অরুণ কুমার : রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ ৫ বিজেপি বিধায়ক সাসপেন্ড হলেন বিধানসভায়। সোমবার অধিবেশনের শুরুতেই রামপুরহাটের বগটুই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিধানসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। স্পিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হয়। দুপক্ষের তুমুল হাতাহাতি হয় বিধানসভায়। উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে।

এরপর এদিন বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, দীপক বর্মণ, মনোজ টিগ্গা, নরহরি মাহাতোকে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব আনে শাসক দল। তাঁদের সাসপেন্ডের দাবি করেন উদয়ন গুহ ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা। প্রস্তাব দেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এরপরেই স্পিকার তাঁদের সাসপেন্ড করেন।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সোমবার রামপুরহাটের হত্যাকাণ্ডের রেশ পৌঁছে যায় বিধানসভায়। এদিন ছিল বিধানসভায় শেষ অধিবেশন। আর এদিনই ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গেল শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে। তৃণমূলের বিধায়ককে ঘুষি মারার ঘটনায় সাসপেন্ড করা হল বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে। পাশাপাশি বিধানসভার আরও পাঁচ বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
সোমবার বিধানসভায় বেনজির কাণ্ড রাজনৈতিক মহলকে রীতিমত হতবাক করে দিয়েছে। যেখানে রীতিমতো মারপিটে জড়িয়ে গেলেন বিজেপি- তৃণমূল বিধায়করা। বগটুই-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠৈ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। সোমবারও বগটুই কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। আর তখনই তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি বিধায়করা। এরপরই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ পাঁচ বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়।
জানা গিয়েছে, দু পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, চড়, কিল, ঘুষিও চলতে থাকে। নাক ফাটে তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের। পাল্টা মনোজ টিগ্গা সহ কয়েকজন বিধায়ককে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঘাত করার অভিযোগ উঠেছে। ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। সেই সময় শুরু হয় হাতাহাতি। তৃণমূল ও বিজেপি বিধায়করা একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেন। এমনকী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নাক ফেটে গিয়েছে বলে খবর। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
এই ঘটনা বিধানসভায় বেনজির বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের। এদিকে জানা গিয়েছে, রাজ্য
বিধানসভার ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারের ঘটনার পরই তিনি পাহাড় থেকে ফোন করেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। ঘটনার বিস্তারিত জানতে চান ফিরহাদের কাছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “এবার বেশ অনেক দিনই বিধানসভা অধিবেশন চলেছে। রাজ্যপালের ভাষণের উপর আলোচনা হয়েছে। বাজেট বিতর্ক হয়েছে। বিরোধী দলের কর্তব্য ছিল সরকারের সমালোচনা গঠনমূলকভাবে করা। তারা প্রতিদিন অধিবেশনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। গায়ের জোরে রাজনীতি করা হয়েছে।”
অপরদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, “আজ কলকাতা পুলিশের কিছু কর্মীকে সিভিল ড্রেসে আনা হয়েছে। ২০ -২৫ জন তৃণমূল বিধায়ক বিশেষ করে শওকত মোল্লা, রহিম বক্সি-সহ বেশ কিছু গুন্ডা, যাঁরা ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জড়িত তারা আমাদের বিধায়কদের উপর হাত তুলেছে। শারীরিকভাবে হেনস্থা করেছে। প্রায় ১০ জন বিধায়ক আহত হয়েছেন। ২ জনের আঘাত গুরুতর।”
সোমবার দিন বিধানসভায় এই ঘটনা নিয়ে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী শিবিরের উদ্দেশে বলেন, যে ঘটনা ঘটল সেটা অনভিপ্রেত। বিধানসভার নিয়মকানুন নিয়ে পড়াশোনা করেন না। বিধানসভার গুরুত্ব তাঁরা বোঝেন না। সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই বিধানসভার সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা তৈরি হবে। কীভাবে সেই ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায় সেটাও দেখা হবে বলে জানান বিধানসভার অধ্যক্ষ।
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ফোন করেন। গোটা বিষয়টি জানতে চান। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একজন বিধায়ককে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তিও করা হয়েছে। ২১০ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছেন অসিত মজুমদার। এই সমস্ত বিষয়ে খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমানে তিনি উত্তরবঙ্গ সফরে দার্জিলিঙে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে বিধানসভার মতো প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে রাজ্যের জনপ্রতিনিধিদের এমন আচরণ নিঃসন্দেহে প্রশ্নের অবকাশ রাখে। বিধানসভায় যে ঘটনা ঘটেছে ইতিমধ্যেই তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এদিন বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন তৃণমূল ও বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে তুমুল হাতাহাতি, একে অপরের উপর হামলে পড়া, জামা ধরে টানাটানি, হাত চালানোর পাশাপাশি কারও কারও মুখের কথাও আগলহীন হয়ে পড়ে।
এই ঘটনার স্বাভাবিক কারণেই হতবাক করে দিয়েছে রাজ্যের মানুষকে। উভয় পক্ষেরই এক্ষেত্রে সংযত হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্বশীলতার অভাব প্রকাশ হয়ে পড়েছে যা কোনভাবেই ভালো চোখে দেখছেন না রাজ্যের মানুষ।
Photo and Video source- Bjp official FB page.