জলপাইগুড়ি, ১২ মে: ইতিহাসের পাতায় এক গৌরবময় অধ্যায় জুড়ে রইল সোমবারের জলপাইগুড়ি টাউন রেলস্টেশন। এই স্টেশনেই চারবার এসেছিলেন বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। সেই মহামানবের পদধূলিকে চিরস্মরণীয় করতে এদিন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ এক স্মারক ফলক উন্মোচন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল ভাবগম্ভীর পরিবেশ, বরণীয় অতিথির উপস্থিতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ।

উপস্থিত ছিলেন জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান স্বামী শিব প্রেমানন্দজী মহারাজ, জলপাইগুড়ির সাংসদ ডঃ জয়ন্ত কুমার রায় সহ বহু ভক্ত ও বিশিষ্টজন। স্টেশনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাংসদ বলেন, “স্বামীজির চারবার আগমন শুধুমাত্র এক ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, এটি উত্তরবঙ্গের গর্ব। তাঁর দর্শনই আমাদের শক্তির উৎস। আমরা বিশ্বাস করি, ভারত আবার জগতে শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত হবে, আর পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (POK) একদিন ফের ভারতের হাতেই ফিরবে।”

“এই আত্মবোধের আন্দোলন চলবে যতদিন না ভারত জগতগুরু হচ্ছে। POK ফিরবে, এটাই আমাদের বিশ্বাস” — ডঃ জয়ন্ত কুমার রায়, সাংসদ, জলপাইগুড়ি
স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ এই উপলক্ষে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলেও উপস্থিত হন, যেখানে তাঁর গুরুদেব, স্বামী যতিশ্বরানন্দজী মহারাজ পড়াশোনা করেছিলেন। এক আবেগঘন পরিবেশে তিনি ছাত্রদের হাতে স্বামী বিবেকানন্দের রচনাবলী তুলে দেন এবং স্কুলের উন্নয়নের জন্য ১ লক্ষ টাকার অনুদানের ঘোষণা করেন।

“এই স্কুলেই আমার গুরুদেব শিক্ষার সূচনা করেছিলেন। আজকের ছাত্ররাই আগামী ভারতের ভিত্তি। সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চললে ভারত আবার জগতে নেতৃত্ব দেবে” — স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ
তিনি বলেন, “বেদান্ত শিখিয়েছে, আমরা সবাই ভগবানের সন্তান। সব ধর্মের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সম্মানবোধ থাকলে সারা জগতের মঙ্গল সম্ভব। যুব সমাজকে সেই পথেই এগোতে হবে। আমাদের ধর্মকে জানতে হবে, গর্ব করতে হবে, প্রচার করতে হবে।”
অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব ছিল জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনের ইতিহাসও। একসময় দার্জিলিং মেইল কলকাতা থেকে এসে এই স্টেশনে ৪০ মিনিট বিরতি নিত চা-পানের জন্য। সেই বিরতির সময়ই ১৮৯৭, ১৮৯৮ ও ১৯০১ সালে চারবার এখানে পা রেখেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। দার্জিলিং সফরের পথে এই স্টেশন তাঁর যাত্রার এক নীরব সাক্ষী। সেই স্মৃতির ১২৫ বছর পূর্তিকে ঘিরেই আয়োজিত হয় এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান।
এটি শুধু এক স্মৃতি চিহ্ন নয়, বরং এক আত্মপরিচয়ের উৎস—যেখানে অতীতের মহত্ব, বর্তমানের প্রেরণা এবং ভবিষ্যতের সংকল্প একসাথে মিশে যায়।
এটাই আজকের বার্তা—ঐতিহ্যকে সম্মান করে এগিয়ে চলাই হল প্রকৃত দেশপ্রেম।