লেখক পঙ্কজ সেন
শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকগামী ৩১ নং জাতীয় সড়কের ধারেই সেবক পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত বিখ্যাত “সেবকেশ্বরী কালী মন্দির”। সেবকের মূল রাস্তা থেকে পাহাড়ের উচুতে ১০৭টি সিঁড়ি বেয়ে এই জাগ্রত কালী মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। সিঁড়ি ভেঙে ক্লান্ত ও অবসন্ন অবস্থায় আপনি যখন মায়ের মন্দিরে পৌঁছাবেন তখন মায়ের শ্রীমুখ দর্শন করে আপনার শরীরের সমস্ত ক্লান্তিভাব দূর হয়ে যাবে এবং সারা শরীর ও মন পরম ভক্তিতে ভরে উঠবে।বর্তমানে এই মন্দিরে দিনদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

পুণ্যার্থীর এই ভিড়ের চাপে মাঝে মধ্যেই মিশে যান আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের প্রাক্তন এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী।সিকিমের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপবন কুমার চামলিং তার মুখ্যমন্ত্রীত্ব কালে সেবকের এই কালীমন্দিরে বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। আবার সিকিমের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রেম সিংহ তামাং নিজেও স্বয়ং এই মন্দিরে এসে মায়ের দর্শন করে গেছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই মন্দিরে আগত পূণ্যার্থীদের গভীর বিশ্বাস – এই কালীমন্দিরে মানত করলে তা কখনোই বিফলে যায়না।

ভক্তরা নিজেদের মনস্কামনা নিয়ে আসেন এই মন্দিরে। মানত পূরণ হলেই গোটা ফল অথবা সবজি বলি দেওয়া হয়।

সেবকেশ্বরী কালিমন্দিরের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, ১৯৫২ সালে এই জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ের গায়ে পঞ্চমুন্ডি আসন, ত্রিশূল এবং বেদি দেখতে পান এক সাধক। তারপর থেকেই এই স্থানে কালীপুজো শুরু হয়ে যায়।তার আগে কখনও পুজো হয়েছে কিনা,তা অবশ্য স্পষ্ট নয় কর্তৃপক্ষের কাছে। আজও সেই আসন ও ত্রিশূল সযত্নে রক্ষিত আছে। তবে বাস্তব বা প্রকৃত ইতিহাস অজানা রয়েছে। আরেকটি মত প্রচলিত রয়েছে, এই স্থানে থাকা জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের এক আধিকারিক সেবক পাহাড়ের গায়ে ধ্যান করতেন।তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল শিলিগুড়ির কিছু বিশিষ্ট মানুষের। পরবর্তীতে তাদের মধ্য থেকেই কয়েকজন উদ্যোগী হয়ে ১৯৭৮ সালে গড়ে তোলেন “সেবকেশ্বরী কালী মন্দির”।
মায়ের ক্ষমতা সম্পর্কে স্থানীয় এলাকাবাসীরা খুবই সচেতন। তাই তো বারবার সেবকে ধস নামলেও, মন্দিরের কোনদিনই কোনও ক্ষতি হয়নি। মৃন্ময়ী মূর্তির পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে তান্ত্রিক মতে। চালু রয়েছে বলি প্রথা। এই মন্দিরে নেই কোনো বৈভবের ছোয়া।নিতান্ত সাদামাটা এই মন্দিরের সঙ্গে মিশে রয়েছে ভক্তদের শ্রদ্ধা ও আবেগ। মন্দিরে তিনজন পুরোহিত রয়েছে,যথা – নন্দকিশোর গোস্বামী (সব থেকে পুরনো), স্বপন ভাদুড়ী এবং লক্ষণ ভাদুড়ী। তাদের মন্ত্রোচ্চারণের ফলে চারদিক জুড়ে এক মায়াবী পরিবেশ গমগম করে।

এই কালী মন্দির থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের হাঁটা পথেই অবস্থিত তিস্তা নদীর উপর ব্রিটিশদের করা বিখ্যাত স্থাপত্যকীর্তি “করনেশন সেতু বা রাজ্যাভিষেক সেতু বা বাঘ পুল “
ছবি লেখক ও গুগলের সৌজন্যে