ডিজিটাল ডেস্ক : পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য টাকার প্রয়োজন তা সবাই জানে। আর আপনি যদি কাজ না করেন, তাহলে সমাজের কারও কাছেই মূল্য পাবেন না। কিন্তু জাপানের টোকিওর বাসিন্দা ৩৮ বছরের শোজি মরিমোটো হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি কিছু না করেও প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। কিভাবে। শোনাবো সেই আজব পেশার বিষয়ে।
অনেকে কোথাও একা একা যেতে চান না, একজন সঙ্গী হলে ভালো হয়। কিন্তু কাছের পরিচিত কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত। এমন লোকেরা ক্ষণিকের সঙ্গী হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শোজি মরিমোটোকে ভাড়া করেন। তাঁর কাজ কেবল সঙ্গ দেওয়া এবং চুপ থাকা। কেবল ক্লায়েন্ট কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলেই জবাব দেন শোজি মরিমোটো, অন্যথায় চুপ থাকেন। বিনিময়ে প্রতি সেশনের জন্য ১০ হাজার ইয়ন (প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা) নেন এই ব্যক্তি। সঙ্গে ভ্রমণসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই।
একবার এক ব্যক্তি টোকিও থেকে ওসাকা যাবেন। নাটক-সিনেমায় যেমন দেখা যায়, দূরে কোথাও সফরে গেলে স্টেশনে কেউ না কেউ আসে তাঁকে বিদায় দেওয়ার জন্য। ‘ওই ব্যক্তি সেই অনুভূতিটা পেতে চাইছিলেন। সে জন্য তিনি শোজিকে ভাড়া করেন। শোজি তাঁকে রেলস্টেশনে গিয়ে উষ্ণভাবে বিদায় জানায়।
হ্যাঁ, অনেকের একাকীত্বের সঙ্গী হন শোজি। কী তাঁর কাজ? যাঁদের কথা বলার লোকের অভাব, তাঁদের কথা শোনা। খাওয়াদাওয়ার সময়ে একটু পাশে বসে থাকা। তবে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুখ খোলেন না তিনি। শোজির দায়িত্ব এতটুকুই।
শোজি কিন্তু অত্যন্ত পেশাদার। কাজের সময়টুকু ছাড়া কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। কোনও গ্রাহকের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক যাতে গড়ে না ওঠে, সে বিষয়েও অত্যন্ত সতর্ক।
দৈনিক সর্বোচ্চ তিনটি সেশন করেন শোজি মরিমোটো। এতে তাঁর আয় হয় ২৫ হাজার টাকা! তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি যখনই কোনো অফার পাই, সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে যাই এবং কিছুই করি না, কেবল ক্লায়েন্টের প্রশ্নের জবাব দিই, রেস্টেুরেন্টে খাই এবং পান করি। যতক্ষণ ক্লায়েন্ট কিছু না বলে আমি কথা শুরু করি না। এখন পর্যন্ত, শোজি ৩,০০০ এরও বেশি মানুষকে সেবা দিয়েছে।
পড়াশোনা শেষ করার পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি পাননি শোজি। বেকারত্ব জীবনকে কঠিন করে তুলছিল। সেই সময়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, নিজেই কিছু একটা করবেন। আর বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে ২০১৬ সালে এই পেশা শুরু করেন শোজি। তিনি তার পরিষেবা ‘ডু নাথিং রেন্ট-এ-ম্যান’-এর বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য টুইটারে একটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, যার এখন লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার রয়েছে৷
তবে কাজের সময়ে মুখ বন্ধ রাখলেও, তাঁর এই ভিন্ন ধারার পেশা সম্পর্ক মুখ খুলেছেন শোজি। তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার কাজ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। নিজের উপস্থিতির বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করি। আমার সঙ্গ পেয়ে অল্প সময়ের জন্য হলেও কেউ যদি একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন, সেটাই কাম্য।’’