মশা কাহিনী

বৃষ্টির দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে তিন হাজার প্রজাতির মশা উৎপন্ন হয়। এরা সাধারণ মশার থেকে ভিন্নতর। কিছু কিছু প্রজাতির মশারা তো প্রাণঘাতী হয়ে থাকে। যারা বাঘ, হাতির মতো শক্তিশালী প্রাণীদের মেরে ফেলতে সক্ষম। মশাদের নিয়ে এমনই কিছু জানা অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন পিনাকী রঞ্জন পাল

অস্ট্রেলিয়ার উত্তর প্রান্তে তিন ইঞ্চি লম্বা লাল রঙের এক ধরনের বিষাক্ত মশা পাওয়া যায়। এরা এতটাই বিষাক্ত যে এদের স্পর্শ মাত্র মানুষ, পশু বা পাখিরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। প্রকৃতি এদের অঙ্গে এমন এক অদ্ভূত শক্তি দিয়েছে যে এরা এক সেকেন্ডে হাজারবার কামড়াতে পারে। প্রকৃতির কি অদ্ভূত লীলা, এখানে এক ধরনের লাল রঙের পোকা পাওয়া যায়, যাদের ‘এলডিয়া’ বলে। এরা মশাদের সানন্দে খেয়ে ফেলে।

আমেরিকার আমাজন নদীর তীরে ‘ঔবি’ মশারা বাস করে। এরা প্রতি বছর ৭০-৮০ লক্ষ ফল খেয়ে ফেলে। এরা লাখে লাখে যে গাছে আক্রমন করে তাকে শেষ না করে সেখান থেকে সরে না। যাবার পর সেই গাছের কান্ড বা মাটির নীচে থাকা শিকড়ও খুঁজে পাওয়া যায় না। কালাজাদুর দেশ ‘আফ্রিকাতে সি সি প্রজাতির মারাত্মক মশা অন্ধকার অরণ্যে পাওয়া যায়। এই মশা মানুষের পদশব্দ শুনেই আক্রমণ করে। এই মশাদের শরীরে এক ধরনের বিষ থাকে যা মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম। ২০-২৫টা মশা মিলে কোনো গোরু, মহিষ কিংবা ঘোড়াকে কামড়ালে সেটি তৎক্ষণাৎ মরে যাবে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল যে, এদের কামড়ে গাধাদের কোনো ক্ষতি হয় না।

Mosquito story

দক্ষিণ আফ্রিকার জামিল অরণ্যে ‘সূচ’ মশাদের দেখা যায়। এরা দেখতে সুঁচের মতো লম্বা বলে এরকম নামকরণ। এরা যখন দল বেঁধে কারও ওপর আক্রমণ করে তো সূঁচ ফোটাবার মতো ফুটো করে ঢুকে যায়। এরা যার ওপর আক্রমণ করে তার শরীর থেকে ফোয়ারার মতো রক্ত বার হতে থাকে। ব্রাজিলের গভীর অরণ্যে পাওয়া যায় ‘পূজারি’ মশাদের। এদের নামকরণের পিছনেও রয়েছে এক গল্প। এরা সামনের পা দুটো মুড়ে যখন কোথাও বসে তখন এমন মনে হয় যে কোনো পূজারি হাতজোড় করে পূজা করছে। কিন্তু নিজের শিকার সামনে পেলেই এরা ঝট করে পা মেলে তাকে ধরে খেয়ে ফেলে। রাশিয়ার অরণ্যে বর্ষার সময় চার ইঞ্চি দীর্ঘ মশাদের পাওয়া যায়। এই মশারা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়, আর যখন কোনো পশুপাখির ওপর হামলা করে তো তাকে কামড়ে কামড়ে আধমরা করে ফেলে। উগান্ডাতেও এক ধরনের মশা আছে যারা শুধু মানুষের চোখে কামড় দেয়। তাই এই মশাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সেখানকার মানুষেরা ঘর ধোঁয়ায় ভরিয়ে বসে। নাইজেরিয়ার পূর্বদিকে লেরিপা নামক মশাদের পাওয়া যায়। যখনই কোনো পশু-পাখি ওদের সামনে দিয়ে যায় এরা তিরের মতো তার ওপর আক্রমণ করে। এতে সেই পশুপাখির বাঁচার আশা ক্ষীণ হয়ে যায়। আশ্চর্যের কথা হল এই মশাদের কামড়ে গাধা আর শুকরদের কোনোরকম ক্ষতি হয় না। এইজন্য এখানকার বাসিন্দারা গাধা, আর শূকর পালন করে জীবন নির্বাহ করে। ইউরোপের সমুদ্রের তীরে এক ধরনের কালো মশা পাওয়া যায়। এরা খেতের ফসল খেয়ে ফেলতে ওস্তাদ। সুইডেনে এই মশারা হাজার হাজার টন শস্য খেয়ে ফেলে। মধ্য ফ্রান্সে এঁরা মাঝেমধ্যেই খেতের ফসলের অনেক ক্ষতি করে থাকে। সেনেগালের অরণ্যে এক ধরনের বাজনাদার মশা পাওয়া যায়। সন্ধেবেলায় এই মশারা নিজেদের মুখ থেকে এক ধরনের মধুর শব্দ বার করে। অনেকে তো এদের বাজনা শোনার জন্য অরণ্যে চলে যায়। এই মশারা অবশ্য মশককূলের অপবাদও বটে, কেননা এরা কাউকেই কামড়ায় না।

পেরুর অরণ্যে এক ধরনের মশা দেখা যায়। এরা মাটি থেকে ৩০-৪০ ফুট ওপরে এক সরলরেখায় উড়ে বেড়ায়। আশ্চর্যের বিষয় হল যে, এদের লাইন কখনোই বাঁকা হয় না। জাপানের গভীর অরণ্যে তির-ধনুক আকারের দুর্লভ মশা কখনো কখনো দেখা যায়। এদের কামড়ের প্রভাবে বাঘ, সিংহ, হাতি, ক্যাঙ্গারু প্রভৃতিও ভয় পেয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *