পিনাকী রঞ্জন পাল
আমাদের সমাজে অফিসবাবুরা হলেন এক বিশেষ শ্রেণির মানুষ—যাঁদের উপরই নির্ভর করে দেশের প্রশাসনিক চাকা। তাঁরা থাকলে দেশের কাজ হয়, আর তাঁরা যদি একটু ‘বিশ্রামে’ থাকেন, তাহলেও দেশ এগোয়—যদিও একটু ধীরগতিতে। এই লেখাটি তাঁদের উদ্দেশ্যে, বিশেষত যারা কর্মজীবনে ‘অক্লান্ত পরিশ্রম’ না করেও সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে চান। এখানে কিছু অমূল্য উপদেশ দেওয়া হল, যা মানলেই আপনি অফিসের অলিখিত নিয়ম মেনে চলার গুণী হয়ে উঠবেন।
প্রথম পাঠ: সময়ের প্রতি সদয় হোন
অফিস সময়মতো খুললেও আপনার তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। গ্রাহকরা তো এটা দেখেই খুশি হবে যে অফিস ঠিক সময়েই খোলা হয়েছে, তাই না? একটু দেরি করে এলেও দারোয়ান থেকে বস—সবাই বুঝবে আপনি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।
দ্বিতীয় পাঠ: বসের প্রতি অনুগত থাকুন
বসের পছন্দ-অপছন্দ বোঝা এবং অনুসরণ করা একটি শিল্প। একটু চা এগিয়ে দেওয়া, প্রশংসা করা, প্রয়োজন হলে তাঁর সঙ্গে ‘মৌলিক’ চিন্তাভাবনার আদান-প্রদান করা—এসবই আপনাকে প্রিয়পাত্র বানাবে। বসের খুশি থাকা মানেই অফিসে আপনার অবস্থান সুরক্ষিত।
তৃতীয় পাঠ: সকালে চায়ের সঙ্গে আলোচনা করুন
অফিসে ঢুকেই কাজ শুরু করবেন না। প্রথমে ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ চা নিয়ে রাজনীতির হালচাল আলোচনা করুন। এতে সহকর্মীরা বুঝবে আপনি শুধু ফাইলের মাঝে ডুবে থাকা ব্যক্তি নন, দেশ ও সমাজ নিয়েও ভাবেন।
চতুর্থ পাঠ: স্বাস্থ্য সবার আগে
কাজের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দিলে স্বাস্থ্যের ওপর চাপ পড়ে। তাই ফাইল নাড়াচাড়া করার মাঝেই মাঝে চেয়ার ছেড়ে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করুন, জানালার দিকে তাকিয়ে ভাবুক চেহারায় দাঁড়িয়ে থাকুন। এতে ‘সচেতন ও সক্রিয় কর্মী’ বলে পরিচিতি পাবেন।
পঞ্চম পাঠ: কৌশলী আসন বেছে নিন
অফিসের সামনের সারিতে বসলে কাজের চাপ বেড়ে যেতে পারে। তাই পিছনের দিকে বা কোনার একটি চেয়ার বেছে নিন, যেখানে বসে আরামসে চা খেতে খেতে ফোন স্ক্রল করা যায়, কখনো দরকার হলে ফাইলের পাতা ওল্টানোও যায়।
ষষ্ঠ পাঠ: ব্যস্ততার বাহ্যিক প্রকাশ করুন
টেবিলে ফাইলের স্তুপ রেখে দিন, মাঝে মাঝে কপালে ভাঁজ ফেলে ফাইল ওল্টানোর শব্দ করুন। এতে অন্যরা বুঝবে আপনি অফিসের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি।
সপ্তম পাঠ: কাজের মাঝে বিশ্রাম জরুরি
লাঞ্চ ব্রেকের আগে কিছুক্ষণ অফিসের বাগানে সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দিন। খাবারের পর সরাসরি ডেস্কে না ফিরে অন্যদের সঙ্গে গল্প করুন, মাঝে মাঝে হাসুন। হাসি দীর্ঘায়ু বাড়ায়, অফিসের পরিবেশও প্রাণবন্ত করে তোলে।
অষ্টম পাঠ: উপরি আয়ের নীতি
সরকারি চাকরির যেমন নির্ধারিত বেতন থাকে, তেমনই ‘অতিরিক্ত সম্মানী’ নেওয়াও বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বীকৃত। ঘুষ নেওয়ার ক্ষেত্রে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, বরং একটি সুসংহত ‘দর তালিকা’ বানিয়ে রাখতে পারেন, যাতে গ্রাহকদেরও সুবিধা হয়।
নবম পাঠ: ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন
গ্রাহককে অযথা সোজা পথে সাহায্য করলে তিনি হয়তো খুশি হবেন, কিন্তু অফিসের মর্যাদা নষ্ট হতে পারে। মাঝে মাঝে কাজের চাপে অসহায় মুখভঙ্গি করুন, বেল বাজিয়ে পিয়ন ডাকুন, এতে আপনার গুরুত্ব বাড়বে।
দশম পাঠ: গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিন কাজের চাপ কত বেশি
যদি কেউ অনুরোধ করে, তবে এমন ভাব করুন যেন তাঁর কাজ করা আপনার জন্য প্রায় অসম্ভব। প্রয়োজনে দুঃখিত মুখে ‘দেখছি’ বলে দিন। এতে আপনার ব্যস্ততা ও গুরুত্ব দুই-ই বজায় থাকবে।
পরিশিষ্ট
এই নিয়মগুলো মেনে চললে একদিন দেখবেন, অফিসে আপনার অবস্থান পাকা হয়ে গেছে। যদিও এর ফলে ঘরে স্ত্রী-সন্তানেরা খুব বেশি খুশি নাও হতে পারেন, তবে তাতে বিচলিত হবেন না। কারণ সফল মানুষ সবসময়ই একটু ‘একলা’ থাকেন।