Cricket : নীতীশের রিভার্স স্কুপ: সাহসী শটে আলোচনার কেন্দ্রে ভারতীয় তরুণ

পিনাকী রঞ্জন পাল : ২০২৪-২৫ বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রথম দিন, অ্যাডিলেডে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচে নীতীশ কুমার রেড্ডি তার ব্যাটিং দক্ষতায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন। স্কট বোল্যান্ডের বলে রিভার্স স্কুপে ছক্কা হাঁকিয়ে এই তরুণ অলরাউন্ডার শুধু দর্শকদের মুগ্ধ করেননি, বরং মনে করিয়ে দিয়েছেন ঋষভ পন্থের সেই বিখ্যাত পার্থ টেস্টের স্কুপ শটের কথা।

অবাক করা শট, বিস্মিত বোল্যান্ড : ভারতের ইনিংসের ৪২তম ওভারে স্কট বোল্যান্ড অফ স্টাম্পের বাইরে একটি নিখুঁত ডেলিভারি করেন। কিন্তু নীতীশ দ্রুত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে পয়েন্ট এবং গালির মাঝখান দিয়ে বলটিকে সোজা মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন। এমন সাহসী শট দেখে অবাক হয়ে যান অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডাররা। বোল্যান্ডের হতাশার ছাপ স্পষ্ট ছিল, আর অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা যশপ্রীত বুমরাহ হাসি ধরে রাখতে পারেননি।

সুনীল গাভাস্কারের কথায়, “মাত্র দ্বিতীয় টেস্টে নেমে এমন একটি শট খেলা দারুণ সাহসের পরিচায়ক। নীতীশ নিজেকে অসাধারণভাবে মেলে ধরেছে।”

প্রতিভার উত্থানের গল্প : নীতীশ কুমার রেড্ডির ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয়েছিল হায়দরাবাদে, হিন্দুস্তান জিংকের মাঠে। তার বাবা মুতায়ালা রেড্ডি, যিনি ওই কোম্পানিতে চাকরি করতেন, নীতীশের প্রতিভা প্রথম লক্ষ্য করেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে, বাবার সঙ্গে মাঠে গিয়ে খেলায় মুগ্ধ হয়ে যায় ছোট্ট নীতীশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যাটিংয়ের নিখুঁত টাইমিং ও স্ট্রোক প্লে সবাইকে বিস্মিত করতে থাকে।

পরে এমএসকে প্রসাদের নজরে পড়েন তিনি। অন্ধ্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কোচিং ক্যাম্পে সুযোগ পান। মাত্র ১৪ বছর বয়সে একটি ইনিংসে ৪৪১ রান করে তিনি জাতীয় স্তরে চমক আনেন। বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে ২৬ উইকেট নিয়ে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে জেতেন বিসিসিআই-এর জগমোহন ডালমিয়া ট্রফি।

বাবার আত্মত্যাগ : নীতীশের প্রতিভার বিকাশের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তার বাবা মুতায়ালা রেড্ডির। ছেলের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি তাকে সমর্থন দেন। নীতীশও একদিন বাবার সেই আত্মত্যাগের মর্যাদা রাখেন।

অ্যাডিলেডে সাহসী ইনিংস : টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই নীতীশ প্রমাণ করেছেন তিনি বিশেষ কিছু করতে সক্ষম। অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম দিন ভারত যখন ব্যাটিং বিপর্যয়ে ভুগছিল, তখন নীতীশ দলের স্কোর ১৮০ পর্যন্ত নিয়ে যান। ৫৪ বলে ৪২ রানের ইনিংসে তিনি ৩টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকান। তবে তার রিভার্স স্কুপ ছক্কাটি ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত।

যুদ্ধজয়ের মানসিকতা : টেস্ট ম্যাচে নীতীশের ব্যাটিং শুধুমাত্র রান করা নয়, বরং প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করার একটি কৌশল। দল যখন চাপে, তখনও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলাটা চালিয়ে গেছেন। স্কোরবোর্ডে হয়তো তার ৪২ রানের উল্লেখ থাকবে, কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীরা জানবে, এই রান কেবল সংখ্যা নয়—এটা সাহস, দক্ষতা এবং মানসিকতার প্রতীক।

৬ ডিসেম্বর ২০২৪-এ অ্যাডিলেড টেস্টে নীতীশ কুমার রেড্ডি নিজেকে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হিসেবে প্রমাণ করেছেন। এই তরুণের সামনে যে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো জায়গা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *