নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ৩০ এপ্রিল ২০২২ : রাজ্য জুড়ে স্কুল কলেজে গরমের ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্তকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানালো উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি। চলছে বৃষ্টির সঙ্গে হিমেল হাওয়া, সোয়েটার গায়ে স্কুলে খুদে পড়ুয়ারা। ছুটি পরে দিলেই ভালো মত অভিভাবককুলের।

শুক্রবার রাত থেকেই জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শনিবার সকালেও যা অব্যাহত। দক্ষিণবঙ্গ প্রচন্ড দাবদাহের কবলে পড়লেও জলপাইগুড়ি সহ উত্তরের বিভিন্ন প্রান্তে গরম উধাও বর্তমানে। আর এতেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ২রা মে থেকে স্কুল কলেজগুলিতে গরমের ছুটি ঘোষণাকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানালো উত্তরের মনোরম প্রকৃতি। তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে যাওয়ায় স্কুলে আসা অনেক ছাত্রদের গায়ে দেখা মিললো হালকা সোয়েটার।

এই গরমের ছুটি নিয়ে শুধু যে অভিভাবক বা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে তাই নয়, সোয়েটার গায়ে স্কুলে আসা খুদে পড়ুয়াদের মনেও উঁকি দিচ্ছে একই প্রশ্ন। তারাও জানালো, “গরমের ছুটিটা পরে দিলেই ভালো হত। এখনো তো জলপাইগুড়িতে তেমন গরম পড়েনি।”
ওপরদিকে ছাতা মাথায় সন্তানকে স্কুলে পৌঁছতে আসা বর্ণালী বসুর মুখেও গরমের ছুটি নিয়ে একই জবাব, “এখন তো সেই অর্থে আমাদের এই অঞ্চলে গরম পরেনি, সকালে সোয়েটার গায়ে চাপিয়েই বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে এসেছি। গরমের ছুটি আমাদের এদিকে পরে দিলেই ভালো হতো।
শুধু যে শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ গরমের ছুটি পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন তা নয়, জলপাইগুড়ি পাহারপুর অঞ্চলের বাসিন্দা অভিভাবক মহম্মদ আমিনুলের গলাতেও একই সুর। উত্তরবঙ্গের স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি আরো পরে দিলেই ভালো হতো। এখন তো আমাদের এখানকার পরিবেশ অনেকটা ঠান্ডা।

পাশাপাশি গ্রীষ্মের ছুটি পুনর্বিবেচনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জলপাইগুড়ি শাখার পক্ষ থেকে জেলা প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক তথা সম্পাদক ও চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেওয়া হল। শুক্রবার বিভিন্ন দাবি সম্বলিত এই স্মারকলিপি দিতে এসে নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক বিপ্লব ঝা বলেন, দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর ফের প্রাথমিকে পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারি ঘোষণা মত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি ছুটি হলে শিশুদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। কলকাতার তুলনায় যেহেতু উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা অনেকটাই কম, তাই হঠাৎ করে এভাবে বিদ্যালয়ে বন্ধের কোনো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে সংগঠন অনুভব করে না। হঠাৎ স্কুল বন্ধ হলে সেখানে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজটিও ব্যাহত হবে বলে জানান তিনি।

নিখিল বঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, দেড় মাস এই ভাবে ছুটি দেওয়ার ফলে বিদ্যালয় আসার প্রবণতা ছাত্র ছাত্রীদের নষ্ট হয়ে যাবে। তার ফলে অভিভাবকরা বেসরকারি বিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকবেন। তাই দার্জিলিং ও কালিম্পঙ পার্বত্য অঞ্চলের মতো জলপাইগুড়ি জেলাতেও এই ছুটির নির্দেশিকা বাতিল করা হোক। এছাড়াও তিনি বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ের নিজস্ব পোশাক যাতে বহাল থাকে তারও দাবি রাখা হয়েছে এই স্মারকলিপিতে।