খরগোশের লেজ এত ছোটো কেন?

পিনাকী রঞ্জন পাল

অনেকদিন আগেকার কথা। সেই সময় খরগোশের লেজ লম্বা ছিল। এখন যেরকম তার শরীর মোলায়েম সাদা লোমে ঢাকা থাকে, তেমনই মোলায়েম সাদা লোম তার লম্বা লেজেও ছিল। কাঠবিড়ালির লেজের মতোই খরগোশের লেজও সোজা হয়ে থাকতো। যখন খরগোশ দ্রুত ছুটতো তখন তার লম্বা সাদা লেজ লাফাতো। লম্বা লেজের জন্য খরগোশকে ভীষণ আকর্ষক লাগতো। নিজের লম্বা সুন্দর লেজের জন্য খরগোশের গর্বও ছিল অনেক।

কিন্তু এই লম্বা সুন্দর লেজ খরগোশের জন্য কখনও কখনও মারাত্মক বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াত। যখন কোনো শিকারি কুকুর অথবা শিয়াল খরগোশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে তখন খরগোশ দ্রুত পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতো, কিন্তু কখনও কখনও এরকম হত যে খরগোশের লম্বা লেজ কুকুর বা শিয়ালের কব্জায় চলে আসতো। খরগোশ দ্রুত পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচালেও লেজের কিছু লোম উঠে যেত।

খরগোশ নিজেকে বাঁচাবার উপায় চিন্তা করে। সে ভাবলো যদি ঝোপঝাড়ে থাকতে শুরু করি তবে কুকুর-শিয়াল তাকে দেখতে পাবে না। এটা ভেবে খরগোশ খোলা মাঠ ছেড়ে ঝোপঝাড়ে থাকতে আরম্ভ করলো।

ঝোপঝাড়ে ওর লম্বা সাদা লেজ কখনও কখনও অবশ্য আটকে যেতা কিন্তু খরগোশ সাবধানে সেসব সামলে নিত। একদিন খরগোশ দেখে যে বনে আগুন লেগেছে, গাছপালা লতাপাতা সব আগুনে জলছে।

খরগোশের এক বন্ধু ছিল কাঠবিড়ালী। ও বনের এক গাছে থাকতো। বনের যেদিকে আগুন লেগেছিল, সেদিকেই কাঠবিড়ালীর বাসা ছিল। খরগোশ ভাবলো কাঠবিড়ালীকে খবর দেওয়া দরকার যে বনে আগুন লেগেছে। এটা যেন আবার না হয় যে কাঠবিড়ালী গাছের কোটরে ঘুমিয়েই থাকলো আর আগুন তার কাছে পৌঁছে সব শেষ করে দিল।

বন্ধুর চিন্তা করতে করতে খরগোশ সেদিকে দৌড়াতে থাকলো। কাঠবিড়ালীর গাছের কোটরের নীচে গিয়ে খরগোশ চিৎকার করে বন্ধুকে ডাকলো আর পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিল। কিন্তু সে কোনো উত্তর পেল না। ভাবলো কাঠবিড়ালী ঘুমিয়েই আছে। এইজন্য ও জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো তবুও গাছের উপর থেকে সে কোনো জবার পেল না।

এদিকে আগুন তার দিকে এগিয়ে আসছে। খরগোশ ভাবলো-সম্ভবত কাঠবিড়ালী আগুন লাগার ব্যাপারটা টের পেয়ে আগেই পালিয়ে গেছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। আগুন খরগোশকে প্রায় ধরে ফেলেছে। খরগোশ এবার নিজেকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে আগুনের উলটোদিকে দৌড়াতে থাকে। ও দ্রুত দৌড়েও নিজেকে আর আর আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলো না। খরগোশের লেজে আগুন লেগে গিয়েছিল। ফুলে থাকা মোলায়েম লোমের মধ্যে আগুন ধরতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব হয় না। ভাগ্য ভালো যে পালাবার সময় খরগোশ একটি ছোটো পুকুর দেখতে পেয়েছিল। তার জলে ঝাঁপ দিয়ে খরগোশ লেজের আগুন নেভায়। তার সুন্দর, সাদা গর্বের লেজ তো আর ছিল না। কিন্তু খরগোশ সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়ে ভগবানকে অসীম ধন্যবাদ দিল।

পরের দিন সে কাঠবিড়ালীর দেখা পায়। খরগোশের পুড়ে যাওয়া লেজ দেখে কাঠবিড়ালী জানতে চায় লেজ কেমন করে পুড়লো ? খরগোশ তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। সব কথা শুনে কাঠবিড়ালী ভীষণ অনুতপ্ত হয়, কিন্তু এখন আর কি করা যাবে।

সেই থেকে খরগোশের লেজ ছোটো হয়ে গেল। লেজ যদিও খুব ছোটো কিন্তু খরগোশ নিজের সাদা কোমল লোম আর লম্বা কানের জন্য সকলের কাছে অতি প্রিয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *