিনি সকলের কাছে অনুরোধ করেন, গণতন্ত্রের উৎসবে কোনো মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা সমস্ত রাজনৈতিক দলকে দেখতে হবে। তিনি বলেন, আজ থেকে আমরা আবার সবাই যেন মানুষের উন্নয়নে মন দিতে পারি সেটাই হোক আমাদের একমাত্র কাজ।