অস্কারের দৌড়ে ভারতীয় হিন্দি ছবি: হতাশা বনাম সম্ভাবনা

পিনাকী রঞ্জন পাল : বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার অস্কারের দৌড়ে মুখ থুবড়ে পড়ল ভারতের মনোনীত হিন্দি ছবি “লাপাতা লেডিজ”। ফিল্ম ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া থেকে অস্কারের জন্য মনোনীত হওয়া কিরন রাও পরিচালিত এই ছবিটি প্রাথমিক বাছাই পর্বেও জায়গা করে নিতে পারেনি। অ্যাকাডেমি থেকে বিদেশি ছবি বিভাগের জন্য নির্বাচিত ১৫টি সিনেমার তালিকায় স্থান না পাওয়ায় আবারও বিতর্ক দানা বেঁধেছে ভারতের অস্কার নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে।

লাপাতা লেডিজ

“লাপাতা লেডিজ” ছবিটি মনোনীত হওয়ার পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন পায়েল কাপাডিয়া পরিচালিত “অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট” ছবিটিকে বেছে নেওয়া হলো না। কান চলচ্চিত্র উৎসবে উচ্চ প্রশংসা পাওয়া এবং পুরস্কৃত হওয়ার পরও এই ছবিটি অস্কারের দৌড় থেকে বাদ পড়ার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা।

অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট

অস্কারের জন্য বাদ পড়লেও “অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট” ছবিটি ২০২৫ সালের গোল্ডেন গ্লোবস পুরস্কারের জন্য বিদেশি ছবি বিভাগে মনোনীত হয়েছে। পাশাপাশি, পায়েল কাপাডিয়া সেরা পরিচালকের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছেন, যা ভারতের জন্য এক বড় সম্মান।

ভারত থেকে পাঠানো হিন্দি ছবি যখন অস্কারের দৌড়ে টিকে থাকতে ব্যর্থ, তখন ব্রিটেন থেকে মনোনীত সন্ধ্যা সুরি পরিচালিত হিন্দি ছবি “সন্তোষ” স্থান করে নিয়েছে শীর্ষ ১৫-র তালিকায়। একজন মহিলার জীবন সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি হিন্দি ভাষায় হলেও এটি ব্রিটেনের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ছবির মুখ্য চরিত্রে সাহানা গোস্বামীর অনবদ্য অভিনয় ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

বছরের পর বছর ভারতের অস্কার নির্বাচন প্রক্রিয়া বিতর্কিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত এবং পুরস্কৃত সিনেমাগুলোকে কেন বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিযোগিতামূলক সিনেমাকে পাঠানো হয়, এই প্রশ্ন তুলেছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। এ বছরও একই বিতর্ক উঠেছে। “লাপাতা লেডিজ” ছবিটি না জিতলেও, ভারতের সিনেমার সম্ভাবনা গোল্ডেন গ্লোবস এবং ব্রিটেনের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়াচ্ছে।

ভারতের সিনেমা নিয়ে বিশ্বমঞ্চে আরও পরিকল্পিত ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পুরস্কারের লড়াইয়ে জায়গা করে নিতে কেবল ভালো সিনেমা বানানোই নয়, সঠিক প্রচারণা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। “সন্তোষ” এবং “অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট” এর মতো সিনেমাগুলোর সাফল্য ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎকে নতুন দিশা দেখাতে পারে।

ভারতের সিনেমা বারবার প্রমাণ করেছে যে এতে প্রতিভার কোনো অভাব নেই। প্রয়োজন কেবল সেই প্রতিভাকে সঠিকভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরার। “লাপাতা লেডিজ” এর ব্যর্থতা হয়তো একটি ধাক্কা, কিন্তু “সন্তোষ” এবং “অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট” এর সাফল্য নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

ছবি সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *