অরুণ কুমার : দিল্লি, পাঞ্জাব দখলের পর এবার বঙ্গে নিঃশ্বাস ফেলতে চলেছে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। দিল্লির পর পাঞ্জাবে ক্ষমতায় এসেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। এবার প্রশ্ন উঠছে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কি বাংলায় ক্রমেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে আপ? আর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের মাটিতে ঘর গোছানো শুরু করে দিয়েছে আপ। ঠিক যেভাবে একদিন এই উত্তরবঙ্গেই ক্রমে শক্তি সঞ্চয় করেছিল বিজেপি। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই মালদায় সদস্য সংগ্রহ শুরু করেছে আপ। উত্তরের বিভিন্ন জেলাতেই প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। আর শুক্রবার জলপাইগুড়িতে সাংগঠনিক বৈঠক সারলেন বাংলার আপ নেতৃত্ব। লিফলেটও বিলি করা হয়েছে। সেই লিফলেটের উপরে লেখা রয়েছে, “রাজনীতি বদলান, দেশ এমনিতেই বদলে যাবে।”

আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখে এবার উত্তরবঙ্গেও সংগঠন বাড়াবার কাজ শুরু করে দিয়েছে আম আদমী পার্টি। সেই লক্ষে এবার উত্তর বঙ্গের জলপাইগুড়িতে সাংগঠনিক মিটিং করে গেলেন আপের এই রাজ্যের ইনচার্জ সঞ্জয় বসু।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে,
বগটুই, ঝালদার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় রাজনৈতিক হিংসা লেগেই আছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসার ঘটনা এখনও দগদগে ঘা হয়ে রয়েছে বাংলার বুকে। এদিকে বিজেপি অনেক আশা দেখিয়েও বড় কোনও দাগ কাটতে পারেনি বাংলায়। নীচুতলার বিজেপি কর্মীরা মনমরা হয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলের অন্দরেও নানা ক্ষোভ। তবে কি সেই শূন্যস্থানটাই কাজে লাগাতে চাইছেন আপ নেতৃত্ব?

এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ সফরে এসে আম আদমি পার্টির রাজ্য ইন চার্জ সঞ্জয় বসু সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, ‘অনেকেই বলছেন এলে কী পাব? বিজেপি এটা দেয়, তৃণমূল ওটা দেয়। আমরা বলছি পার্টি থেকে কিছু পাবে না। সরকার থেকে পাবে।’ এদিকে এখানেই প্রশ্ন কারা সহায়তা করছে আপকে? হাওয়া দিচ্ছে কারা?
এই প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছেন তাঁদের বক্তব্য। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি টাউন ব্লক সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিক্ষুব্ধ বিজেপি ওদের পেছনে রয়েছে।” বিজেপির পালটা দাবি, “বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীরাই আপকে শক্তি যোগাচ্ছে।” জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন একটি ভবনে জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন ব্লকের বাছাই করা কিছু সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে আগামীর কর্মসূচি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন সঞ্জয় বাবু। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা প্রার্থী দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে সঞ্জয় বসু জানিয়েছেন, “অরবিন্দ কেজরিওয়ালের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে হাতিয়ার করে তারা সংগঠন বিস্তারে নেমেছেন। মিসড কলের মাধ্যমে তারা সদস্য সংগ্রহ করছেন।” এই দাবী আম আদমী পার্টি নেতার। এরজন্য প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা করে ফোন নং রয়েছে। সেই নম্বরে মিস কল দিলে দিল্লি থেকে তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে সদস্য সংগ্রহের কাজ করা হচ্ছে। রাজ্যে প্রতিদিন গড়ে হাজার দেড়েক সদস্য সংগ্রহ হচ্ছে। আপ কোনও দল ভাঙিয়ে লোক আনবে না। তাদের দলে কোনও দুর্নীতিগ্রস্থ লোকেদের স্থান দেবে না। সদস্য সংগ্রহ বা সংগঠন সংক্রান্ত কাজে বাধা দিচ্ছে শাসক দল ও পুলিশ বলে আপ নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন।
এদিনের সভায় বিজেপির কতিপয় সদস্যকে মিটিং স্থলে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। এদিকে আম আদমী পার্টির জলপাইগুড়ি সভা নিয়ে বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপী গোস্বামীর বক্তব্য, “বিজেপির সংগঠন ভাঙতে এরা মমতা ব্যানার্জীর মদতে এই রাজ্যে এসেছেন। কিন্তু তাতে লাভ হবেনা। কারন এই রাজ্যের মাটি খুব শক্ত। বিজেপি সেই মাটি অনেক কষ্ট করে নরম করে পদ্মফুল ফুটিয়েছে। এখন আপ এসে ঝাড়ু মেরে সব নিয়ে যাবে তা হবে না। যদি আমাদের কোনও লোক ওখানে গিয়ে থাকে তবে তারা আমাদের কেউ নয়।”
জানা গিয়েছে বিভিন্ন দলের বসে যাওয়া নেতা ও কর্মীরা তলে তলে চলে আম আদমি পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উভয় দলের কয়েকজন নেতা এই বিষয়ে কথা বলেছেন আম আদমি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে । যদি এমনটা সত্যি বাস্তবে পর্যবসিত হয় তাহলে উভয় দলকেই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
Photo Arabinda Kejriwal official FB page.