পিনাকী রঞ্জন পাল
ডাইনির অভিশাপে আটকে পড়া শিশুর আত্মা, এক মায়ের আর্তনাদ আর এক অনুসন্ধানী দলের ভয়াল রাত! আঁতুড়ঘরের দরজা একবার খুললে, গল্প নয় – ভয় ফিরে আসে বারবার… এখনই পড়ুন
অধ্যায় ১: অদেখা আঁতুড়ঘরের আহ্বান
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আকাশ জুড়ে কালচে কমলা রঙের মায়াবী আভা। সুদূর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পুরনো আমলের খিলান দেওয়া বাড়িটা যেন এক অতৃপ্ত দীর্ঘশ্বাসের ভার বহন করছে। শতাব্দী প্রাচীন এই হন্টেড হাউস, ‘ভূতের ভিটে’ নামেই পরিচিত, এখন আমার নতুন গবেষণার কেন্দ্র। আমি, অরুণিমা, একজন প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটর। আমার দল, “দ্য রেশাদোস”, আজ এখানে প্রথম রাত কাটাবে। আমার টিমে আছে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান জয়, নির্ভীক মিডিয়াম প্রিয়াঙ্কা, আর ডকুমেন্টেশনের জন্য ফটোগ্রাফার রাহুল।
কলকাতার কোলাহল ছেড়ে এই নির্জন, জনমানবহীন অঞ্চলে আসার প্রধান কারণ, মাসখানেক আগে স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর। এ বাড়ির এককালের মালিক, প্রতাপ মল্লিক, যিনি প্রায় একশো বছর আগে সপরিবারে নিখোঁজ হয়েছিলেন, তাদের বাড়ির নতুন সংস্করণ তৈরির জন্য কিছু শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরু হতেই একজন শ্রমিক অস্বাভাবিকভাবে মারা যায়, আর বাকিরা অদ্ভূত সব ঘটনার সাক্ষী হয়। তারা জানায়, রাতের অন্ধকারে নাকি বাড়ির ভেতর থেকে শিশুদের কান্নার আওয়াজ আসে, আর একটা ঠান্ডা হাওয়া নাকি তাদের গা ছুঁয়ে যায়। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল, বাড়ির মূল ফটকের সামনে একটা ছোট্ট আঁতুড়ঘরের দরজা নাকি নিজে থেকেই খুলে যায়, আর ভেতর থেকে ভেসে আসে অস্পষ্ট আওয়াজ। সেই ঘটনার পর থেকে আর কেউ এ বাড়ির ত্রিসীমানায় যায়নি।
আমরা যখন পৌঁছলাম, তখন অন্ধকার প্রায় গাঢ়। গাড়ি থেকে নামতেই একটা হিমশীতল হাওয়া আমাদের গা ছুঁয়ে গেল। আমি প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকালাম। তার চোখ দুটো যেন কাঁপছে। “অরুণিমা, এখানে একটা গভীর, খুব গভীর যন্ত্রণা আছে,” সে ফিসফিস করে বললো। জয় আমাদের যন্ত্রপাতির ব্যাগগুলো নামাতে শুরু করলো। রাহুল তার ক্যামেরা বের করে চারপাশের ছবি তুলতে লাগলো। বাড়ির মূল ফটকটা ভেঙে পড়ে আছে, আর সেই ছোট্ট আঁতুড়ঘরের দরজাটা ঠিক সামনেই, অন্ধকার গহ্বরের মতো খোলা। ভেতরে যেন এক অজানা জগতের হাতছানি। আমরা বুঝতে পারছিলাম, আমাদের সামনে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে।
অধ্যায় ২: ফিসফিসানির জাল
প্রথম রাতে আমরা আঁতুড়ঘরের কাছাকাছি একটা ঘরে আমাদের বেস ক্যাম্প তৈরি করলাম। জয় বিভিন্ন সেন্সর আর নাইট ভিশন ক্যামেরা সেট আপ করলো। প্রিয়াঙ্কা তার মেডিটেশন শুরু করলো। রাহুল সবকিছুর ছবি তুলছিল। আমি আমাদের রেকর্ডারগুলো অন করে রাখলাম। ঘরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কম ছিল, আর একটা স্যাঁতসেঁতে গন্ধ চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছিল। পুরোনো কাঠের মেঝে থেকে থেকে কঁকিয়ে উঠছিল যেন।
রাত গভীর হতে শুরু করলো। বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না। হঠাৎই জয় তার স্ক্রিনের দিকে আঙুল তুললো। “অরুণিমা, তাপমাত্রা হঠাৎ করে নেমে গেছে। আর এই দেখো, ইএমএফ (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড) রিডিং অনেক বেশি।” আমি স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। রিডিংগুলো অস্বাভাবিকভাবে লাফিয়ে উঠছিল। স্ক্রিনের গ্রাফগুলো পাগলের মতো উপরে নিচে নামা-ওঠা করছিল।
ঠিক সেই মুহূর্তে প্রিয়াঙ্কা হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠলো। তার চোখগুলো বন্ধ, শরীর কাঁপছে। সে কিছু অস্পষ্ট শব্দ উচ্চারণ করছিলো, যা বোধগম্য ছিল না। “আমার… আমার দিকে তাকিও না!” সে আতঙ্কে ফিসফিস করলো। তার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, কপালের ঘাম তার চুলের গোড়ায় লেগে আছে। রাহুল দ্রুত প্রিয়াঙ্কার ছবি তুললো। আমি প্রিয়াঙ্কার হাত ধরলাম। তার শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে, যেন সে বরফের মধ্যে ডুবে আছে।
আমরা সবাই আঁতুড়ঘরের দরজার দিকে তাকালাম। দরজাটা তখনও খোলা। হঠাৎই ভেতর থেকে একটা ক্ষীণ, কান্নার মতো আওয়াজ ভেসে এলো। একদম ছোট শিশুর কান্না। আমাদের সবার গা ছমছম করে উঠলো। জয় দ্রুত আঁতুড়ঘরের দিকে একটা ইনফ্রারেড ক্যামেরা ফোকাস করলো। স্ক্রিনে শুধু অন্ধকার। কিন্তু সেই কান্নার শব্দটা আরও তীব্র হচ্ছিল। যেন শিশুটা আমাদের আরও কাছাকাছি চলে এসেছে।
আমি রেকর্ডারগুলো চেক করলাম। সেখানে স্পষ্ট সেই শিশুর কান্নার আওয়াজ। এর সাথে যোগ হলো একটা ফিসফিসানি, যা পুরুষ কণ্ঠের মতো শোনাচ্ছিল। “ছেড়ে দাও… আমার… আমার সন্তানকে…” আমি ভয়ে জমে গেলাম। রাহুল তার ক্যামেরা নামিয়ে নিলো। তার মুখ ফ্যাকাশে। আমরা সবাই একে অপরের দিকে তাকালাম। এ বাড়ির প্রতিটি ইঞ্চিতে যেন এক গভীর বেদনা লুকিয়ে আছে। মনে হচ্ছিল, বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠেছে এক অজানা ভয়ে। আমরা নিশ্চিত হলাম, এ বাড়ির রহস্য কেবল শ্রমিকদের কুসংস্কার নয়, এর পেছনে গভীর কিছু আছে।
অধ্যায় ৩ : ডায়েরির নীরব আর্তনাদ
পরের দিন সকালে আমরা আঁতুড়ঘরটা ভালো করে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভেতরে কোনো কিছুই ছিল না, শুধু পুরোনো ইট আর ধুলো। স্যাঁতসেঁতে মাটির গন্ধ। কিন্তু অদ্ভুতভাবে, মেঝেতে কিছু প্রাচীন চিহ্ন আঁকা ছিল, যা এক ধরনের বৃত্তের ভেতর অস্পষ্ট কিছু অক্ষর। চিহ্নগুলো এতটাই অস্পষ্ট ছিল যে সহজে বোঝা যাচ্ছিল না। প্রিয়াঙ্কা সেগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো, “এটা কোনো রক্ষা কবচ ছিল, কিন্তু এখন অকার্যকর।” তার কণ্ঠস্বরে একটা গভীর বিষণ্ণতা ছিল।
আমরা যখন ভেতরে ছিলাম, হঠাৎই আমার পায়ের নিচে কিছু একটা শক্ত লাগলো। আমি নিচু হয়ে দেখলাম, একটা পুরোনো, চামড়ার বাঁধাই করা ডায়েরি। ডায়েরিটা ধুলো আর নোংরায় ঢাকা, কিন্তু তার বাঁধাই বেশ মজবুত। তার পাতার রঙ হলদেটে হয়ে গেছে, আর কিছু জায়গায় পোকা লেগেছে। আমি দ্রুত ডায়েরিটা হাতে তুলে নিলাম। এটা সম্ভবত প্রতাপ মল্লিকের ডায়েরি। ডায়েরির প্রথম পাতায় একটা পুরনো দিনের কালি দিয়ে লেখা ছিল, “প্রতাপ মল্লিক, ১৪ ভাদ্র, ১২৫৯ বঙ্গাব্দ।” তারিখটা দেখেই আমার বুকের ভেতরটা ধুকপুক করে উঠলো। প্রায় একশো বছর আগের ডায়েরি!
সন্ধ্যা নামতেই আমরা ডায়েরিটা নিয়ে বসলাম। বেস ক্যাম্পের নিভু নিভু আলোয় ডায়েরির পাতাগুলো কেমন যেন রহস্যময় লাগছিল। প্রথম কিছু পাতা প্রতাপ মল্লিকের সাধারণ দিনলিপির মতো। তার স্ত্রীর নাম ছিল রাধারানী, আর তাদের একটি ছোট ছেলে ছিল, নাম অভ্র। প্রতাপ মল্লিক খুব ধার্মিক ছিলেন, আর তার পরিবারকে খুব ভালোবাসতেন। তার লেখাগুলোতে এক সুখী সংসারের ছবি ফুটে উঠছিল।
কিন্তু ডায়েরির মাঝামাঝি পাতা থেকে লেখাগুলো পাল্টে গেল। তারিখটা প্রায় একশো বছর আগের। প্রতাপ মল্লিক লিখেছে, “আজ একটা অদ্ভূত ঘটনা ঘটলো। আমাদের আঁতুড়ঘরের দরজাটা নিজে থেকেই খুলে গেল। ভেতরে দেখলাম, একটা বৃদ্ধা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখগুলো কেমন যেন অস্বাভাবিক। কোটরাগত চোখ, আর তার দৃষ্টিতে এক শীতল শূন্যতা। সে আমার সন্তানকে আশীর্বাদ করতে চাইল। তার কণ্ঠস্বর ছিল কর্কশ, যেন পাথরে ঘষা।”
প্রতাপ মল্লিক আরও লিখেছে, “বৃদ্ধা মহিলাটা একটা অদ্ভুত আচারের কথা বললো। সে বললো, যদি আমার সন্তানকে দীর্ঘ জীবন দিতে চাই, তাহলে নাকি একটা বিশেষ আচার পালন করতে হবে। তার জন্য কিছু তান্ত্রিক জিনিসপত্র আর কিছু বিশেষ উপাদান লাগবে।” সে আরও বলেছিল যে, এই আচার নাকি তার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া, যা সন্তানের আয়ু বৃদ্ধি করে এবং অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করে।
আমার গা ছমছম করে উঠলো। জয় আর রাহুল আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তাদের চোখে বিস্ময় আর ভয়। প্রিয়াঙ্কা চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়লো। “এখানে একটা ভুল হয়েছিল, অরুণিমা। একটা ভয়ঙ্কর ভুল,” সে ফিসফিস করলো। তার মুখটা আরও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ডায়েরির পরবর্তী পাতায় লেখা, “আমি দ্বিধায় ছিলাম। আমার মনে হয়েছিল এটা শয়তানি আচার। কিন্তু রাধারানী অভ্রকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল। অভ্রর জন্ম থেকেই তার শরীরে একটা অশুভ শক্তি ছিল, রাধারানী প্রায়ই বলতো। সে বললো, অভ্রর শারীরিক দুর্বলতা এবং বারবার অসুস্থতার পেছনে এই অশুভ শক্তিই দায়ী। আমরা বৃদ্ধা মহিলার কথা মতো আচার পালন করলাম। কিন্তু তার পর থেকেই অভ্রর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলো।” প্রতাপ মল্লিকের এই লাইনগুলোয় যেন এক গভীর হতাশা আর অনুতাপ ফুটে উঠছিল।
অধ্যায় ৪ : শিশুর আর্তনাদ এবং অশরীরী উপস্থিতি
ডায়েরির পরের পাতাগুলো আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো। প্রতাপ মল্লিক লিখেছে, “অভ্র দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তার শরীরটা যেন নিস্তেজ হয়ে আসছে। তার চোখগুলো কেমন যেন অদ্ভুত হয়ে গেছে, মনে হয় যেন তার ভেতরে অন্য কেউ বাস করছে। রাতের বেলা সে অকারণে কাঁদে, আর তার কান্না যেন মানুষের মতো নয়। আমার মনে হচ্ছে, আমরা ভুল করেছি। খুব বড় ভুল।” প্রতাপ মল্লিকের লেখাগুলোতে যেন এক পিতার বুকফাটা আর্তনাদ মিশে আছে।
আমার মনে পড়লো আঁতুড়ঘর থেকে শোনা সেই শিশুর কান্নার আওয়াজ। তবে কি অভ্রর আত্মাই এখানে আটকে আছে? সে কি তার মৃত্যুর পরেও মুক্তি পায়নি? প্রিয়াঙ্কা হঠাৎ করে তার চোখ খুললো। তার চোখ দুটোতে এক গভীর শূন্যতা। “আমি তাকে দেখছি, অরুণিমা। শিশুটিকে। সে খুব কষ্ট পাচ্ছে। তার চারপাশে একটা অন্ধকার শক্তি তাকে ঘিরে রেখেছে, যা তাকে মুক্তি দিচ্ছে না।” তার গলাটা যেন কেমন ভারি হয়ে গেছে।
