পিনাকী রঞ্জন পাল
একবার এক বিড়াল একটি ইঁদুর ধরেছিল। সৌভাগ্যবশত ইঁদুরের লেজ বিড়ালের থাবার নীচে ছিল। ইঁদুর প্রথমে তো বিড়ালের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু যখন সে বুঝতে পারে যে বিড়ালের থাবা থেকে ছোটা সম্ভব নয়, তখন সে নিজেকে বাঁচাবার জন্য বুদ্ধি বার করে। ইঁদুর বড়োই নম্রতার সঙ্গে বিড়ালকে বলে- বিড়াল মাসি, যদি তুমি কিছু মনে না কর তবে একটা কথা বলব। শোনা যায় যে বিড়ালরা ভীষণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। নিজের শরীরকে নাকি তোমরা সর্বদা পরিষ্কার রাখো। নোংরা ব্যাপারটা তোমাদের একদম পছন্দ নয়। মল ত্যাগ করার আগেও তোমরা গর্ত খুঁড়ে মল ত্যাগ করে সেটা মাটি দিয়ে ঢেকে দাও যাতে দুর্গন্ধ বার না হয়। এসব তো খুবই ভালো ব্যবহার। কিন্তু বিড়াল মাসি, তোমার এই কাজ আমার ভালো লাগেনি। না তো তুমি খাবার আগে হাত পরিষ্কার করলে, না তো মুখ। আর আমাকে খাবার জন্য তুমি প্রস্তুত। আমি তো ধরা পড়েই গেছি। তোমার থাবার চাপে আধমরাও হয়ে গেছি। পালিয়ে যাবার ক্ষমতাও নেই। তবে আর চিন্তা কীসের ? যাও, হাত-মুখ ধুয়ে এসো। ততক্ষণ আমি এখানেই শুয়ে থাকব। খাবার খাওয়ার আগে হাত-মুখ ধোয়া অবশ্যই উচিত। তুমিও তো ভীষণ পরিষ্কারই থাকো।”
নিজের প্রশংসা শুনে বিড়াল ফুলে ওঠে। ইঁদুরের কথা ওর মনে ধরে। সে ভাবে ইঁদুর তো ঠিকই বলেছে, খাবার আগে হাত-মুখ ধোয়া উচিত। বিড়াল ইঁদুরকে ছেড়ে দিয়ে হাত-মুখ ধুতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। থুতু দিয়ে সে নিজের থাবাকে ভেজায় আর তারপর সেটা দিয়ে নিজের মুখ পরিষ্কার করতে থাকে। বিড়াল যখন এই কাজে ব্যস্ত তখন সুযোগ পেয়ে ইঁদুর পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচায়।
হাত-মুখ ধুয়ে এসে বিড়াল দেখে যে ইঁদুর আর তার জায়গায় নেই পালিয়েছে। ইঁদুরের চালাকি আর বদমায়েশি দেখে বিড়াল দুঃখ পায়, নিজের বোকামির জন্য লজ্জিত ও এখন হয়। কিন্তু তো আর কোনো উপায় নেই। শিকার তো হাত থেকে পালিয়ে গেছে। ও ভাবে-আমি দারুণ ভুল করেছি। আমার ইঁদুরের কথা মেনে নেওয়া একদমই উচিত হয়নি। শিকার খাবার পর হাত-মুখ নোংরা হয়ে যায়। এইজন্য খাবার খাওয়ার পরেই হাত মুখ ধোয়া উচিত। যা হওয়ার হয়েছে, পরবর্তীতে এ ব্যাপারে। খেয়াল রাখব।
বলা হয়, তখন থেকেই বিড়াল খাবার খাওয়ার আগে হাত-মুখ না ধুয়ে, খাবার, খাওয়ার পরে নিজের হাত-মুখ ধোয়।
(লোককথা অবলম্বনে)