গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ এ পৃথিবীর সমস্ত নতুন ঘটনা বা তথ্য স্থান পেয়ে থাকে। গিনেস বুক হল বার্ষিক পুস্তক। এর সর্বপ্রথম প্রকাশ হয় ১৯৫৫ সালে। ১৯৫৭ এবং ১৯৫৯ সালে কোন কারণবশত এই পুস্তকের সংস্করণ প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু এরপর থেকে এই পুস্তুক ফ্লিট স্ট্রীট, লন্ডনস্থিত কার্যালয় থেকে প্রতি বছর নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। আজ এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পুস্তক আর বিশ্বের ৩০টি প্রধান ভাষায় এটি প্রকাশিত হয়ে থাকে। জানেন কি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাদে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে সবচেয়ে বেশি দরখাস্ত আসে ভারতীয়দের কাছ থেকে। আজ এই লেখায় ভারতীয়দের করা কিছু বিশ্ব রেকর্ড নিয়ে লিখেছেন পিনাকী রঞ্জন পাল।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পাইলট উইংগ কমান্ডার এম দত্ত এ পর্যন্ত বিশ্বের সব থেকে উঁচু জায়গায় উদ্ধারকার্য চালিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। ১৯৮৬ সালের ১৪-১৮ নভেম্বর ৭৫ বার উদ্ধারকার্য চালিয়ে বরফের মৃত্যু থাবা থেকে উদ্ধার করে আনেন ১৪৫ জন মানুষকে।
ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ক্যাপটেন নিবেদিতা ভাসিন মাত্র ২৬ বছর বয়সে জেট বিমান চালানর বিরল রেকর্ড স্থাপন করেছেন। ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি মুম্বাই আওরঙ্গাবাদ-জয়পুর রুটে তিনি জেট বিমানটি চালান। নিবেদিতা ভাসিন হলেন অসামরিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ পাইলট।
ভারতের বালমুরলী আম্বাতি বর্তমানে বিশ্বের কনিষ্ঠতম চিকিৎসক। ১৭ বছর বয়স্ক এই তরুণ ১৯৯৫ সালের ১৯মে নিউ ইয়র্কের মাউন্ট মিনাই স্কুল অফ মেডিসিন থেকে তাঁর ডিগ্রি লাভ করেন। এর আগে এই কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন ইজরায়েলের এক তরুণ।
৮ বছরের সোনালী পান্ডা ১৯৯৪ সালের জেনারেল সার্টিফিকেট অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন লাভ করে। তার পড়াশোনার ক্ষেত্র ছিল কম্পিউটার সায়েন্স। সোনালী হল বিশ্বের কনিষ্ঠতম জি সি এস ই প্রাপক।
জলন্ধরের আট্টার ১৫ বছরের অভিষেক জৈন ১৯৯১ সালে ব্রাসেলস্-এ অনুষ্ঠিত বিশ্ব টাইপিং চ্যাম্পিয়নশিপের জুনিয়র বিভাগে জয়ী হয় (প্রতি মিনিটে ১১০টি শব্দ)। অভিষেক জৈনের নাম গিনেস বুকে স্থান পেয়েছে বিশ্বের দ্রুততম টাইপিস্ট হিসাবে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী পর্বতারোহী হিসাবে বাবা মহীন্দ্র পালের নাম গিনেস বুকে নথিবদ্ধ হয়েছে। বাবা মহিন্দ্র পাল ১৯৯৪ সালের ৩০ আগস্ট গাড়োয়াল হিমালয়ের ৭৩৬০ মিটার উচ্চতার মাউন্ট আবি-গামিন পর্বত শিখরে আরোহন করেছিলেন।
একদিনে সর্বাধিক সংখ্যক গান রেকর্ড করে গিনেস বুকে নাম তুলেছিলেন কণ্ঠশিল্পী কুমার শানু। তিনি একদিনে ২৮টি গান রেকর্ড করেছিলেন।
সব থেকে বেশি গান রেকর্ড করে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন লতা মঙ্গেশকর। ১৯৪৮ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মোট ২০টি ভারতীয় ভাষায় অন্তত ৩০,০০০ গান তিনি রেকর্ড করেছেন। প্রায় ২০০০ চলচ্চিত্রে তিনি গান গেয়েছেন।
সর্বাধিক অপারেশন করার বিশ্ব রেকর্ড আছে পদ্মভূষণ ডাঃ এম সি মোদির। একদিনে ৮৩৩টি ছানি অপারেশন করে ডাঃ মোদি এই রেকর্ড গড়েন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি মোট অপারেশন করেছেন ৫,৯৫,০১৯টি।
সর্বাধিক চিকিৎসাবিদ্যার বইয়ের লেখক হলেন বিএসএফের ডাঃ লক্ষীচাঁদ গুপ্তা। তিনি ৬৫টি ডাক্তারির বই লিখেছেন। ১৯৮৮ সালে ডাঃ গুপ্তাকে দেওয়া হয়ডাঃ বি সি রায় জাতীয় পুরস্কার।
ভারতের শকুন্তলা দেবীর নাম গিনেস বুকে লেখা হয়েছে মনুষ্য কম্পিউটার হিসাবে। তিনি ১৯৮০ সালের ১৮ জুন লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজে কম্পিউটার বিভাগে ১৩ অঙ্কের দু’টি সংখ্যার গুণ মুখে মুখে করে দেন মাত্র ২৮ সেকেন্ডে।
সব থেকে বেশি বয়সে প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য গিনেস বুকে নাম উঠেছে মোরারজি দেশাইয়ের। তিনি ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে ৮১ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
জহর ঢোলাকিয়া এল আই সির রাজকোট ডিভিশনের ডেভলপমেন্ট অফিসার। বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৯৬৯-৭০ সালে এক কোটি টাকার নতুন পলিসি সংগ্রহ করেন, গত ২৭ বছর ধরেই তিনি প্রতি বছর ১ কোটি টাকার নতুন পলিসি সংগ্রহ করেন। গিনেস বুকে তাঁর নাম ১৯৮৫ সালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এবার ভারতীয়দের গড়া কয়েকটি বিচিত্র রেকর্ডস উল্লেখ করি, সবগুলি গিনেস বুকে স্থান পেয়েছে। জয়পুরের সুরেন্দ্র অপহারিয়া ১৯৯১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি চালের দানায় ১,৩১৪টি অক্ষর লেখেন। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরের ভেঙ্কট রবীন্দ্রকুমার ১৯৯০ সালের ১০ -১২ মার্চ ৪৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে শিস্ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। পুনের যুবক মিলন্দি দেশমুখ গিনেস বুকে নাম তুলেছেন মাথায় দুধের বালতি নিয়ে টানা ৬৫ কিমি হেঁটে। ১৯৮৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০৭ দিন লস এঞ্জেলস থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত পিছন দিকে দৌড়ে অরবিন্দ পান্ডিয়া বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। পুনের শ্রীধর চিল্লাই-এর হাতের নখ বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ। ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ মাপ নিয়ে দেখা যায় শ্রীধরের বাঁ হাতের পাঁচ আঙুলের নথের দৈর্ঘ্য হল গড়ে ৪৫২.৫ সেমি। মাদ্রাজের তাঞ্জোর জেলার তিরুভাদুতুরাই মঠের প্রধান স্বামী পান্ডারাসান্নাধির চুল বিশ্বের দীর্ঘতম। ১৯৪৯ সালে তাঁর চুলের দৈর্ঘ্য ছিল ২৬ ফুট। ১৫ মাস ধরে আলিগড় থেকে জম্মু পর্যন্ত ১,৪০০ কিমি বুকে হামাগুড়ি ৩২ বছরের জগদীশ চন্দ্র ১৯৮৫ সালে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। এক পায়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার বিশ্ব রেকর্ড করেছেন তামিলনাড়ুর সত্যমঙ্গলম সিটির এন রবি ১৯৮২ সালে ৩৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ গোঁফধারী ব্যক্তি হলেন রাজস্থানের রাম সিং চৌহান। এর গোঁফের দৈর্ঘ্য ৪ মিটার ২৯ সেন্টিমিটার। পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা কানের লোমের অধিকারী হলেন রাধাকান্ত বাজপেয়ি, যাঁর কানের লোম ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা।
Photo source – Guinness World Records official FB page.