আমরা অনুভব করলাম, ঘরের তাপমাত্রা আবার কমে গেছে। ইএমএফ রিডিং আবার লাফিয়ে উঠলো। এবার আমরা স্পষ্ট অনুভব করলাম, আমাদের চারপাশে একটা শীতল উপস্থিতি। রেকর্ডারে আবার সেই শিশুর কান্নার আওয়াজ শোনা গেল। এবার আওয়াজটা আরও তীব্র, যেন সে আমাদের ঠিক পাশেই কাঁদছে। যেন শিশুটা আমাদের কানে ফিসফিস করে কিছু বলতে চাইছে।
হঠাৎই রাহুল চিৎকার করে উঠলো। তার ক্যামেরা তার হাত থেকে পড়ে গেল, মেঝেতে সশব্দে আঘাত করলো। “দেখো! দেখো!” সে কাঁপতে কাঁপতে আঙুল তুললো দেয়ালের দিকে। আমরা দেয়ালের দিকে তাকালাম। সেখানে স্পষ্ট একটা শিশুর হাতের ছাপ, রক্ত দিয়ে আঁকা। ছাপটা তাজা রক্তের মতো লাল দেখাচ্ছিল, যেন এইমাত্র কেউ রক্ত দিয়ে এঁকেছে। আমরা ভয়ে জমে গেলাম। দেয়ালের ওপর দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে যাচ্ছিল, যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি সেই রক্তের ছাপ থেকে বেরিয়ে আসছে।
আমি ডায়েরির দিকে তাকালাম। প্রতাপ মল্লিক লিখেছে, “আমি বুঝতে পারছিলাম, বৃদ্ধা মহিলা আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। সে অভ্রকে বলির পাঠা বানিয়েছিল। তার ভেতরে সেই অশুভ শক্তি প্রবেশ করিয়েছিল। আমার সন্তানকে আমি রক্ষা করতে পারিনি। অভ্রর শরীরের ভেতরে এক অন্ধকার শক্তি তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল।” এই কথাগুলো যেন প্রতাপ মল্লিকের ভয়ঙ্কর অসহায়ত্বের প্রতিচ্ছবি।
আমার মনে হলো, আমাদের সামনে একটা গভীর রহস্য উন্মোচিত হতে চলেছে। এ কেবল একটা ভূতের গল্প নয়, এটা একটা ট্র্যাজেডি। এক অসহায় পিতা-মাতার ভুল সিদ্ধান্ত আর এক নির্দোষ শিশুর ভয়ঙ্কর পরিণতি। আর সেই ডাইনি, যে এই সব কিছুর মূলে, সে এখনো এই বাড়িতে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
অধ্যায় ৫ : ডাইনি ও তার অভিশাপ
ডায়েরির শেষ দিকের পাতাগুলো প্রতাপ মল্লিকের ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার বর্ণনা। সে লিখেছে, “সেই বৃদ্ধা মহিলাটা আসলে একটা ডাইনি ছিল। সে আমাদের মিথ্যা কথা বলেছিল। সে আমাদের আশা দেখিয়েছিল অভ্রর দীর্ঘ জীবনের, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ। সে অভ্রর আত্মাকে বন্দি করে রেখেছিল তার নিজের শক্তি বাড়ানোর জন্য। এই বাড়ির প্রতিটি ইট, প্রতিটি কোণায় তার শক্তি লুকিয়ে আছে। আমি তাকে থামাতে পারিনি। আমার স্ত্রী রাধারানী পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। সে শুধু অভ্রর নাম ধরে কাঁদতো, আর বলতো, ‘আমার অভ্রকে ফিরিয়ে দাও!’ তার চোখ থেকে রক্ত পড়তো যেন।” প্রতাপ মল্লিকের লেখাগুলো যেন এক গভীর অসহায়তার চিত্র।
ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা ছিল, “আমি প্রতিশোধ নেব। আমি এই ডাইনিকে ধ্বংস করব। আমার সন্তানকে মুক্ত করব। আমি জানি, আমি হয়তো ব্যর্থ হবো, কিন্তু আমি চেষ্টা করব।” এই লেখাটা শেষ হওয়ার ঠিক পরেই প্রতাপ মল্লিকের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। মনে হচ্ছিল, প্রতাপ মল্লিক ডাইনির সাথে লড়াই করতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেছেন।
আমরা বুঝতে পারলাম, প্রতাপ মল্লিক তার সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই ডাইনির ফাঁদে পড়েছিলেন। আর সেই ডাইনিই হয়তো এ বাড়ির অশুভ শক্তির উৎস। সে এখনো এই বাড়িতে তার আধিপত্য বিস্তার করে আছে। জয় তার ল্যাপটপে কিছু প্রাচীন তান্ত্রিক আচার নিয়ে গবেষণা শুরু করলো। সে দেখলো, এই ধরনের ডাইনিরা নাকি মানুষের আত্মাকে বন্দি করে তাদের শক্তি শোষণ করে, আর সেই শক্তি দিয়ে নিজেদের অমরত্ব নিশ্চিত করে।
হঠাৎই আমাদের বেস ক্যাম্পের লাইটগুলো নিভে গেল। আমরা অন্ধকারে ডুবে গেলাম। শুধু আমাদের ইনফ্রারেড ক্যামেরার সবুজ আলোতে চারপাশ আবছা দেখা যাচ্ছিল। ইএমএফ রিডিংগুলো বিপদসীমা অতিক্রম করে গেছে, যেন যন্ত্রগুলো ফেটে যাবে। আমাদের চারপাশে একটা তীব্র ঠান্ডা স্রোত বইছিল, যা আমাদের হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছিল।
“সে আসছে,” প্রিয়াঙ্কা ফিসফিস করলো। তার গলা শুকিয়ে কাঠ। “সেই ডাইনি। সে এই বাড়ির প্রতিটি অনু পরমাণুতে মিশে আছে।” আমরা সবাই শ্বাসরুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। বাতাসের মধ্যে একটা পচা গন্ধ ভেসে আসছিল, যেন অনেক দিনের পুরোনো কোনো পচা মাংসের গন্ধ। আমার মনে হলো, সেই গন্ধটা যেন আমাদের শ্বাসরোধ করে দিচ্ছে। আমাদের রেকর্ডারে এবার স্পষ্ট একটা বিকট হাসির শব্দ শোনা গেল। হাসিটা এতই ভয়ংকর ছিল যে আমাদের সবার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। মনে হলো যেন হাসিটা আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরেই হচ্ছে।
অধ্যায় ৬ : অদৃশ্য হাতের স্পর্শ
অন্ধকারের মধ্যে আমরা অনুভব করলাম, কিছু একটা আমাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। তার উপস্থিতি এতটাই স্পষ্ট যে আমাদের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। জয় তার টর্চ জ্বালানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু টর্চ কাজ করলো না। রাহুল তার ক্যামেরার ফ্ল্যাশ মারলো, কিন্তু ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠলো না। আমরা সম্পূর্ণ অসহায় ছিলাম। আমাদের যন্ত্রগুলো যেন হঠাৎ করে বিকল হয়ে গেছে।
হঠাৎই আমার কাঁধে একটা ঠান্ডা হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। স্পর্শটা এতটাই শীতল ছিল যে আমার মনে হলো যেন আমার চামড়া জমে যাচ্ছে। আমি চমকে উঠলাম। পিছনে তাকাতেই দেখলাম, কেউ নেই। শুধু গাঢ় অন্ধকার। কিন্তু সেই স্পর্শটা যেন আমার চামড়ার গভীরে গেঁথে গেছে। আমার শরীর হিম হয়ে আসছিল, যেন আমি বরফের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। জয় আর রাহুলও একই ধরনের অনুভূতির কথা বললো, তাদের চোখগুলো ভয়ে বড় বড় হয়ে গেছে। প্রিয়াঙ্কা চোখ বন্ধ করে কাঁপছিল, তার শরীর যেন একটা পেন্ডুলামের মতো দুলছিল।
সেই বিকট হাসির শব্দটা আরও তীব্র হয়ে উঠলো। মনে হলো, হাসিটা আমাদের খুব কাছ থেকে আসছে। যেন ডাইনিটা আমাদের চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরছে। তারপর একটা নারী কণ্ঠের ভারী, গম্ভীর আওয়াজ শোনা গেল। তার কণ্ঠস্বর ছিল পাথরের মতো রুক্ষ, যেন শতাব্দী প্রাচীন কোনো পাথরের ওপর ঘষা লাগছে। “তোমরা এখানে কী করছো? এই বাড়ির রহস্য ভেদ করতে এসেছো? তাহলে তোমাদের পরিণতিও প্রতাপ মল্লিকের মতো হবে। তোমরাও এই বাড়ির অংশ হয়ে যাবে!”
আমরা ভয়ে জমে গেলাম। এই প্রথম আমরা সেই ডাইনির কণ্ঠস্বর শুনলাম, যা আমাদের রক্তকে হিম করে দিচ্ছিল। সে বললো, “আমার শক্তি এই বাড়ির প্রতিটি ইঁটে মিশে আছে। আমি অভ্রর আত্মাকে বন্দি করে রেখেছি। আর তোমরা তাকে মুক্ত করতে পারবে না। সে আমার চিরকালের দাস থাকবে।” তার কথায় যেন এক অসীম ক্ষমতার অহংকার ছিল।
আওয়াজটা মিলিয়ে গেল। তারপর সব শান্ত হয়ে গেল। লাইটগুলো আবার জ্বলে উঠলো। জয় আর রাহুল হাফাতে লাগলো, তাদের শরীর কাঁপছিল। প্রিয়াঙ্কার মুখটা সাদা হয়ে গেছে, তার চোখগুলো ঘোলাটে। সে শুধু ফিসফিস করলো, “সে অনেক শক্তিশালী, অরুণিমা। আমরা ওকে হারাতে পারবো না। এই বাড়ির শক্তি তার সাথে মিশে গেছে।”
কিন্তু আমি হার মানতে রাজি ছিলাম না। প্রতাপ মল্লিক তার সন্তানকে বাঁচাতে পারেনি। কিন্তু আমরা হয়তো অভ্রকে মুক্ত করতে পারি। আমাদের হাতে প্রতাপ মল্লিকের ডায়েরি আছে, আর সেই ডাইনি সম্পর্কে কিছু সূত্র। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, পরদিন সকালে আঁতুড়ঘরে ফিরে যাব। এই ডাইনির উৎস খুঁজে বের করতে হবে, তার দুর্বলতা কী, সেটা জানতে হবে।
অধ্যায় ৭ : যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি
পরদিন সকালে আমরা আবার আঁতুড়ঘরে গেলাম। এবার আমরা আরও সাবধানে ছিলাম। আমাদের সাথে বাড়তি ব্যাটারি, টর্চ আর কিছু প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ছিল। প্রিয়াঙ্কা তার মেডিটেশন শুরু করলো। সে চেষ্টা করছিল ডাইনির শক্তিকে অনুভব করতে, তার উৎস খুঁজে বের করতে। জয় তার বিশেষ যন্ত্র দিয়ে আঁতুড়ঘরের প্রতিটি কোণ পরীক্ষা করতে লাগলো, তার ল্যাপটপে বিভিন্ন ধরনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যবেক্ষণ করছিল। রাহুল ছবি তুলতে লাগলো, প্রতিটি কোণের প্রতিটি সূক্ষ্ম বিষয় ক্যামেরাবন্দী করছিল। আমি ডায়েরিটা আবার পড়লাম, প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলাম।
আঁতুড়ঘরের মেঝের সেই বৃত্তের ভেতর আঁকা চিহ্নগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এবার চিহ্নগুলো আরও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি সেগুলোকে আলোকিত করেছে। প্রিয়াঙ্কা হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠলো। তার মুখটা যন্ত্রণায় বিকৃত হয়ে গেছে। “সে অভ্রকে নির্যাতন করছে! আমি তার যন্ত্রণা অনুভব করছি! সে তাকে শেষ করে দিচ্ছে!” প্রিয়াঙ্কার শরীর কাঁপছিল, তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে লাগলো। তার চোখ দিয়ে যেন রক্ত ঝরছিল। আমরা ভয়ে প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকিয়ে রইলাম, যেন সে কোনো গভীর ট্রান্সে চলে গেছে।
জয় তার যন্ত্রের স্ক্রিনের দিকে আঙুল তুললো। তার চোখগুলো ভয়ে বড় বড় হয়ে গেছে। “অরুণিমা, ইএমএফ রিডিং আকাশ ছুঁয়ে গেছে! এটা কোনো সাধারণ রিডিং নয়। আর দেখো, এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য… এটা মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মতো! সে অভ্রর মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করছে!”
আমি প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকালাম। তার চোখগুলো বন্ধ, কিন্তু তার মুখটা যন্ত্রণায় বিকৃত হয়ে গেছে। সে যেন অভ্রর যন্ত্রণা নিজের শরীরে অনুভব করছে। আমাদের চারপাশে একটা তীব্র ঠান্ডা স্রোত বইছিল, যা আমাদের নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট দিচ্ছিল।
হঠাৎই আঁতুড়ঘরের ভেতরের দেয়াল থেকে একটা অদ্ভূত আওয়াজ ভেসে এলো। যেন কেউ দেয়াল ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে। আওয়াজটা এতটাই তীব্র ছিল যে আমাদের কান ফেটে যাচ্ছিল। জয় দ্রুত তার ইনফ্রারেড ক্যামেরাটা দেয়ালের দিকে ফোকাস করলো। স্ক্রিনে আমরা একটা আবছা আকৃতি দেখতে পেলাম। একটা ছোট শিশুর আকৃতি। সে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খাচ্ছিল, যেন সে কোনো অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তার প্রতিটি ধাক্কায় যেন দেয়াল কেঁপে উঠছিল।
আমাদের রেকর্ডারে আবার সেই শিশুর কান্নার আওয়াজ শোনা গেল। কিন্তু এবার কান্নাটা যেন আর্তনাদে পরিণত হয়েছে, যা শুনে আমাদের বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো। তার সাথে যোগ হলো ডাইনির বিকট হাসি। হাসিটা যেন আরও বেশি বিদ্রূপাত্মক, আরও বেশি নিষ্ঠুর। ডাইনি যেন অভ্রকে নির্যাতন করে আনন্দ পাচ্ছিল, তার যন্ত্রণা উপভোগ করছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম, আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। অভ্রকে দ্রুত মুক্ত করতে হবে। কিন্তু কী করে? এই ডাইনিকে কীভাবে হারাবো?
অধ্যায় ৮ : মুক্তির পথ: এক মায়ের আর্তনাদ
আমি ডায়েরির দিকে তাকালাম। প্রতাপ মল্লিক সেই ডাইনির সম্পর্কে কিছু লিখেছিল কিনা, যা দিয়ে তাকে হারানো যায়। প্রতিটি পাতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। ডায়েরির শেষ পাতায় একটা ছোট হাতে লেখা ছিল, যা প্রতাপ মল্লিকের ছিল না। লেখা ছিল, “আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দাও। এক মায়ের আর্তনাদ সব শক্তিকে পরাজিত করতে পারে।” লেখাটা ছিল রাধারানীর হাতের লেখা। প্রতাপ মল্লিকের স্ত্রী, অভ্রর মা। তার লেখাগুলো ছিল অস্পষ্ট, যেন হাতে লেখা হয়েছিল কাঁপতে কাঁপতে।
আমি প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকালাম। তার মুখটা তখনও যন্ত্রণায় বিকৃত, কিন্তু তার চোখগুলো যেন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। “প্রিয়াঙ্কা, তুমি অভ্রর মায়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছো? রাধারানীর আর্তনাদ?” প্রিয়াঙ্কা মাথা নাড়লো। তার ঠোঁট কাঁপছিল। “হ্যাঁ, আমি তার দুঃখ অনুভব করছি। তার আকাঙ্ক্ষা, তার ভালোবাসা… সেটা আমাকে শক্তি দিচ্ছে।”
আমি জয় আর রাহুলকে বললাম, “আমরা রাধারানীর আর্তনাদকে ব্যবহার করব। ডাইনি মানুষের আত্মাকে বন্দি করে শক্তি পায়। কিন্তু এক মায়ের আর্তনাদ তার শক্তিকে দুর্বল করতে পারে। মাতৃস্নেহ সব বাধা অতিক্রম করতে পারে।” আমার কথায় যেন একটা নতুন আশা জেগে উঠলো।
আমি প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকালাম। “প্রিয়াঙ্কা, তুমি রাধারানীর কণ্ঠস্বর অনুভব করো। তাকে ডাকো। তাকে বলো, তার সন্তানকে মুক্তি দিতে হবে। তার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য তার আর্তনাদই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।” আমি জানি, প্রিয়াঙ্কার মাধ্যমে রাধারানীর আত্মা তার শক্তি প্রকাশ করতে পারবে।
প্রিয়াঙ্কা চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিলো। সে ধীরে ধীরে রাধারানীর নাম ধরে ডাকতে লাগলো। তার গলা থেকে বেরিয়ে এলো এক তীব্র আর্তনাদ, যা যেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জমাট বাঁধা ছিল। সেই আর্তনাদে ছিল এক মায়ের যন্ত্রণা, তার হারানো সন্তানের জন্য ভালোবাসা, আর সেই ভালোবাসা যেন এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে উঠলো।
প্রিয়াঙ্কার আর্তনাদ তীব্র হতে লাগলো, তার কণ্ঠস্বর যেন গোটা বাড়িতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। আঁতুড়ঘরের ভেতরে থাকা ডাইনির বিকট হাসিটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল, যেন তার শক্তি ফুরিয়ে আসছে। ইএমএফ রিডিংগুলো দ্রুত নিচে নামতে শুরু করলো, যেন যন্ত্রগুলো বিশ্রাম নিচ্ছে। দেয়ালের সেই শিশুর আকৃতিটা যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, যেন সে আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারপর একটা তীব্র আলোর ঝলকানি। ঝলকানিটা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে আমাদের চোখ বন্ধ হয়ে গেল।
আলোটা মিলিয়ে যেতেই আমরা দেখলাম, আঁতুড়ঘরের ভেতরে আর কোনো অন্ধকার শক্তি নেই। দেয়ালের সেই শিশুর আকৃতিটা মিলিয়ে গেছে। রেকর্ডারে আর কোনো শিশুর কান্নার আওয়াজ নেই। সব শান্ত হয়ে গেছে। জয় তার ল্যাপটপের দিকে তাকালো। “ইএমএফ রিডিং স্বাভাবিক! তাপমাত্রা স্বাভাবিক! সব কিছু শান্ত!”
আমরা বুঝতে পারলাম, অভ্র মুক্তি পেয়েছে। রাধারানীর আর্তনাদ তার সন্তানকে মুক্ত করেছে। সেই ডাইনি পরাজিত হয়েছে। আমরা অনুভব করলাম, ঘরের মধ্যে একটা হালকা, শীতল বাতাস বইছে। বাতাসের মধ্যে যেন এক অদৃশ্য মায়ের স্নেহের স্পর্শ, যা আমাদের সবাইকে আচ্ছন্ন করে রাখলো।
আমরা সবাই একে অপরের দিকে তাকালাম। আমাদের চোখে আনন্দ আর বিস্ময়। এই বাড়িটা এখন হয়তো আর ভূতের ভিটে নয়। এটা এখন শান্তি আর মুক্তির প্রতীক। আমরা সফল হয়েছিলাম। কিন্তু আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরছিল – এই ডাইনি কি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে, নাকি সে আবার ফিরতে পারে? এই প্রশ্নটা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, কারণ সত্যিকারের ভৌতিক গল্পে শেষ বলে কিছু নেই, শুধু থাকে নতুন এক শুরুর ইঙ্গিত।
শেষ

ছবি এআই
© পিনাকী রঞ্জন পাল